রোজ বদলাচ্ছে আকাশের মেজাজ: দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার আপডেট (Weather Update of Bengal) সরাসরি বাজারে নয়, FPO-র মাধ্যমে বেশি দাম পেতে কী করবেন? পশ্চিমবঙ্গের ছোট শিল্প: হ্যান্ডলুম থেকে টেরাকোটা
Updated on: 5 May, 2022 10:08 AM IST
কাঠাঁলের মুচি ঝরে পরা রোগ

গ্রীষ্মকালীন ফলের তালিকায় আম জামের পরের স্থানেই আসে কাঁঠালের নাম। তাই আমের মতোই কাঁঠাল কেও বাঙালিদের জাতীয় ফল বলা চলে। কাঁঠাল এর একটি বৈশিষ্ট হলো এটি কচি অবস্থায় ফসল আর পাকলে ফল। অর্থাৎ দুই ভাবেই কাঁঠাল খাওয়া যায়।

রোগের বিস্তার

গাছের পরিত্যক্ত অংশে জীবাণু বেঁচে থাকে এবং বাতাস, পানি ও পোকামাকড় মাধ্যমে রোগ ছড়ায়। বৃষ্টিপাতের সময়, ঝড় তুফানের পরে রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। ফুল ও ফল আসার সময় গরম, আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করলে রোগের আক্রমণ বেশী হয়।ছায়াযুক্ত স্থানে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদের বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। এই পুষ্টি উপাদান গুলির মধ্যে যে কোনো একটির অভাব কিংবা পরিমান অতিরিক্ত হলে কাঁঠালগাছ পুষ্টিহীনতা জনিত সমস্যায় ভোগে। আর এই কারণে কাঁঠাল গাছের পুষ্টি নিশ্চত করতে বর্ষার আগে একবার, বর্ষার পরে একবার এবং মুকুল আসার সময় আরেকবার সার দিতে হয়। সার দেওয়ার সময় খেয়াল করবেন, দুপুরে গাছের ছায়া যতটুকু স্থান দখল করে ততটুকু স্থান কুপিয়ে সার ছিটিয়ে সেচ দিতে হয়। এছাড়া নিয়মিত সেচ দেওয়া তো আছেই।

রোগের লক্ষণ

১. এই রোগের দ্বারা গাছের ফুল ও কচি ফল আক্রান্ত হয়।
২. আক্রান্ত ফুলের বা কচি ফলের বোঁটার গোড়ায় পানি ভেজা দাগ পড়ে।
৩. আক্রান্ত ফল সাদা মাইসেলিয়াম দ্বারা আবৃত থাকে।
৪. পরবর্তীতে আক্রান্ত স্থানের কোষ মরে কালো রং ধারণ করে।
৫. পরে সম্পূর্ণ ফলটি আক্রান্ত হয়ে কালো রং ধারণ করে।
৬. পরিশেষে আক্রান্ত ফল পঁচে ঝরে পড়ে।

রোগের প্রতিকার

  • বর্ষার আগে ও পরে প্রতিবারে ষোল বছরের বেশী পুরোনো কাঁঠাল গাছের জন্য ৯০ থেকে ১০০ কেজি গোবরসার, দেড় থেকে দুই কেজি ইউরিয়া, এক থেকে দেড় কেজি করে টিএসপি ও এমপি সার দিতে হবে। মুকুল আসার সময় যে কোনো বয়সের গাছের জন্যই ২০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সার দিতে হবে। এতে করে গাছের মুকুল ঝরা প্রতিরোধ হয় অনেকাংশেই।

  • গাছের নিচে ঝড়ে পরা পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে।

  • কাঁঠাল বাগানে কোন জৈব সার বা কম্পোস্ট তৈরী না করাই ভাল।

  • বাগান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

  • ফল বেশী ঘন হলে পাতলা করে দিতে হবে।

  • মুচি ধরার আগে ও পরে কপার অক্সিক্লোরাইড (যেমন-কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম অথবা টেবুকোনাজল (যেমন-ফলিকুর ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হারেমিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

  • প্রতিবার যখনই সার প্রয়োগ করবেন তার পর পরই সেচ দেবেন। বিশেষ করে শুস্ক মৌসুমে তো প্রায় প্রতিদিনই নিয়মিত সেচ দিতে হবে। এতে করে গাছের মুকুলঝরা কমবে, কাঁঠালের বোঁটা শক্ত হবে, ফল রসালো হবে, এবং রোগবালাই এর প্রবণতাও অনেকাংশে হ্রাস পাবে। পাশাপাশি ফলন ও তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধি পাবে।

কাঠাঁল গাছের মুকুলকে পোকার হাত থেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

কাঠাঁল গাছের প্রধান মুকুল ঝরার সমস্যা বৃদ্ধি পায় ছত্রাকের কারণে এবং এটিই মূল কারণ। এক্ষেত্রে আক্রান্ত মুকুল প্রথম দিকে ধূসর দেখায়, পরে মুকুলের গায়ে সরু ও লম্বা সাদা ছত্রাক দেখা যায। আক্রান্ত মুকুল শেষে মাটিতে ঝরে পড়ে। গাছে মুকুল আসার পর মুকুল পচাঁ রোগ দেখার সাথে সাথে ডায়থেন এম-৪৫ ওষুধটির চার গ্রাম এক লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

মুকুল ঝরার অন্য়তম কারণ হলো মুকুলের মাজরা পোকা । এরা গাছের কচি কান্ড, ফুলের কুঁড়ি ও বেড়ে ওঠা ফলের গায়ে গর্ত করে ভেতরে ঢুকে,সেখান থেকে খাদ্যরস গ্রহণ করে। এতে আক্রান্ত কান্ড দুর্বল হয়ে পড়ে ও কুঁড়ি শুকিয়ে মরে যায়। এই পোকা দমনের জন্য ১০ লিটার জলে ৩০ মিলি ডায়াজিনন-৬০ ইসি মিশিয়ে ২১ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

মুকুল ছাড়াও গাছের বাকলেও এই মাজরা পোকা দেখা যায়। এরা রাতে গাছের বাকল বা ছাল খায়। খাওয়া অংশ নরম আশেঁর মতো দেখায়।। আশেঁর ভেতর দিয়ে পোকাগুলো কাণ্ডে ছোট ছোট সুড়ঙ্গ তৈরি করে ভেতরে ঢুকে। এতে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলনও কম হয়। এক্ষেত্রে ৩৫ মিলি ডায়াজিনন-৬০ ইসি, ১০লিটার জলে মিশিয়ে ২১ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

তবে নিয়মিত সেচ, মুকুল আসার পর সার দেওয়া, রোগ ও পোকামাকড় দমনের ওষুধ প্রয়োগের পরও যদি মুকুল ঝরে পড়ে তাহলে গাছে ষ্টিমুলেট নামের হরমোন দিতে হবে। এতে স্ত্রী মুকুল বেশি টিকে থাকায় মুকুল ঝরে পড়ে না। কাঁঠালের মুকুলঝরা রোধের জন্য ষ্টিমুলেট হরমোনটি প্রতি লিটার জলে তিন মিলি মিশিয়ে মুকুলে দু থেকে তিনবার স্প্রে করলেই হবে।

English Summary: Jackfruit buds are falling? Ways to prevent disease
Published on: 05 May 2022, 10:08 IST