পাটকে সোনার আঁশ বলা হয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফসল পাট। পাট তন্তু জাতীয় উদ্ভিদ। পাটগাছের ছাল থেকে পাটের আঁশ সংগ্রহ করা হয়।পাট থেকে বিভিন্ন প্রকার পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হয়ে থাকে। যেমন- সুতা, থলি, চট, দড়ি, সুতলি।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী, নদীয়া, হাওড়া, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, সহ উত্তরের মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে পাট চাষ হয়। আজও ভারতের অধিকাংশ চাষী গতানুগতিক পদ্ধতিতেই পাট চাষ করেন।
জমি প্রস্তুত
সামান্য ক্ষারযুক্ত যে-কোনো মাটিতেই পাট চাষ করা যায়। তবে ভালো ফলন ও উন্নত জাতের আঁশ পাওয়ার জন্য পলিযুক্ত উর্বর মাটি সবচেয়ে ভালো। তবে কাদা দোআঁশ মাটি ও বেলে দোআঁশ মাটিতেও পাট চাষ করা যায়। সাধারণত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে মিঠা পাট এবং উঁচু ও নীচু দু’রকম জমিতেই তিতা পাট চাষ করা যায়।
বীজ বপন
পাটের বীজ বপন করার আগে জমি ভাল করে তৈরি করে নিতে হবে ৷ প্রতি কেজি বীজ তিন গ্রাম অ্যাগ্রোসান জি—এন পাঁচ শতাংশ ওষুধ দিয়ে শোধন করে নিতে হয়। বীজ হাতে ছিটিয়ে বা সারি দিয়ে বোনা যায়। সারি দিয়ে বুনলে দু’টি সারির দূরত্ব এক ফুটের মতো হতে হবে। তেতো পাটের ক্ষেত্রে একর প্রতি আড়াই থেকে তিন কেজি এবং মিঠা পাটের ক্ষেত্রে দেড় থেকে দু’কেজি বীজ লাগবে।
সার ও পরিচর্যা
পাটের ফলন ভালো পেতে সঠিক সময়ে জমিতে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে ।মূল সার হিসাবে ইউরিয়া সার না প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ ফসফেট ও অর্ধেক পটাশ সার এবং চাপান হিসাবে মোট নাইট্রোজেন সারের অর্ধেক এবং বাকি পটাশ সার ২ ভাগে বীজ বোনার ১৫ দিন ও ৩৫-৪০ দিন পর দিতে হবে। তবে মাটি পরিক্ষা করে সার প্রয়োগ করা ভাল। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য যে জমি তৈরীর সময় বিঘা প্রতি ৮-১০ ক্যুইন্টাল জৈব সার এবং ১ কেজি করে অ্যাজোটোব্যাক্টর ও পিএসবি প্রয়োগ করা দরকার জমির সার্বিক উন্নতির জন্য।
আরও পড়ুনঃ Banana varieties: জেনে নিন সাগর কলা চাষ পদ্ধতির সহজ উপায়
পাটের আগাছা নিয়ন্ত্রণ
পাট গাছের আসে পাশে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আগাছা যেন না জন্মায় তার জন্য সময়মতো সঠিক পরিমাণে আগাছা নাশক জমিতে প্রয়োগ করতে হবে । সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে বিঘা প্রতি ৪ ব্যারেল জল বা ৬০ লি. জলে আগাছানাশক ঔষধ ভালো করে মিশিয়ে ভেজা আর্দ্র জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আগাছানাশক, যা পাটে ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। যেমন – ক্যুইজালোফপ-পি-ইথাইল (তরগাসুপার, অ্যাসুওর) বিঘা প্রতি ১৩৫ মিলি. বীজ বপণ করার ১০ থেকে ১৫ দিন পর, ফ্লুয়াজিফপ-পি-বিউটাইল (ফুসিলেড, সুপার্ট, পিউজিলেট সুপার) ইত্যাদি ।
আরও পড়ুনঃ Banana varieties: জেনে নিন সাগর কলা চাষ পদ্ধতির সহজ উপায়
ফসল তোলা
পাট গাছে যখন ফুল থেকে ফল ধরে সাধারণত তখনই পাট কাটার উপযুক্ত সময়। পাট কেটে পাতা না ঝরা পর্যন্ত মাঠে বা কোনও জায়গায় গাদা করে রেখে দিতে হবে। তারপর আঁটি বেঁধে জলে পচাতে হয়। পচানোর ৮-১০দিন পর পাটকাঠি বের করে নিতে হবে। তারপর পাটের আঁশ পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিতে হবে। ভালভাবে রোদে শুকিয়ে গাঁট বেঁধে বিক্রির জন্য বাজারে পাঠানো হয়।