বঙ্গে হয়েছে বর্ষার আগমন, এর এই খরিফ মৌসুমের প্রধান ফসলই হলো ধান | কৃষি ক্ষেত্রে ধান চাষের পদ্ধতি অনেকটাই অঞ্চল ভিত্তিক। বিভিন্ন জায়গার কৃষকরা সাধারণত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন।
কিন্তু সরকারী কৃষি বিভাগ সহ নানা সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান যেমন ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউড প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলেছে প্রতিটি চাষের (Paddy cultivation) ক্ষেত্রে সঠিক এবং উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবন করার। এই নিবন্ধে সেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আলোচনা করা হলো,
মাটি (Soil):
ধানের ফসলের জন্য বালুকাময় মাটি একেবারেই উপযুক্ত নয় | ভিন্ন উৎপাদনশীলতার হলেও প্রায় সব ধরনের মাটিতে ধান চাষ করা হয়। তবে, ভাল জলের ধারণ ক্ষমতা, প্রচুর পরিমাণে কাদা এবং জৈব পদার্থ যুক্ত মাটি ধান চাষের জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। জমির মাটির আম্লিকতা ৫ এর চেয়ে কম হয় বা ৮-এর থেকে বেশি হয়, তবে সরকারী উপদেশ অনুযায়ী মাটির সংশোধন করা উচিৎ। যদি মাটির আম্লিকতা উচ্চ হয় তবে সুপারিশকৃত পরিমাণ অনুযায়ী জিপ্সামের প্রয়োগ করা উচিৎ।
জলবায়ু (Climate):
প্রচুর জল সরবরাহ, উচ্চ আর্দ্রতা, দীর্ঘায়িত সূর্যকিরণ এবং ২০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ধানের ফসলের জন্য উপযুক্ত।
চাষের সময়:
আউশ ধান চাষের উপযুক্ত সময় মে-জুনের প্রাক খরিফ মৌসুম এবং আমন ধানের চাষের উপযুক্ত সময় জুন-জুলাইয়ের বর্ষা মৌসুমে।
বীজের প্রাথমিক সংশোধন:
বীজ বপন করার আগে লবণাক্ত জলে বীজের সংশোধন অপরিহার্য | ছোট এবং মাঝারি আকারের চালের বীজের জন্য ১০ লিটার জলের মধ্যে ১.৬৫ কেজি লবণ এবং বড় আকারের বীজের জন্য ১০ লিটার জলে ২.৫ কেজি লবণ দ্রবীভূত করা উচিত। জলে ভাসমান বীজ সরিয়ে ফেলুন এবং নিচে জমে থাকা অবশিষ্ট বীজগুলি সংগ্রহ করে, পরিস্কার জলে ৩-৪ বার ধুয়ে বপনের জন্য ব্যবহার করা উচিৎ। এভাবে ৩০-৪০ কেজি বীজ ১০ লিটার জলে সংশোধন করা উচিৎ।
বীজের রাসায়নিক সংশোধন পদ্ধতি:
বাছাই করা বীজ সাথে ২.৫ গ্রাম থিরাম (Thiram) 75% WS বা ২.৫ গ্রাম কার্বেন্ডেজিম (Carbendazim) 50% WP বা ২.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব (Mancozeb) 75% WP প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশ্রিত করা উচিত।
বীজের জৈবিক সংশোধন পদ্ধতি:
জৈব আগাছানাশকের ক্ষেত্রে বাছাই করা বীজ সাথে, ত্রিকোডার্মা ভাইরাড ৪ গ্রাম / লিটার জলে মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত।
বীজের পরিমান:
বীজতলার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে, ক্ষুদ্র বীজের জন্য ১৪-১৬ কেজি / একর, মাঝারি বীজের জন্য ১৮-২০ কেজি / একর এবং বড় বীজের জন্য ২০-২৪ কেজি / একর ব্যবহার করা উচিৎ। যদি ধান চাষের জন্য সংকর বা হাইব্রিড বীজতলা প্রস্তুত করেন তবে ৬-৮ কেজি বীজ / একর ব্যবহার করা উচিৎ।
সার প্ৰয়োগ (Fertilizer):
বীজতলা তৈরি করার সময় প্রতি 0.১ একরে বা ৫ কাটায় ১ টন গোবর সার বা কম্পোস্ট সার, ২ কেজি নাইট্রোজেন, ২ কেজি ফসফেট এবং ২ কেজি পটাশ ব্যবহার করা উচিৎ।
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
মাজরা পোকা:
স্টেম বোরার বা মাজরা পোকা এবং অন্যান্য কীট নিয়ন্ত্রণের জন্য বপনের ১১-১২ দিন আগে বীজতলায় দয়া করে ৫ কেজি কার্বোফুরান ৩ জি (Carbofuran 3 G) বা ১.৫ কেজি কার্টাপ ৪ জি (Cartap 4 G) প্রতি ০.১ একর পিছু প্রয়োগ করা উচিৎ।
আগাছা নিয়ন্ত্রন:
নার্সারিতে বীজ বপনের ৩ দিন পর স্প্রে করা উচিৎ ১১০-১২০ মিলি বাটাকলার 50 ইসি বা ৫০ মিলি সোফিট (প্রিটিলাক্লোর - pretilachlor) ৩৭.৫ ইসি বা ৬ গ্রাম সাথী (পাইরাজোসফ্লুরন -Pyrazosulfuron)।
আরও পড়ুন - Melon Farming: জেনে নিন সহজ উপায়ে মেলন বা ফুটি চাষ পদ্ধতি
চারা প্রতিস্থাপন :
বীজতলায় ধানের বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর চারাগাছগুলি ৩ থেকে ৪ পাতা পর্যায় পৌঁছালে প্রধান কৃষিজমির মধ্যে প্রতিস্থাপনের জন্য রোপণ করা উচিৎ।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - কালোজিরা চাষ থেকেও হতে পারে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন, জানুন চাষের পদ্ধতি