কৃষিজাগরন ডেস্কঃ শণ একটি অর্থকারি ফসল যা শিম্বগোত্রৌয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এবং প্রাকৃতিক তন্তুর উৎস৷ এই গাছের ইংরেজী নাম ‘সানহেম্প’ (sunnhemp), ‘ইন্ডিয়ান হেম্প’ (Indian-hemp), ‘মাদ্রাজ হেম্প’ (madras-hemp) এবং ‘ব্রাউন হেম্প’(brown hemp)৷ শণের তন্তু তথা বাস্ট ফাইবার হলুদ, মোটা, শক্তিশালী এবং টেকসই যা দড়ি, সুতো, মাছ ধরার জাল, বিশেষ প্রকারের কাপড় ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ৷
উচ্চ সেলুলোজ, কম লিগনিন এবং নগণ্য ছাইজাতীয় সামগ্রীর কারণে এই ফসলটিকে নোট ছাপার কাগজ, ‘টিস্যু পেপার’ এবং সাধারণ কাগজ তৈরির জন্য দেশীয় কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়৷ এটি পাট এবং মেস্তার পরিবর্তে চিত্রপট এবং পর্দা তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ এই গাছের গড় উচ্চতা ২.৫ থেকে ৩ মিটার এবং ফুলের রঙ হলুদ৷ এর উৎপত্তি অনিশ্চিত হলেও অনেকে মনে করেন ভারত ও পাকিস্তান থেকেই এটি উৎপত্তি লাভ করেছে৷
আরও পড়ুনঃ চায়ের উৎপাদন ব্যাপক,তবে কেন প্রত্যাশিত লাভ পাওয়া যায়না,রইল ভারতীয় চা-এর ইতিহাস
শণ চাষে প্রয়োজনিয় জলবায়ু ও মাটি
এটি একটি ছোট দিনে ফুল দানকারী ফসল, তবে বড় দিন উদ্ভিদের বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল৷ গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে ফসলটি ভাল জন্মাতে পারে৷ এটি ২৩-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সীমার মধ্যে এবং ৪০ থেকে ৫০ সেমি বৃষ্টিপাতের তারতম্যের মধ্যে ভালভাবে বিকাশ লাভ করে৷ ভারতের উত্তরের রাজ্যগুলিতে বর্ষাকালে (খারিফ) এবং দক্ষিণাঞ্চলে, যেখানে শীতের প্রভাব কম, সেখানে শীতকালেও (রবি) ফসলটি উৎপাদন করা যায়৷
আরও পড়ুনঃ আনারস রপ্তানিতে রেকর্ড গড়ল মনিপুর
সুনিষ্কাশিত পলিমাটি, লাল কাঁকুরে, বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটির জমি শণ চাষের জন্য উপযোগী৷ মাটির ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট ফসলের শিকড়ে গুটি বা অর্বুদ (nodule) গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে৷ এটি ৫.০-৮.৪ মাত্রার পি. এইচ. (pH) সহ্য করতে পারে, তবে প্রশম পি. এইচ. (pH) (৬-৭) ভাল বৃদ্ধি এবং বীজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত৷
বীজবপনের পদ্ধতি
ফসল সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ সেমি × ৫ থেকে ১০ সেমি ব্যবধানে চাষ করা যায়, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ উৎপাদনের জন্য ৩০ × ১০ সেমি দুরত্ব বজায় রেখে ২ থেকে ৩ সেমি গভীরতায় বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়৷
ঝাড়াই
ট্র্যাক্টরের সাহায্যে মাড়িয়ে বা শক্ত মেঝের উপর শুঁটি গুলো পিটিয়ে বীজ বের করে তা পরিষ্কার করা হয়৷ এরপর এই বীজগুলিকে ৩ থেকে ৪ দিন ধরে সূর্যের আলোতে ভালকরে শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা ১০ শতাংশের নীচে রাখতে হবে যাতে বীজগুলিকে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায় এবং অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা বজায় থাকে৷
ফলন
বীজের ফলন নির্ভর করে সেই স্থানের মৃত্তিকা ও জলবায়ু উপর৷ এই ফসলের বীজের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৬ থেকে ২০ কুইন্টাল৷