পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান তৈল বীজ ফসল হলো সর্ষে। এর ইংরেজি নাম Mustard ও বৈজ্ঞানিক নাম Brassica spp. | সবরকমের ভোজ্য তেলের মধ্যে সর্ষের তেল খুবই জনপ্রিয় |আমাদের দেশের অনেক জমিতে সর্ষের চাষ হয়ে থাকে | সারাবছর এই তেলের চাহিদা ব্যাপক হওয়ায়, এই সর্ষে চাষে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য পেতে পারেন |
বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজে ৩৮-৪৪% তেল থাকে আর বাকিটা খোল ২৫% ও ৪০% আমিষ। এই খোল গৃহপালিত পশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার, এই খোল সার হিসাবে চাষের কাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ | আমাদের দেশে প্রতি হেক্টরে সরিষার ফলন হয় ৬০০- ৭২৫ কেজি। দেশের অঞ্চল ভেদে ফলন বেশি ও কম হতে পারে।
উপযুক্ত মাটি (Soil):
সর্ষে চাষের জন্য দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও পলি মাটি উপযুক্ত। সহজে জল নিষ্কাশন করা যায় এরকম মাটির জমি নির্বাচন করতে হবে।
বীজ বপণের সময় (Seed sowing) :
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বপণ করতে হবে। তবে নভেম্বরের ১৫ তারিখ পযর্ন্ত বপন করা যায়।
জমি তৈরী:
সর্ষে চাষের (Mustard farming) জমি এমন ঝুরঝুরে করে চাষ করতে হবে যাতে সহজেই বীজ থেকে চারা গজাতে পারে। জমি ৫-৬ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ঠিকঠাক করে নিতে হবে | সর্ষে জমির বড় বড় ঢেলা ভেঙ্গে সমতল করতে হবে। যাতে জমির কোথাও জল জমতে না পারে।জমির চারপাশে নালার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে পরে সেচ দিতে ও জল নিকাশে সুবিধা হয় |
রোপণ:
সাধারণত সর্ষে বীজ ছিটিয়ে বপণ করা হয়। এছাড়া সারিতেও বীজ বপণ করা হয় | বীজ ছিটিয়ে বুনলে শেষ চাষে বীজ বপণ করে মই দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।সারিতে বীজ বুনলে এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৩০ সে. মি. রাখতে হবে। ২-৪ সে.মি. গভীরতায় সর্ষের বীজ বপণ করতে হবে।সাধারণত, সর্ষের বীজ আকারে ছোট ছোট হয়ে থাকে। তাই বপণের সুবিধার জন্য বীজের সাথে ঝুরঝুরে মাটি অথবা ছাই মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সারি করে বুনলে জমিতে সার, সেচ ও নিড়ানি দিতে সুবিধা হবে। বপণের সময় জমিতে বীজের অংকুরোদগমের উপযোগী রস থাকতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে চারা গজাবে।
সেচ:
বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে (গাছে ফুল আসার আগে) প্রথম সেচ এবং ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে (ফুল ধরার সময়) দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে।বপণের সময় মাটিতে রস কম থাকলে চারা গজানোর ১০-১৫ দিনের মধ্যে একটি হালকা সেচ দিতে হবে।তবে, মাথায় রাখতে হবে সর্ষে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই সেচের জল জমিতে বেশি সময় জমতে দেওয়া যাবে না।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
সর্ষে চাষে ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে | এছাড়া, গোবর পচা সার খুবই উপযোগী | অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া এবং সব টিএসপি, এমপি ও জিপসাম সার জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর যখন চারা গাছে ফুল আসতে শুরু করবে তখন ছিটিয়ে দিতে হবে । গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য বিকাল বেলা সার ছিটাতে হবে।সাধারণত, জৈব সার ব্যাবহারে এই চাষের ফলন বেশ ভালোই হয় |
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
সর্ষে গাছে জাবপোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায় | এই পোকার আক্রমণে ফলন কমে যায় | ফুলের কুড়ি আসা শুরু করলে এ পোকা আক্রমণ করে। এ ক্ষেত্রে ডাইমেক্রন ১০০ সিসি বা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রভৃতি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া, অল্টারনারিয়া রোগের আক্রমণ হলে ডায়াথেন এম ৪৫ বা রোভরাল স্প্রে করতে হবে। ফুল ধরা শেষ হলে ১৫ দিন পর পর দুবার স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Urad Dal Farming: শিখে নিন বিউলির ডাল চাষের সম্পূর্ণ পদ্ধতি
ফসল:
সর্ষে গাছে যখন ফল হয় হলুদ রঙের তখন ফসল সংগ্রহ করতে হবে |মাটি নরম থাকলে গাছের গোড়া ধরে টেনে শিকড়সহ তোলা যায়। এছাড়া, মাটির উপরিভাগের গাছের গোড়া কেটে নিতে হবে। তারপর ভালোভাবে ৪-৫ দিন বীজ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Sorghum cultivation: জেনে নিন জোয়ার চাষের সহজ পদ্ধতি