আমাদেরর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় স্নেহজাতীয় খাদ্যের যোগান তৈল বীজ থেকে আসে। পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত তৈল বীজের চাষ হয় তাদের মধ্যে সরিষা, তিল , বাদাম, সুর্যমূখী অন্যতম। এদের মধ্যে তিল সারা বছর সব ধরনের মাটিতে অতি সহজে চাষ করা যায়। ভোজ্য তেলগুলির মধ্যে সরষের তেলের তুলনায় তিল তেলে অসম্পৃক্ত স্নেহ অম্লের ( unsaturated fatty acid) আধিক্য থাকায় এই তেল আমাদের পক্ষে উপকারী। সরষের তেলে সম্পৃক্ত স্নেহ অম্লের (saturated fatty acid) পরিমাণ বেশী থকায় এই তেল বেশী খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও হৃদরোগের প্রবনতা বাড়ে। সেই তুলনায় তিল তেলের ব্যবহার স্বাস্হ্য সম্মত ও নিরাপদ। এছাড়া তিলে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকায় তিল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রি যেমন তিলের নাড়ু, তিলের বড়া, আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটায়।
জমি থেকে আলু উঠে যাওয়ার পর তিল লাগানো যায়। খুব শক্ত মাটি ছাড়া যেকোন মাটিতেই তিল চাষ করা যায়।
জমি তৈরি : সাধারণত পলি দোঁয়াশ বা বেলে মাটিতে সাদা তিল চাষ হয়। ৩-৪ বার চাষ দিয়ে মাটি আগাছা মুক্ত ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর সুসম সার ও রাসায়নিক সার দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। আলু চাষের পর তিল বুনলে কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।
তিলের কিছু উন্নত জাত: টি সি ২৫, টি কে জি-২২, এ কে টি-৬৪।
বীজ বপন: লাইনে বুনলে শোধন করা ২ কেজি তিল বীজ প্রতি একরে প্রয়োজন।
পরিচর্যা : বোনার ১৫-২০ দিন পর গাছের ঘনত্ব কম করতে হবে।
সার: মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করা না থাকলে প্রতি একরে ৪৪ কেজি নিম কোটেড ইউরিয়া, ১০ কেজি ফসফেট, ৬৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট, ১০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। তৈল বীজের ফলনে গন্ধক বা সালফারের ভূমিকা বেশি তাই মিশ্র সার প্রয়োগ করা ভালো কারণ মিশ্র সারে (সিঙ্গল সুপার ফসফেট) প্রতি ১০০ কেজিতে ১২ কেজি গন্ধক থাকে।
রোগ পোকা দমন:
- তিল গাছে পোকার আক্রমণ কম হলেও ল্যাদা ও বিছা পোকা পাতা খেয়ে ফলনের ক্ষতি করতে পারে। আক্রমণের প্রথম দিকে জৈব কীটনাশক যেমন বায়োনিম, নিমারিন ২ মিলি/ল. জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনে রাসায়নুক ওষুধ যেমন এন্ডোসালফান ২ গ্রাম /ল. জলে গুলে সন্ধার সময় প্রতি একরে ২০০ ল. স্প্রে করতে হবে।
- পাটের জমিতে তিল বুনলে গোড়া পচা রোগের সম্ভবনা থাকে তাই বীজ শোধন জরুরী।
- পাতা কোকড়ানো রোগ (ভাইরাস ঘটিত) দেখা দিলে রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে এবং যে কোন একটি অন্তর্বাহী কীটনাশক স্প্রে করলে ভালো হয়।
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)