সুগন্ধি ফুলের মধ্যে অন্যতম সেরা ফুল গন্ধরাজ। এই ফুলের মিষ্টি গন্ধের জন্য এটি পুজোর নৈবেদ্য থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান বাড়ি সাজানোর কাজেও ব্যববহৃত হয়। গন্ধরাজ ফুলের থেকে বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্যও বানানো হয়। বাজারে এই ফুলের প্রচুর পরিমানে চাহিদা থাকায়, এই ফুল চাষ করে চাষিরা ভালো আয়ের সন্ধান পাচ্ছেন। অল্প পরিশ্রম এবং কম বিনিয়োগে এই চাষ করা যায় বলে, এই ফুল ফুটিয়ে কৃষকরা অন্যান্য ফুলের থেকে দ্বিগুন অর্থ আয় করছেন। বহু মানুষ এই ফুল বাড়ির তবেও ফুটিয়ে থাকেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, গন্ধরাজ ফুল কেমন করে চাষ করতে হয়।
জমি প্রস্তুত (Land Preparation)
যেই জমিতে গন্ধরাজ ফুলের চাষ হবে, প্রথমে সেই জমি কোদাল দিয়ে প্রাথমিক ভাবে কর্ষণ করে সমান করে নিতে হবে। এবার সারি হতে সারির দূরত্ব ১৫০ সেমি: এবং গাছ হতে গাছের দূরত্ব ১০০ সেমি: রেখে ৪৫x ৪৫x ৩০ সেমি: আকারের গর্ত খুঁড়ে নিতে হবে। প্রত্যেকটা গর্তে ১০ থেকে ১৫ কেজি গোবর সার এবং এক কেজি গোবর সার দিয়ে মাটির সঙ্গে উপযুক্ত ভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দেওয়া উচিত।
চারা রোপন (Planting)
জুলাই মাস নাগাদ গন্ধরাজ ফুলের চারা রোপন করা উচিত। পূর্ব প্রস্তুত গর্তে ৮ থেকে ১০ সেমি: গভীরতায় গন্ধরাজের চারা সোজাভাবে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
পরিচর্যা (Caring)
বর্ষাকালে সেচ দেওয়ার দরকার নেই। কোদাল দিয়ে কুপিয়ে প্রয়োজন পড়লে মাটি আলগা করা যেতে পারে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। শীত এবং গ্রীষ্মে অবশ্যই জল সেচ দিতে হবে।
আরও পড়ুন: Basil Farming: স্বল্প পুঁজিতে তুলসী চাষে অধিক উপার্জন
গাছ ছাটাই
জানুয়ারি মাস গাছ গন্ধরাজ গাছ ছাটাইয়ের আদর্শ মাস। গাছ ছাটাইয়ের কয়েকদিন আগে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। গাছের অপ্রয়োজনীয় ও পুরোনো শাখাগুলি ছেটে ফেলা উচিত। পুরোনো পাতাগুলিও ব্যাড দেওয়া উচিত। ছাটাই হয়ে গেলে এক সপ্তাহ বাদে গাছগুলির গোড়া থেকে মাটি সরিয়ে দিয়ে সার প্রয়োগ করে সেচ দেওয়া উচিত।
সার প্রয়োগ (Fertilizer)
গন্ধরাজ গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা উচিত। গাছ চাটাই হয়ে গেলে জানুয়ারি এবং জুলাই-এ পুনরায় সার প্রয়োগ করা উচিত। এমোনিয়াম সালফেট, সিঙ্গল সুপার ফসফেট, মিউরিয়েট অফ পটাশ গন্ধরাজ গাছের আদর্শ সার হিসাবে বিবেচিত হয়। মাদা তৈরী করে এই সারগুলি প্রয়োগ করা উচিত।
সেচ (Irrigation)
ভালো ফুল ফলাতে গেলে এবং বড় কুঁড়ি পেতে গেলে নিয়মিত জলসেচের প্রয়োজন রয়েছে। জানুয়ারিতে যে সার প্রয়োগ হচ্ছে তারপর প্রতি চারদিন বাদে বাদে সেচ দিতে হবে। এরফলে ফুলের বৃদ্ধি ভালো হবে এবং উৎপাদনও বাড়বে। সেচ ঠিকঠাক না পেলে কুঁড়ি শুকিয়ে যেতে পারে অথবা মরে যেতে পারে।
ফুল সংগ্রহ (Harvest)
বসন্তকাল যখন শুরু হবে সেই সময় গন্ধরাজ ফুল তোলার আদর্শ সময়। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বিভিন্ন জাতের গন্ধরাজ ফুটতে শুরু করে। বর্ষা আসার আগে অবধি ফুল ফুটতে থাকে। সন্ধ্যা নামার আগে সবসময় গন্ধরাজ ফুল তোলা উচিত।
বাজারে যেহেতু এই ফুলের চাহিদা দিনকেদিন বাড়ছে, তাই বর্তমানে বহু নবীন কৃষক এই ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: Gladiolus Flower Farming: জেনে নিন আকর্ষণীয় গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষ পদ্ধতি