পছন্দের ফসল ধান।আমন কিংবা বোরো সব সময়ই চাষীরা ধান বুনে থাকেন।মাটি ও যত্নের প্রকার ভেদে মোটামুটি বিঘায় ৮ মন থেকে ২৪ মন পর্যন্ত ধান পান চাষীরা। কিন্তূ যাদের ফলন কম হয় এবং সেই ধান যখন বাজারজাত করেন তখন স্থানীয় বাজারে অনেকটা দাম পড়ে যায়। ফলে চাষীর লাভ তো থাকেই না বরং খরচের টাকা টুকু তোলা নিয়ে টানাটানি চলে।এমত অবস্থায় যদি চাষীরা নিজের খরচ কমানোর দিকে ধ্যান দেন এবং ধানের বীজ যেটি প্রতি বছরই চাষীকে কিনতে হয় বেশ দাম দিয়ে সেটি যদি তাঁরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারেন তবে একদিকে যেমন খরচা কমবে অন্যদিকে এই উৎপাদিত বীজ কিছুটা হলেও বেশি দাম দিয়ে তিনি বিক্রি করতে পারবেন।প্রয়োজন মতো তিনি তার নিজের বীজকে "সরকারি সাহায্যে সংশিত করে নিতে পারবেন"।যাই হোক এই বীজ উৎপাদনের কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি এখানে তুলে ধরলাম:
১.প্রথমেই নিজের আর্থিক সঙ্গতি মত কিছু ভালো জাতের "সংশিত"( ব্রিডার/ফাউন্ডেশন) ধান বীজ বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
২.উপযুক্ত জমি নির্বাচন করার পর সঠিক পদ্ধতিতে বীজ শোধন, বীজ তোলা শোধন, সুষম সার প্রয়োগ, আগাছা ও রোগ পোকা দমন করতে হবে।
৩.মাঠে অন্য কোন গাছ তুলে ফেলতে হবে।অর্থাৎ সংশিত বীজের ক্ষেত্রে ০.২০%(শতাংশ) এর বেশি অবাঞ্চিত উদ্ভিদ মাঠে থাকলে সেই বীজের গুনগত মান বজায় থাকে না।
৪.সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বীজের প্রকার ভেদ অনুযায়ী স্বতন্ত্রীকরণ দূরুত্ব
isolation distance) বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ বীজ উৎপাদন এর খেতের চারিপাশে অন্তত ৩মিটার জমি ফাঁকা রাখতে হবে। এতে অনাহুত পরাগ মিলন রোখা যাবে।
৪.ফসল ফলার পরে ঝাড়াই, মাড়াই এমন ভাবে করতে হবে যাতে অন্য জাতের সাথে মিশে না যায়।এরপর বীজগুলি ভালো ভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
৫.পাকা ধান কাটার পর সাধারণত ১৮-২০%আদ্রতা থাকে ।সংরক্ষণ করার জন্য তাই ভালো ভাবে বীজ গুলি শুকানোর প্রয়োজন। শুকানোর নিয়ম হলো কম রোদে এক ঘণ্টা অন্তর বেশি রোদে আধ ঘন্টা অন্তর বীজ নাড়া চারা করতে হবে।বীজ শুকানোর পর দাঁতে দিয়ে চাপ দিলে যদি "কট"করে একটি শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে বীজ গুদামে রাখার জন্য হয়ে গেছে।এরপর বীজ গুলো ঠান্ডা করে রোগ পোকা মুক্ত পরিষ্কার বস্তায় ভরে বস্তার গায়ে ফসলের নাম, জাত লিখে সংরক্ষিত করতে হবে।
এখানে বীজ উৎপাদন পদ্ধতির পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ গুলি উল্লেখ করলাম:
ক)জলবায়ু ও কৃষিক্ষেত্র নির্বাচন।
খ)ফসল ও জাত নির্বাচন।
গ)পরিবর্ধক ও আধারীয় বীজ সংগ্রহ।
ঘ)স্টেট সীড সার্টিফিকেসন(SSCA) সংস্থার কাছে নিদিষ্ট আবেদন পত্রের ভিত্তিতে ফি ও যাবতীয় তথ্য সহ জমা।
উ)SSCA দ্বারা বীজের উৎস যাচাই।
চ)জমি তৈরী।
ছ)বীজ ও বীজতলা শোধন।
জ)Isolation distance বজায় রাখা।
ঝ)চারা রোপণ।
ঞ)পরিচর্যা:সেচ/সার/আগাছা
ট)রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ।
ঠ)অবাঞ্চিত উদ্ভিদ তুলে ফেলা: বীজতলায় ফুল আসার আগে ও পরে/ফসল পাকলে ও কাটার আগে।
দ)SSCA দ্বারা উৎপাদন ক্ষেত্র পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ।
ধ)ফসল কাটা ও তোলা।
ন)ঝাড়াই বাছাই/শুদ্ধ করণ/গুদামজাত।
প)SSCA দ্বারা বীজের নমুনা সংগ্রহ ও বীজের বাহ্যিক বিশুদ্ধতা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
ফ)বীজ শোধন।
ব)বীজ থলিকরণ ।
ভ)SSCA সংস্থা কর্তৃক থলি সিল করা ও শংসা পত্র লাগানো।
ম)বীজ গুদামজাত করণ।
এছাড়া চাষীদের "বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করার প্রশিক্ষণ "এর সহায়তা করে থাকেন বিভিন্ন "জেলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র গুলি"(KVK),স্থানীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সীড করপোরেশন এর আধিকারিক গণ।
-অমরজ্যোতি রায়(amarjyoti@krishijagran.com