কৃষিজাগরন ডেস্কঃ পাহাড়ি এলাকার ফসল হিসেবে বিবেচিত মাশরুমের চাষ এখন সারা দেশেই হচ্ছে। বিভিন্ন জাতের মাশরুম চাষ করে বিপুল সংখ্যক কৃষক লাভবান হচ্ছেন। পাঠানকোটের বাসিন্দা যশপালও মাশরুম চাষ করে বছরে লক্ষাধিক লাভ করছেন।
যশপালের মতে, তিনি দিনে ৩ থেকে ৫ কুইন্টাল মাশরুম উৎপাদন করেন। এর পাশাপাশি তিনি অন্যান্য কৃষকদেরও এর চাষের সূক্ষ্মতা শেখাচ্ছেন। তাদের দেখে এখন এলাকার অনেক যুবক-যুবতীও মাশরুম চাষে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
যশপাল বলেন, মাশরুম চাষ করে যেকোনো কৃষক সহজেই বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা লাভ করতে পারেন। বর্তমানে তিনি এত মুনাফা করছেন। তবে এর চাষ করা খুবই কঠিন কাজ। এর জন্য অনেক পরিশ্রমের প্রয়োজন। পানি ও তাপমাত্রার বিশেষ যত্ন নিতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ভালো মাশরুমের ফসল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ টমেটো, বাঁধাকপির বিশেষ জাত! শীতকালে ফলন হবে বাম্পার
এই জাতের মাশরুম যেকোনো সময় চাষ করা যায়
ঠান্ডা মৌসুম মাশরুম চাষের জন্য অধিক উপযোগী বলে মনে করা হয়। তবে এসবের মধ্যে এমন কিছু জাতও আছে যেগুলো চাষ করে সারা বছরই ভালো লাভ করা যায়। অনেক চাষি ঝিনুক ও মিল্কি মাশরুম উৎপাদন করে ভালো লাভ পাচ্ছেন। নতুন কৌশল প্রবর্তনের পর এর চাষাবাদ আরও সহজ হয়েছে।
কিভাবে মাশরুম চাষ করা হয়?
প্রথমে, পুরোনো আমন ধানের খড় প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম নিয়ে তাকে ৩২ টি আঁটিতে ভাগ করে নিতে হবে | এরপর, ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ধরে ওই খড় পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর বাড়তি জল ঝড়িয়ে নিতে হবে। মাশরুম চাষে ফোটানো জল ঠান্ডা করে ব্যবহার করলে রোগ লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। এবার পাটাতন বা মাচার ওপর খড়ের আঁটি একদিকে মাথা বা আগা রেখে পাশাপাশি বিছিয়ে দিতে হবে। আবার বিপরীত দিকে মাথা রেখে আগে বিছানো চার আঁটির উপর আরও চার আঁটি খড় বিছোতে হবে। পাটাতনের ধার বরাবর খড়ের বাড়তি অংশ কাস্তে দিয়ে কেটে দিতে হবে। এইভাবে বিছানো আট আঁটি খড়ের একটি স্তর তৈরি হল। ওই স্তরের উপর ধার বরাবর তিন থেকে চার সেন্টিমিটার ভিতরে সমপরিমাণ ডালের গুঁড়ো ও মাশরুমের বীজ দিতে হবে। প্রথম স্তরের কাজ এইভাবে শেষ হয়।
এরপরে ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় স্তরের ৮ আঁটি খড় প্রথম স্তরের আড়াআড়ি বিছিয়ে আগের মতো একইভাবে মাশরুমের বীজ ও ডালের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিতে হবে। তৃতীয় স্তরের ৮ আঁটি খড় প্রথম স্তরের সমান্তরালভাবে একইভাবে বিছিয়ে বীজ ও ডালের গুঁড়ো আগের মতো ছিটিয়ে দিতে হবে । দ্বিতীয় স্তরের সমান্তরাল চতুর্থ স্তরে ৮ আঁটি খড় একইভাবে বিছাতে হবে । এই স্তরে বীজ বা ডালের গুঁড়ো ছিটাতে হবেনা, তা খেয়াল রাখতে হবে । তিনটি স্তরের মোট ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম বীজ ও সমপরিমাণ ডালের গুঁড়ো প্রয়োগ করতে হবে । প্রতিটি স্তরের খড়ের আঁটিগুলি যাতে ভেঙে না পড়ে সেজন্য এক বা একাধিক জায়গায় দড়ি বা খড় দিয়ে আলতো বাঁধন দিতে পারলে ভাল হয়। স্তরগুলি সাজানোর সময় পুরো স্তর জোরে চাপ দিয়ে ঘনসন্নিবিষ্ট করতে হবে । পলিথিনের চাদর দিয়ে পুরো স্তরগুলি ঢেকে দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ Mushroom Cultivation: শিখে নিন বাড়িতে মাশরুম চাষের দুর্দান্ত পদ্ধতি
প্রথম চারদিন ঢাকা খোলা বা জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারপর প্রতিদিন পলিথিনের চাদর খুলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাওয়া খাওয়ানোর পর প্রয়োজন মতো জল হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ফের পলিথিন চাদর ঢেকে দিতে হবে। ৮ থেকে ১০দিনের মধ্যে স্তূপে ছত্রাকের কুঁড়ি জন্মায়। কুঁড়ি জন্মানোর পর আর পলিথিন ঢাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সকালে বিকেলে প্রয়োজন মতো জল প্রতিটি স্তূপে ছিটিয়ে দিতে হবে। ১৫ দিনের মাথায় মাশরুম তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়। ৫ থেকে ৭ দিনের বিরতি দিয়ে আরও ১৫ দিন পর্যন্ত অল্প করে মাশরুম উৎপন্ন হয়। এইরকম এক একটা স্তূপে তিন থেকে চার কিলোগ্রাম পর্যন্ত মাশরুম জন্মায়।