পেঁয়াজ এমন একটি ফসল, যার চাহিদা ক্রমবর্ধমান। আর পশ্চিমবঙ্গের বৈচিত্র্যপূর্ণ জলবায়ুতে পেঁয়াজের চাষ বেশ লাভজনক। এই চাষ এখন ক্রমশ বাড়ায় রবি মরসুমের সাথে সাথে কিছু এলাকায় খারিফ মরসুমেও এর চাষ হচ্ছে। উন্নত জাত এবং সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে খারিফ মরশুমেও একক এলাকা থেকে অধিক ফলন এবং আয় করা সম্ভব। তবে অধিক ফলনের জন্য সঠিক চাষ পদ্ধতির সঙ্গে দরকার শস্য পরিচর্যা ও সুরক্ষার বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখা।
আগত খরিফ মরসুমে (Kharif Season) অনেক কৃষকই পেঁয়াজের চাষ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে চাষ কার্যে ফসলের পরিচর্যা এবং রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আজ আমরা এই নিবন্ধে খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ ফসল চাষে শস্য সুরক্ষার বিষয় সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে চলেছি।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে কৃষকবন্ধুরা নিজেদের পেঁয়াজ ফসলের পরিচর্যা করবেন ।
বর্ষাকালীন পেঁয়াজের পরিচর্যা (Onion crop protection) -
পরিচর্যা –
১) পেঁয়াজের শিকড় বেশী নীচে বিস্তার লাভ করে না আর চারা কাছাকাছি থাকার জন্য প্রথম থেকেই জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
২) আগাছানাশক হিসাবে অক্সিফুরফেন ১ মিলি/লি. জলে মিশিয়ে রোপণের ৩ দিনের মধ্যে স্প্রে করতে হবে।
৩) হুইল হো বা হাত নিড়ান দিয়ে একবার আগাছা পরিষ্কার করলে ভালো।
৪) মাটির অবস্থা, ফসলের বাড়ন্ত এবং বৃষ্টিপাতের অবস্থা দেখে জমিতে সেচ দেওয়া হয়।
৫) চারা রোপণের পরেই একটা হালকা সেচ দরকার।
৬) বাল্ব তৈরীর সময় জমি শুকনো থাকলে হালকা সেচ দিতে হয়।
৭) চাপান সার প্রয়োগ করার পর সেচ দিতে হবে।
৮) এনপিকে (১৯:১৯:১৯) চারা রোপণের ১৫, ৩০ এবং ৪৫ দিন পর এবং মালটি K (১৩:০:৪৬) ৬০, ৭৫ এবং ৯০ দিন বাদে স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
শস্য সুরক্ষা (Disease & pest management) –
১) চারা ঢলে পড়া রোগ – বীজ অঙ্কুরিত হয়ে চারা বের হওয়ার পর মাটির নীচে থাকাকালীন বা উপরে ৫-৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত এই রোগ হতে পারে। নার্সারিতে চারা বের হওয়ার পর চারার গোড়ায় আক্রমণ হওয়ার পর গোড়া পচে যায়।
নিয়ন্ত্রণ –
-
কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম/কেজি বীজ
-
চারা শোধন কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম/লি. জল
-
ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ১২৫০ গ্রাম/হেক্টর জমিতে জৈব সারের সাথে প্রয়োগ
২) বেগুনি লাল দাগ - আক্রান্ত গাছের পাতায় গোলাপি রং যুক্ত ছোট ছোট বসে যাওয়া সাদাটে দাগ দেখতে পাওয়া যায়। দাগের চারদিকের কিনারা লালচে বলয়যুক্ত। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়।
নিয়ন্ত্রণ –
-
বীজ শোধন কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম/কেজি
-
ম্যানকোজেব ও কার্বেন্ডাজিমের মিশ্রণ ২ গ্রাম/লি. জলে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩) চোষী পোকা – গাছের রস শোষণ করে। পাতা ধীরে ধীরে বাদামী বর্ণের হয় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
নিয়ন্ত্রণ –
ইমিডাক্লোপ্রিড ৩ লিটার জলে ১ মিলি অথবা অ্যাসিফেট ১ মিলি/লিটার জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন - বাড়ির টবে সহজ পদ্ধতিতে করুন রসুন চাষ
সংরক্ষণ (Harvesting) –
ফসল তুলে ঘরের মেঝেতে ৩-৪ ইঞ্চি পুরু করে ছড়িয়ে ৮-১০ দিন রাখলে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায়। কন্দের অগ্রভাগ টিপলে যদি বসে না যায়, তবে পেঁয়াজ শুকিয়েছে বলে বুঝতে হবে। ফসল তোলার পর বাল্বের ২-২.৫ সেমি. উপরের পাতা কেটে দিতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে ছাউনি দেওয়া বন্ধ ঘরে বাঁশের মাচার উপরে পেঁয়াজ ৪-৬ মাস পর্যন্ত রাখা যায়।
আরও পড়ুন - Pomegranate Cultivation: শুধু বেদানা চাষে আপনি হয়ে উঠতে পারেন বিশাল অর্থের মালিক