কৃষিজাগরন ডেস্কঃ মাছ চাষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে থাকে যে জিনিসগুলি তার মধ্যে অন্যতম হল মাছের খাবার যা সরাসরি ভাবে মাছের বাড়-বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল ও একান্ত প্রয়োজনীয় । এই খাবার স্থানীয় ভাবে লভ্য উপাদানের সাহায্যে কিভাবে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে তৈরি করা যায় সেই পদ্ধতি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে শিখে নিয়ে এবং উপযুক্ত যন্ত্রপাতির প্রয়োগে তৈরি করে নিলে কর্মসংস্থানের একটি উল্লেখযোগ্য সদর্থক পদখ্যেপ হতে পারে যার সাথে, মাছ চাষে সফলতা নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি আর্থিক সুবিধাও পাওয়া সম্ভব।
শুধু খাবার তৈরিই নয়, জলে সঠিক সময় ও সঠিক মাত্রায় তাদের প্রদান করাও একান্ত জরুরী মাছের ফলন নিশ্চিত করতে। বিভিন্ন রকম ‘ফীড ডিস্পেন্সিং’ সিষ্টেম তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে সহজেই যার জন্য প্রয়োজনীয় দেশীয় সরঞ্জাম সবই স্থানীয় বাজারে খোঁজ করলেই পাওয়া যেতে পারে। তাই খাবার প্রস্তুত করা ও খাবার প্রয়োগের কলা-কৌশলের সাহায্যে সাধারণ যন্ত্রের মাধ্যমে মাছকে তা দেওয়া সম্ভব হলে আয় অবশ্যই নিশ্চিত করা যায়।
আরও পড়ুনঃ মাছ চাষে স্বনির্ভর কর্মদ্যোগ
যেহেতু জল ও মাটির গুনাগুন মাছের বাড়-বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে তাই জল-মাটির যথাযত গুনসম্পন্ন থাকছে কিনা প্রায়শই তা পরীক্ষা করে নেওয়ার দরকার পড়ে। এখেত্রে প্রয়োজনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ করে এবং ল্যাবরেটরি তে যাচাই করে নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে ফলন শুধু বাড়বে তাই নয়, চাষও টেকসই হবে।
চাষের রোগ বলাই প্রায়শই চিন্তার কারণ হয়। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা বিশেষত স্বীকৃত নয় এমন অনভিপ্রেত রাসায়নিক বর্জন করে জীবানুনাশক এবং উদ্ভিদ জাতীয় সহজ লভ্য অথচ বেশি দাম নয়, এইরকম কিছু পদার্থের প্রয়োগে রোগ বলাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সেগুলির শুধু আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পারবে তাইই নয়, জলের পরিবেশকেও নির্মল রাখতে পারবে এবং আয়ের আঙ্গিকেও সহায়ক হবে। এই প্রসঙ্গে যদি কৃষি সামগ্রীর বিপনির মতন মাছ চাষের বিভন্ন সরঞ্জামের বিপনি যেখানে, যিনি চাষ করছেন তার প্রয়োজনীয় সব কিছু এমনকি মাছ ধরার অন্যতম হাতিয়ার – বিভিন্ন ধরনের জল, যেমন হাত জাল, ক্ষ্যাপলা জাল, টানা জাল ছাড়া জলের তাপমাত্রা দেখার জন্যে থার্মোমিটার, পি.এইচ. মাপার জন্যে পি.এইচ মিটার, কয়েকটি প্রয়োজনীয় রাসায়নিক যেমন পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট, ফিটকিরি, সাধারণ লবণ, জৈব-অজৈব সার, ছোট-বড় মাছের খাবার – এই সবই এই বিপনিতে পাওয়া তো যাবেই তার সাথে প্রয়োজনীয় পরামর্শও প্রদান করা যেতে পারে কিছু পারিশ্রমিকের মূল্যে যাতে বিপনির মালিক আয় করবেন, মাছ চাষের সহায়তা করবেন ও সর্বোপরি নিজেও আয়ের উত্স খুঁজে পাবেন।
আরও পড়ুনঃ বীজ পরিষ্কার এবং গ্রেডিং পদ্ধতি
আজকাল অনেকে রঙিন মাছ প্রতিপালন করেন বাড়িতেও ও অনেক অফিসেও। এই রঙিন মাছ প্রতিপালনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন রঙিন মাছের উপযুক্ত খাবার, অ্যাকুয়ারিয়াম থেকে মাছ ধরবার জন্য হাত জাল, অ্যাকুয়ারিয়ামে দ্রবীভুত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এয়ারেটর মেশিন, জলের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কার্বন ফিল্টার ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার জলজ ঝাঝি এবং টুবিফেক্স ইত্যাদিরও যেন যোগান রাখা সম্ভব হয়। তবেই চাষী নিরাপত্তাও পাবেন এবং মাছ চাষের আয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।
এখনো পর্যন্ত ব্যাপক ভাবে হয়ত এই উদ্যোগ দেখা যায় নি, কিন্তু আশা করা যায় আগামী দিনে এই ধরনের উদ্যোগ আমরা দেখতে পাব এবং আমাদের গ্রামীণ যুবক যুবতীদের আয়ের দিশা দেখানো সম্ভব হবে মাছ চাষ ও মাছ প্রতিপালনের মাধ্যমে।
উর্ণা ব্যানার্জী ও প্রতাপ মুখোপাধ্যায়