কৃষিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পরিবেশের উপাদানের মধ্যে জল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তায় মাটি বিহীন পরিবেশের ফসল উৎপাদন সম্ভবপর হয়েছে। কিন্তু জল বিহীন কৃষি কাজের কথা ভাবাও যায় না। কৃষি সাফল্যের জন্য চাই প্রয়োজনীয় জলের যোগান, অথচ পৃথিবীতে মোট জলের মাত্র ২.৮ শতাংশ মিষ্টি জল যা চাষের পক্ষে উপযুক্ত। আগামী দিনের সমস্ত ধরনের সমস্যার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়াবহ সমস্যা হল ব্যবহার যোগ্য জলের পরিমাণ হ্রাস। ভবিষ্যতে হয়ত খনিজ তৈলেরমত জল হবে ‘তরল সোনা’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদ নির্ধারিত হবে দেশের মধ্যে সংরক্ষিত জলের মাধ্যমে।
পশ্চিমবঙ্গ তথা মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট বৃষ্টিপাতের ৮০-৯০ শতাংশ হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই ৪ মাসের মধ্যে। উদ্ধৃত বৃষ্টিরজল জমির ঢাল বেয়ে ও অজস্র নদী নালার মাধ্যমে বয়ে চলে যায়। ভূগর্ভে যাওয়া জলের পরিমাণ সেইতুলনায় অনেককম। এই জলকে ধরে রাখতে পারলে খরিফের পরবর্তী দুই মরসুমে স্বচ্ছন্দে চাষের জন্য জলের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। উঁচু নীচু জমিগুলিতে কিছু জল সংরক্ষণ পদ্ধতির কথা আলোচনা করা হল।
(১) ঢালু জমির চারিদিকের আলকে মজবুত করে বেঁধে ঢাল বেয়ে জমিতে জল ঢোকা ও বেরিয়ে যাওয়ার পথকে সোজাসুজি না রেখে যথা সম্ভব দূরে রাখার ব্যবস্থা করা, যাতে জমিতে জলের অবস্থান দীর্ঘতর হয়। এর ফলে একদিকে যেমন আর্থিক সময় ধরে মাটি ভেজার অবকাশ পাবে অপরদিকে তেমনই প্রবেশ স্তর দিয়ে জল ভূগর্ভে প্রবেশের সুযোগ বাড়বে এরফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের সমৃদ্ধি ঘটবে। (চিত্র -১)
আরও পড়ুন আমের মুকুল পরবর্তী পরিচর্যায়ের এক নজরে স্প্রে শিডিউল
(২) বন্ধুর ভূপ্রকৃতি ও যেখানে মাটিতে জল ভূগর্ভস্থ স্তরে সহজে প্রবেশ করে না, সেখানে প্রতিটি প্লেটের এক দশমাংশ জমিতে জল ধরে রাখার জন্য ছোট ছোট ডোবা বা জলাধার তৈরি করে রাখতে হবে। (চিত্র – ২)
যাতে বৃষ্টির জল কিংবা জমির ওপর দিয়ে গড়িয়ে আসা জল ঐ সমস্ত প্লটের ফসলকে আপৎকালীন অবস্থায় জলসেচ সরবরাহ করবে সাথে সাথে ভূগর্ভস্থজলস্তরেরও নবীকরণ সম্ভবপর হবে।
(৩) পুরানো জলাধার সংস্কার ও নতুন জলাধার নির্মাণ:
প্রতিটি এলাকাতেই ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রাকৃতিক জলাশয়। বৃষ্টির অতিরিক্ত জল ধরে রাখার জন্য সামাজিকভাবে এগুলি তৈরি। এই জলাশয়গুলিকে পুনঃসংস্কারের মাধ্যমে জল সংরক্ষণ সম্ভব। এছাড়াও জমির ঢালকে ব্যবহার করে এবং জল নির্গমনের অপেক্ষাকৃত সঙ্কীর্ণ পথে বাঁধ দিয়ে জল আটকে খুব সহজেই অনেক বেশী জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব।
এলাকা ও জলবায়ু উপযোগী শস্য এবং জাত নির্বাচন, বোরো ধানের চাষ থেকে যথা সম্ভব বিরত থাকা, অনুসেচের ব্যবহার, ভাসিয়ে জলসেচ না করার মাধ্যমে আমরা জল সংরক্ষণে ব্রতী হতে পারে। বৈচিত্রময় কৃষি, ডালশষ্যের চাষ, ফসলের সংকটময় অবস্থায় সেচ এই কাজে খুব সহায়ক হতে পারে। বণভূমিকে সংস্কার ও নিবিড় করার ক্ষেত্রে সেই সব গাছ লাগানোর উপরগুরুত্ব দিতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ বিজ্ঞান সম্মত ব্যবহার এই ভাবেই যে কোন অঞ্চলের সুসংহত উন্নতি করতে সম্ববপর হবে।
তথ্য সূত্র: ড. মিঠুন সাহা (সহ কৃষি আধিকারিক, রাণীনগর-২, মুর্শিদাবাদ)
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)