ছাদে বাগানে সবজি-ফল ইত্যাদি চাষ করা যায় অনায়াসে | কিন্তু, ছাদে বাগান করার কিছু নিয়ম থাকে | ছাদ বাগানের জন্য প্রথম যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো টবে মাটি প্রস্তুত করা,
ছাদ বাগানে টবের মাটি প্রস্তুত প্রণালী(Soil Preparation):
১) টবে চারা রোপণের ক্ষেত্রে ০১ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, ০১ ভাগ বালি, ০১ ভাগ কম্পোস্ট সার ( ভার্মি কম্পোস্ট উত্তম) ভালোভাবে মিশিয়ে টবে ভরাট করতে হবে। অথবা ০২ ভাগ দোআঁশ মাটি, ০১ ভাগ কোকোপিট, ০১ ভাগ জৈব সার দিয়ে টব ভরাট করতে হবে।
২) জল চুয়ানোর জন্য টবেব নিচে ২/১ টি ছিদ্র থাকা প্রয়োজন। ছিদ্রযুক্ত টবেব নিচে ভাঙ্গা চাড়া, নারিকেলের ছোবড়া, খড়কুটা বা ইটের টুকরো দিয়ে বন্ধ করে তার উপর কিছু শুকনো পাতার আস্তরণ দিতে হবে।
৩) এরপর বেলে মাটি এবং তার উপর সার মাটি দিয়ে টব এমনভাবে ভর্তি করে দিতে হবে যেন ওপরে অন্তত ১ ইঞ্চি পরিমাণ খালি থাকে। নতুন কিংবা পুরাতন উভয় প্রকার টবই ব্যবহারের আগে গরম জল দিয়ে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়।
৪) টব বা ড্রামের নিচে একটি বা দুটি ইট দিয়ে উচ করে দিন, যাতে করে জল চুঁইয়ে পড়ে ছাদে জমা হয়ে স্যাঁতস্যাঁতে না হয়ে যায়। আর যদি আপনি এতকিছু না করতে চান, যে কোন ভালমানের নার্সারিতে মাটিসহ টব কিনতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - Dry Land Farming - খরা প্রবণ অঞ্চলে কৃষকরা কীভাবে কৃষিকাজ করবেন? রইল বিস্তারিত পদ্ধতি
টবে চারা রোপণ কৌশল ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি(Fertilizer preparation):
গাছের চারা টবের ঠিক মাঝ বরাবর পলিব্যাগের মাটিসহ রোপণ করুন। দুপাশে হালকা করে চাপ দিয়ে মাটি বসিয়ে দিন, যাতে চারা হেলে না পড়ে। হালকা জলের ছিটা দিন। যে সব গাছ বেশি জল সহ্য করতে পারেনা, সেই সব গাছের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই যাতে টবে বা গাছের গোড়ায় জল না জমে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। চারা রোপণের ০১ সপ্তাহ পর নতুন পাতা গজালে ১ চা চামচ ইউরিয়া, ১ চা চামচ ফসফেট, ১ চা চামচ পটাশ, ১/২ চামচ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে। এই সারগুলো প্রতি ২০-২৫ দিন পর পর দিতে হবে। এছাড়াও ১/২ চামচ করে বোরন সার ০১ মাস পর পর ২-৩ বার দিবেন।
ছাদে বাগান করার পদ্ধতি(Farming process):
টব পদ্ধতি :
খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায় বলে এটাই সহজ পদ্ধতি বলে বিবেচিত। তবে ফলের গাছের জন্যে টব সাধারণত যে আকারের হয়ে থাকে তাতে খুব একটা ভালো হবে না। বড় আকারের টবে ফলের গাছ লাগানো যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সিমেন্টের তৈরি বড় টব ব্যবহার করা যায়। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার উত্তমরূপে মিশিয়ে ১০ – ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।
হাফড্রাম পদ্ধতি:
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই হাফড্রাম পদ্ধতিতে ছাদে ফলের বাগান করে থাকেন। হাফড্রামের তলদেশে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোয় ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। এর ফলে অতিরিক্ত জল সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। আম ও লেবু জাতীয় গাছের জন্য প্রতিটি ড্রামে উপরিউক্ত জৈব ও রাসায়নিক সারের পাশাপাশি ৫০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয় তত ভালো।
স্থায়ী বেড পদ্ধতি :
ছাদে বাগান করার জন্য স্থায়ী বেড পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি। স্থায়ী বেড পদ্ধতিতে ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশিং করে নিতে হবে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Organic Manure – সহজ পদ্ধতিতে কীভাবে বানাবেন জৈব সার, রইল খুঁটিনাটি