আউশ ধান বাংলাদেশের আদি ফসলের অন্যতম । রবি বা চৈতালি ফসল যেমন ডাল, তৈলবীজ, মসলা, শাক-সবজি, ফল-মূল, গোল আলু, মিষ্টি আলু, গম, পায়রা, ইত্যাদি ফসল কাটার পরে চৈত্র-বৈশাখ মাসে ছিটিয়ে আউশ ধানের বীজ বোনার প্রচলন চলে আসছে বহুকাল থেকে । অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে আউশ ধান কাটার পরে এই জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয় ।
প্রাক বর্ষায় জমিতে ধানের বীজ ছিটিয়ে, বুনে একটি চাষ ও মই দিয়ে বীজ মাটির তলায় ঢেকে দেয়া হয় । ধানের জাত ভেদে ৩-৪ মাস পরে ধান কেটে ঐ জমিতে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয় । কোন কোন এলাকায় আউশ ধান এবং বোনা আমন ধানের বীজ একসাথে মিশিয়ে ছিটিয়ে বোনা হয় । শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে আউশ ধান কাটা হয় এবং আমন ধান অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে কাটা হয় ।
আরও পড়ুনঃ বারোমাসি পেয়ারা চাষ করে সফল দিনাজপুরের কৃষক
বাংলাদেশ ধানের আদি উৎপত্তিস্থল । প্রাচীন কাল থেকে এ দেশে নানা জাতের ধানের আবাদ চালে আসছে । গত শতাব্দীর প্রথম দশকেও পনের হাজার জাতের ধানের আবাদ ছিল । ষাটের দশকে ইরি ধান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট থেকে উচ্চ ফলনশীল জাত এবং সম্প্রতি হাইব্রিড ধান বীজ প্রবর্তনের ফলে স্থানীয় জাতের আবাদ কমে আসছে । তবে এখনও দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারের অধিক স্থানীয় জাতের ধান চাষ হচ্ছে ।
এর মধ্যে আউশ, আমন ধানই বেশী । কারণ স্থানীয় জাতের আউশ ধান তুলনামূলক ভাবে বেশী খরা সহনশীল । খরা প্রবন অঞ্চলে স্থানীয় জাতের আউশ ধানের আবাদ বেশী হয় । পক্ষান্তরে খরা প্রবন এলাকার জন্য ইরি, ব্রি বা হাইব্রিড ধানের কোন জাত না থাকায় এসব এলাকায় এখনও স্থানীয় জাতের আউশ ধান চাষ হচ্ছে । তাছাড়া স্থানীয় জাতের আউশ ধান পরিবেশ প্রতিকূলতা সহনশীল, রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা ও অন্য সব প্রবর্তিত জাতের চেয়ে বেশী ।
আরও পড়ুনঃ লটকন চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা ,বাৎসরিক আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট থেকে বেশ কয়েকটি আউশ ধানের উচ্চফলনশীল জাত ছাড় করা হয়েছে । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলি হচ্ছে বি আর ২০, বি আর ২১, বি আর ২৪, বি আর ২৬, বি আর ২৭, ব্রি ধান ৪২, ব্রি ধান ৪৩, ব্রি ধান ৪৮, ব্রি ধান ৫৫ ও ব্রি ধান ৬৫ । আরো আছে বি আর ১, বি আর ২, বি আর ৩, বি আর ৬, বি আর ৭, বি আর ৮, বি আর ৯, বি আর ১৪, বি আর ১৫, বি আর ১৬, বি আর ২০ এবং বি আর ২১ ।
ডেভেলপমেন্ট ফান্ড নরওয়ের আর্থিক সহায়তায়, লিবার্ড নেপালের সহযোগিতায় নয়াকৃষির কৃষকরা এবং উবিনীগের অংশীদারিত্বমূলক জাত বাছাই কার্যক্রমে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, টাঙ্গাইল এবং কক্সবাজারে (২০১১-২০১৪) গবেষণা করে আউশ ধানের দুটি জাত যেমন শঙ্কপটি ও ভৈরা উদ্ভাবন করা হয় । কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জেলার কর্মকর্তাবৃন্দ, উবিনীগ ও নয়াকৃষি কৃষকদের সাথে আউশ ধানের জাত উদ্ভাবনের গবেষণায় সহযেগিতা করেছেন । বর্তমানে শঙ্কপটি ও ভৈরা জাত দুটি কৃষকদের মাঝে চাষাবাদের জন্য বীজ বিস্তার করা হচ্ছে ।