সবুজ বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে উৎপাদন বৃদ্ধির বিজয় রথের গতি ক্রমশ কমছে। বিগত তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কালে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল নিম্নরূপ –
অষ্টম – বাৎসরিক বৃদ্ধির হার – ৪.৭ শতাংশ
নবম - বাৎসরিক বৃদ্ধির হার – ২.১ শতাংশ
দশম - বাৎসরিক বৃদ্ধির হার – ১.৫ শতাংশ
বর্তমানে বাৎসরিক সার প্রয়োগ মাত্রা বৃদ্ধির হারমোটামুটি ৪-৫ শতাংশ। কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধির কোন রকমেই ১.৫ শতাংশের বেশী তো নয়ই, বরং বলতে গেলে উৎপাদন বৃদ্ধি প্রায় থমকে গেছে।
অণুখাদ্যের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে –
কৃষিক্ষেত্রে অণুখাদ্যের সমস্যার জটিলতা ক্রমশ বাড়ছে। এর কারণ একাধিক –
ক) বর্তমানে চাষ হচ্ছে উচ্চফলনশীল জাতের ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি। এদের উৎপাদন মাত্রা অনেক বেশী। বেশী পরিমাণ ফলন দিতে এসকল ফসল মাটি থেকে টেনে নিচ্ছে বেশী বেশী প্রধান খাদ্য সহ বিভিন্ন অণুখাদ্যও। তাই মাটিতে অণুখাদ্যের ঘাটতি পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। নিয়ম করে প্রধান খাদ্য উপকরণ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু অণুখাদ্য বিশেষ ফসল বা বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া দেওয়াই হয় না।
খ) সবুজ বিপ্লব পরবর্তী কৃষিতে এক বা দুই ফসলি চাষের পরিবর্তে বহু ফসলি শস্যের চাষ হচ্ছে। এর ফলেও মাটি থেকে প্রধান প্রধান খাদ্যের সঙ্গে আরও বেশী মাত্রায় অণুখাদ্য বেরিয়ে যাচ্ছে।
ফসলের অবশেষ মাটিতে ফেরত না দেওয়া -
বর্তমানে অতি রাসায়নিক কৃষির সব থেকে গুরুতর বিধি ভঙ্গের অপরাধ ঘটেছে, ফসলের অবশেষ মাটিতে ফেরত না দেওয়াতে। মাটির সঙ্গে কৃষকের একটি অলিখিত বিধান ছিল - ফসলের দানা পাবে মানুষ, গাছ ফেরত যাবে মাটিতে। এ বিধান না মানাতে ঘটেছে যত রকমের বিপত্তি। দানার তুলনায় ফসলের শুকনো অবশেষ পাওয়া যায় বেশী। ধান এবং গমের ক্ষেত্রে মোটামুটি দেড় গুণ। ভুট্টা, সরিষা, ডালশস্য ইত্যাদি শস্যের বেলাতে দুই-তিন গুণ। এমনিতে অণুখাদ্য কাজ করে অনেকটা অনুঘটকের মতো। কাজ শেষে সে দানাতে বেশী থাকে না, গাছেই থাকে বেশী। তাই দানা রেখে গাছ মাটিতে ফেরত দিলে অণুখাদ্য অনেকটাই মাটিতে ফিরে যেত – সমস্যা এত বাড়ত না। অণুখাদ্যের ঘাটতি বাড়তে বাড়তে এখন অনেক সময়ে ফসলে দেখা যায় নানা বিকৃতি – ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিঘটিত নানা সমস্যা। আবার দেখা যাচ্ছে, সবই ঠিক আছে, কিন্তু ফসলে দানা নেই।
ধানের খড় পশুখাদ্য রূপে ব্যবহারের পর অনেক ভুষি থাকে। অন্যান্য ফসলেরও অবশেষ থাকে, যা পশুখাদ্য রূপে ব্যবহার করা হয় না। এর কিছুটা রান্নাঘরে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় – কিছুটা আবর্জনা মনে করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। রান্নাঘরের কথা অবশ্যই ভাবতে হবে – তবে মাটিকে বাদ দিয়ে নয়।
আরও পড়ুন - জানুন নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিগুণ ও বীজ থেকে এর চাষের পদ্ধতি (Napier Grass Cultivation Method)