হলুদ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মসলা। প্রতিদিনের ব্যবহারে হলুদ একটি অপরিহার্য মসলা। রান্নার কাজে আমরা হলুদ সবথেকে বেশি ব্য়বহার করি। মসলা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও অনেক ধরণের প্রসাধনী কাজে, রং শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই হলুদ চাষ করেও সংসারে বাড়তি টাকা আনা যায়।ভারত, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সঠিক পদ্ধতিতে হলুদের চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
চাষিরা জানান, একবিঘা জমিতে বীজ সার ও নিড়ানীসহ ১০ হাজার টাকা খরচ করে এক বছরে প্রায় ৬০-৬৫ হাজার টাকার হলুদ বিক্রি করা যায়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।
মাটি
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই হলুদ চাষ করা যায়। তবে উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদের জন্য ভালো। যে কোন ফলের বাগানের শুরুতে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ চাষ লাভজনক। রোদ নেই এমন বাগানে হলুদ চাষ করলে ফলন খুবই অল্প হবে, তবে অর্ধেক ছায়া অর্ধেক আলো এমন বড় ফলের বাগানে চাষ করালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
গত তিন বছর ধরে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের আর্থিক সাহায্যে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে পরীক্ষামূলক ভাবে হলুদ চাষ শুরু করেছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকল্পের নাম ‘অচিরাচরিত এলাকায় বিজ্ঞানভিত্তিক হলুদ চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ’।
আরও পড়ুনঃ কাঁচা হলুদের চাষ পদ্ধতি এবং ব্যবহার
রোপণ পদ্ধতি
জমিতে ৬০ সে.মি. পরপর সারি টেনে সারিতে ২৫ সে.মি.পরপর ৫-৭ সে.মি.গভীরে বীজকন্দ রোপণ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। জল সেচ ও নিষ্কাশনের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৬০ সেমি প্রশস্ত নালা রাখতে হবে। পরবর্তীতে কালে গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে।
রোপণ সময়
হলুদ খরিপ মৌসুমে রোপণ করা হয় । মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোপণ করা ভাল। তবে মে মাসেও রোপণ করা যায়।
সার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা
জমির উর্বরতার উপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি হেক্টরে গোবর সার ৪-৬ টন, ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি, জিপসাম ১০৫-১২০ কেজি ও জিংক সালফেট ২-৩ কেজি। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও ৮০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়।
পরিচর্যা
হলুদ লাগানোর পর পাতা বা খড় দিয়ে জমি ঢেকে দেয়া দরকার। এতে জমির রস ঠিক থাকে ও চাষের ফলে আলগা হয়ে যাওয়া মাটি সরে যাওয়া রোধ হয়। কয়েক দিন পর জমিতে জৈব সার দিতে হবে তাহলে জমির উর্বরতা বাড়বে।
ফসল সংগ্রহ
৮ থেকে ৯ মাসের মধ্য়ে হলুদ সংগ্রহ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ টন কাঁচা হলুদ পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে একই জমিতে প্রতি বছর হলুদ বা আদা ফসল চাষ করা উচিত নয়।
আরও পড়ুনঃ Monsoon business ideas: বর্ষায় এই কয়েকটি ব্যাবসায় আপনিও হতে পারেন লাভবান
কৃষি বিভাগ হলুদ চাষিদের সব রকম কৃষি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার হলুদের ফলন ভালো হয়েছে। আশাকরি, হলুদ চাষে কৃষক লাভবান ও স্বাবলম্বী হবে।