পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্র সবজি চাষে আগাছা একটি বড় সমস্যা। আর আজকের বাজারে সবজি থেকে লাভ পেতে চাষিরা ঘাড়ের উপর ঘাড়ে ফসল ফলাতে অভ্যস্ত। সেচ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন জমি খালি পড়ে থাকে কই? তবে আগাছানাশে বেশী শ্রম খরচ কমাতে আর লাভের কড়ি গুনতে চাষিরা জমিতে ‘টোটাল উইড কিলার’ দিয়ে দেন বছরে প্রতি মরশুমের শুরুতেই। ফলে জমির অবস্থা খারাপ থেকে আরো খারাপ হচ্ছে আর পরিবেশে মিশছে বিষ। আগাছার সমস্যা রোধে ‘মাল্চিং’ এক কার্যকরী ‘ক্লাইমেট স্মার্ট’ পদ্ধতি।
সবজি চাষে চারা বা বীজ বসানোর আগে উঁচু বেডে জমি ভাগ করে বেডের উপর পলিশিটের মাল্চ পেতে দিলে আগাছার সমস্যার সাথে জলসেচ কম লাগে, তাপ নিয়ন্ত্রিত হয় সাথে রোগ পোকাও কম লাগে। বর্তমানে পলি মাল্চের উপর ফুটো করে সেই স্থানে চারা ও বীজ লাগিয়ে সুন্দর মাল্চের উপর সবজি চাষ সম্ভব হচ্ছে। খুব বর্ষাকাল বাদে শীতে ও গ্রীষ্ম - প্রাক গ্রীষ্মে মাল্চিং এক কার্যকরি পদ্ধতি।
মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে সুবিধা (Benefits of mulching process) -
ক) ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফসল ক্ষেতের জল সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায় না। ফলে জমিতে রসের ঘাটতি হয় না এবং সেচ লাগে অনেক কম। মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০% থেকে ২৫% আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
খ) মালচিং করার জন্য যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো জৈব ও অজৈব পদার্থ। উপাদানগুলো হলো - ধান বা গমের খড়, কচুরিপানা, গাছের পাতা, শুকনো ঘাস, কম্পোস্ট, ভালোভাবে পচানো রান্নাঘরের আবর্জনা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
গ) গাছের গোড়া, সবজির বেড এবং ফলবাগানে গাছের গোড়া হতে এক থেকে দু’ইঞ্চি (২.৫০ - ৫.০ সে.মি) দূরে বিভিন্ন ধরনের মালচ ব্যবহার করা যেতে পারে। মালচিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদার্থ অবশ্যই ৫ সেন্টিমিটার (২ ইঞ্চি) এর বেশি পুরু করে দেওয়া ঠিক নয়।
ঘ) উল্লেখ্য যে, মালচিং পদার্থের পুরুত্ব বেশি হলে তা গাছপালার অনাকাঙ্খিত মূল গজাতে সহায়তা করবে। এমনকি সঠিক মালচিং প্রয়োগে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণও রোধ করা যায়।
ঙ) শীতকালে মালচিং ব্যবহার করলে মাটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হয় এবং গরমকালে মাটি ঠান্ডা থাকে, এমনকি বেশ কিছু পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করা যায়।
চ) সবচেয়ে বড় কথা মালচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে জল লাগে অনেক কম। সেচ খরচ বাঁচে, লাভ হয় বেশি।
ছ) পাহাড়ি এলাকা এমনকি টিলা, পাহাড়ের ঢালে বিশেষ করে লালমাটি এলাকায় স্বল্প খরচে মালচিং প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ফল গাছ বিশেষ করে লেবু, পেয়ারা, কাঁঠাল, আম, নারিকেল, কলা, কমলা, আনারস, বাতাবি লেবু, পেঁপে, আদা, হলুদ এসব গাছের গোড়ায় মালচিং দিয়ে সম্ভব হলে ১-২ সপ্তাহ পর একবার জলসেচ দিয়েও বেশি সময় আর্দ্রতা রক্ষা করা সম্ভব।
জ) টমাটো, বেগুন, লঙ্কা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরী ইত্যাদির চাষে মাল্চিং বিশেষত পলিমাল্চিং খুবই ফলপ্রদ ও লাভজনক পদ্ধতি।
আরও পড়ুন - Paddy Disease Management - ধানের রোগবালাই সনাক্তকরণ ও তার ব্যবস্থাপনা
তবে বর্ষাতে উঁচু জমিতে একটু উঁচু করে মাল্চিং করে জল নিকাশী ভালোভাবে করলে চমৎকার স্মার্ট পদ্ধতিতে আগাছার সমস্যা মিটিয়ে সবজি পাবেন। বিশেষ করে এই মাল্চে কনজারভেশন হবার জন্য উৎপাদনও দেড়গুণ বেড়ে যায়।
আর এর সাথে ড্রিপ ব্যবস্থা চালু থাকলে দুগুন ফলন অনায়াসে সম্ভব। পলিমাল্চ সম্ভব না হলে প্রাক গ্রীষ্মের জমিতে বাওয়া সবজি বা শীতের সবজিতে খড় বা ফসলের অবশেষ ইত্যাদি দিয়ে মাল্চেও বেশ কিছুটা লাভ পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন - Cardamom Farming - কম খরচে এলাচ চাষ করে আয় করুন অধিক অর্থ