সব ফসলের মতই আগাছা পাট চাষেও এক গভীর সমস্যা, যা সময় মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে ফলনে বেশ প্রভাব পরে। আর অর্থকরী ফসল পাটের আগাছা নিয়ন্ত্রণ করলে এর ফলনও ভালো হবে, অর্থাৎ কৃষকের আয় হবে দ্বিগুণ। তাই ভালো ফলন পেতে গেলে নিম্নে উল্লিখিত বিষয়গুলিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন –
ক) আগাছামুক্ত বীজ ও জৈব সার।
খ) রাসায়নিক সার অযথা না ছড়িয়ে যতটা সম্ভব গাছের কাছে ব্যবহার করতে হবে।
গ) বোনার ১৫ এবং ৩০ দিনের মাথায় নিড়ান ২ বার ব্যবহার করতে হবে (সম্ভব হলে)।
ঘ) খড়, কচি পার্থেনিয়াম ইত্যাদির আচ্ছাদন ব্যবহার করতে হবে।
ঙ) সময়মতো সঠিক পরিমাণে আগাছা নাশকের ব্যবহার। সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে বিঘা প্রতি ৪ ব্যারেল জল বা ৬০ লি. জলে আগাছানাশক ঔষধ ভালো করে মিশিয়ে ভেজা আর্দ্র জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আগাছানাশক, যা পাটে ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। যেমন – ক্যুইজালোফপ-পি-ইথাইল (তরগাসুপার, অ্যাসুওর) বিঘা প্রতি ১৩৫ মিলি. বীজ বোনার ২০-২৫ দিন পর, ফ্লুয়াজিফপ-পি-বিউটাইল (ফুসিলেড, সুপার্ট, পিউজিলেট সুপার) বিঘা প্রতি ৩০০ মিলি. বীজ বোনার ১৫-১৮ দিন পর, প্রোপাক্যুইজাফপ (সোসাইটি, অ্যাজিল) ১০০ মিলি. ১ বিঘার জন্য বীজ বোনার ২১-২৫ দিন পর অথবা ফেনোক্সাপ্রপ-প্রি-ইথাইল (হুইপসুপার) বীজ বোনার ২৫-৩০ দিন পর বিঘা প্রতি ৪০ গ্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। একদম শুরুর দিকে আগাছা বেড়নো আটকাতে গেলে পেন্ডিমিথালইন (স্টম্প, পেন্ডিগান ইত্যাদি) বিঘা প্রতি ৩০০ মিলি. অথবা ট্রাইফ্লুরালিন (ট্রেফলান, ট্রাইফোগান, ক্লিন) ১২০ মিলি. বোনার ১-২ দিন পর ভেজা মাটিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়াও প্রধানত ঘাস বা চওড়া পাতা মারার জন্য বিউটাক্লোর (ম্যাচিটি, ফিনিশ, তীর) প্রতি লিটার জলে ৩ মিলি. বীজ বোনার ২ দিন আগে এবং ক্যুইজালোফপ-পি-ইথাইল ২-২.৫ মিলি. প্রতি লিটার জলে গুলে ১৫-২০ দিন পর স্প্রে করতে হবে।
রোগ-পোকা – পাটের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পোকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আংকা ও শুঁয়োপোকা, যার জন্য ক্লোরপাইরিফস ২.৫ মিলি. অথবা কার্বসালফান ২ মিলি. প্রতি লিটার জলে স্প্রে করতে হবে। ঘোড়া পোকার জন্য অ্যাসিফেট ও ফেনভেলারেট ১ মিলি. করে আর ল্যাদা পোকার জন্য নোভালিউরন ১ মিলি. প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া হলুদ মাকড়ের জন্য প্রোপারজাইট (২ মিলি./লি.) ও লাল মাকড়ের জন্য ফেনাজকুইন (২ মিলি./লি.) ব্যবহার করা যেতে পারে। গোড়াপচা আর হুগলী উইল্ট হল পাটের প্রধান রোগ। যে জন্য শুরুতেই বীজ শোধন করতে হবে কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম/লি.) দিয়ে। পরে কপার অক্সিক্লোরাইড (৪ মিলি./লি.) বা কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম/লি.) স্প্রে করা দরকার। এছাড়া হুগলী উইল্ট যেহেতু ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও নিমাটোডের সম্মিলিত কারণে হয়, তাই সেইসব জমিতে ১০০ কেজি জৈবসারের সাথে ১ কেজি ট্রাইকোডার্মা ও ১ কেজি সিউডোমোনাস ফ্লরোসেন্স মিশিয়ে এক বিঘা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও পাটে কালো কালো ক্ষত বা অ্যানথ্রাকনোজ দেখা দিলে গোড়াপচার মতই কার্বেন্ডাজিম (২ গ্রাম/কেজি বীজ) দিয়ে বীজ শোধন করে পরে আবার কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম/লি.) স্প্রে করতে হবে।
কৃষকবন্ধুরা পাট বিক্রি করে অধিক উপার্জন করতে চাইলে নজর রাখুন এই ছয়টি বিষয়ে