কৃষিজাগরন ডেস্কঃ পশ্চিমবাংলায় বিগত ১০ বছর ধরে দেশি ধান এবং দেশজ ফসল সংরক্ষণের জন্য বহু কৃষক এগিয়ে এসছেন।জলপাইগুড়ি থেকে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত।এতে খরচ কম, সার্ভিস লাগেনা সমস্ত রকম প্রান্তিক জমিতে হয় উৎপাদনশীলতা ধারাবাহিক তাকে পুষ্টিকর এবং চাষের খরচ কম। বেশি ধানের প্রচার ও প্রসারে কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ফুলিয়া গোটা পশ্চিমবঙ্গে বিগত ২ দশক ধরে একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমবঙ্গ এই মুহূর্তে বেশি ধান উৎপাদনে গোটা ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম এবং কালো চাল-কালাভাত উৎপাদনেও ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম প্রায় ৪০০ টন।প্রায় ১০ টি জেলার দেশজ ফসল চাষ করে এইরকম ৭০ কৃষকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল বাঁকুড়ার পাঁচাল সুস্হায়ী কৃষি উদ্যোগ সমিতি এবং রায়গঞ্জের ফোরাম ফর ইন্ডিজেনাস এগ্রিকালচারাল মুভমেন্ট ।
পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম।অনুষ্ঠানে বাঁকুড়া হুগলি, হাওড়া উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর ,ঝাড়গ্রাম উত্তর দিনাজপুর,নদীয়া জেলার কৃষক প্রতিনিধিরা যোগ দেন।বাঁকুড়ার পেতাজোড়া গ্রামের সুস্থায়ী কৃষি বিকাশ উদ্যোগের প্রাঙ্গনে এই আয়োজন।উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দেশি ধান এর এবং জৈব কৃষির অন্যতম প্রবক্তা ও প্রাক্তন উপকৃষি অধিকর্তা ডঃ অনুপম পাল, ভারত বীজ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক শ্রী জ্যাকব নেল্লীথানম, মধ্যপ্রদেশের সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থার গবেষক ও বীজ সংরক্ষক শ্রী সৌমিক ব্যানার্জি, ওয়েলথ হাংগার এনজিওর শ্রী অংশুমান দাস এবং জৈব কৃষিতে উৎসাহ কারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।আলোচনার সঞ্চালক ছিলেন ডঃ অনুপম পাল।উদ্বোধনী ভাষনে শ্রী নেল্লীথানম ভারত সরকারের বীজ সংরক্ষণ নিয়ে নেতিবাচক নীতি, প্রখ্যাত ধান গবেষক ডক্টর রিচারিয়ার উপর সরকারী নির্যাতন, পিপিভিএফ আরএ ও ভারত জুড়ে বীজ বাঁচাও আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।
আরও পড়ুনঃ আলু চাষে ঝুঁকি, তাই স্বল্প খরচে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে ভুট্টা চাষ জয়প্রকাশের
ডক্টর অনুপম পাল জিএম সরষে এবং সেটার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রশ্ন তোলেন এই বলে দেশজ কৃষি, সরিষার জাত-বৈচিত্র পরিবেশ , মাটি , শস্য পর্যায় , ফসল চাষের কিছু পরিবর্তন, চারা রোপন ও মিশ্র চাষ নিয়ে সম্যক ধারণা আছে তারা কখনোই জিএম ফসলের প্রয়োজন বোধ করবেন না। শ্রী সৌমিক ব্যানার্জি বিগ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং গোটা ভারতবর্ষে কিভাবে বীজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে কৃষকদের সাফল্য এবং এই রাজ্যের সাফল্য তুলে ধরেন। এই বছর আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন তাই বলে চাল ও গমকে অস্বীকার করা যাবে না।
পশ্চিমবঙ্গের অনেকগুলো জায়গাতেই মিলেটের সম্ভাবনা আছে। শ্রী অংশুমান দাস পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র ভৈরব সাইনি প্রায় ৩০ টার বেশি মিলেট নিয়ে চরিত্রায়ন করছেন এবং একটি পাবলিকেশনও করেছেন বীজ সংরক্ষণ ও বীজের বাণিজ্যিকী করণ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ করার পরে কৃষকদের বিপণনের দিকটা আলোকপাত করেন।আশার কথা বিগত ১০ বছরে বহু কৃষক এবং কৃষক সংস্থা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন জায়গাতে জৈব উপায়ে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করছেন।কলকাতাতেও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট সংস্থা গড়ে উঠেছে।রায়গঞ্জে ফিয়াম সংস্থা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে জৈব উপায়ে উৎপাদিত ফসল বিপননে।।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে কৃষি বনায়নের মাধ্যমে জমি উন্নত করা যায়?
পাঁচাল সুস্থায়ী সংস্থার পক্ষে ভৈরব সাইনি আজ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ২০০ বেশি ধান সংরক্ষণ ও চরিত্রের কাজ করছে ।ফিয়াম সংস্থাও ওই ভাবে করছে।বেতা জোড়ায় ৩২ রকমের গম ৪০ রকমের মিলিট ৩৮ রকমের তুলো এবং ভুট্টার লাগিয়ে তার চরিত্র বিশ্লেষণের কাজ চলছে। এটা গোটা পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতবর্ষে একটি অনন্য নজির।পশ্চিম মেদিনীপুরের বসু মাতা এগ্রো প্রডিউসার কোম্পানি কালো চাল এবং লাল চালের গুঁড়ো দিয়ে রেডি টু ইট বাজারে চালু শিশু খাদ্যের মতো একটি খাবার তৈরি করেছেন এবং এফ এস এস আই ও পেয়েছেন।এটা গোটা ভারতবর্ষে একটি অনন্য নজির।শিশু , আবাল বৃদ্ধ -বণিতার সকলেরই একটি উপদেয় এবং সুস্বাদু ছাতুর মত আহার।। আলোচনার শেষে পশ্চিমবঙ্গ বীজ স্বরাজ মঞ্চের প্রত্যেক জেলাভিত্তিক একটি ইউনিট হবে এবং প্রত্যেকটি জেলার নির্দিষ্ট কৃষক প্রতিনিধিকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।।