একক ফসলের চাষ না করে দুতিন রকম ফসল বিভিন্ন লাইনে বুনে মিশ্র ফসলের চাষ করা প্রয়োজন। পুরো জমির ফসল একবারে উঠবেনা। যে লাইনের ফসল উঠবে চাষ করে বা খুপি করে সেই লাইনে উপযুক্ত ফসল লাগাতে হবে। জঙ্গলে বিভিন্ন উদ্ভিদ একই সাথে বেড়ে ওঠে , প্রায় গায়ে গায়ে লেগে থাকে। এতে রোগ পোকা থাকে না, বৃদ্ধিও ভালো হয়। সেই ভাবে বিভিন্ন রকম ফসল একসঙ্গে চাষ করলে ফসলে রোগ ও পোকার উপদ্রব কম হয় এবং মোট উৎপাদন বেশী হয়।
মিশ্র কৃষিতে দুটি ভিন্ন ধর্মী ফসলের একসাথে চাষ করা হয়। মিশ্র কৃষির মধ্যেও আবার রয়েছে শ্রেণীবিভাগ। যেমন:-
১. মিশ্র ফলন:- এক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন জাতের ফসলের বীজকে একত্রে মিশ্রণ করে তারপর জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যেমন গম আর সরিষা, অড়হর আর মুগ ডাল ইত্যাদি।
২. অন্তর্বর্তী ফলন:- এই ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক জাতের ফসলের বীজ এক সাথে মেশানো হয় না, তার বদলে প্রত্যেকটি ফসলের জন্য আলাদা আলাদা লাইন করে বপন করা হয়। যেমন এক লাইনে ভুট্টা এবং এর পরবর্তী এক লাইন বরবটি, সয়াবিন, শিম কিংবা অন্য কোনো ডাল জাতীয় ফসল বপন করে তারপর আবার ভুট্টা – এইভাবে শস্য বপন করা।
কয়েকটি সাথী ফসলের নমুনা:
বেগুন ও টম্যাটোর সাথী ফসল – বরবটি/মটর/সয়াবীন/গাজর/পিঁয়াজ, রসুন। (বেগুন ও টম্যাটো এক সাথে নয়)।
ভুট্টা+সয়াবীন/বাদাম/কলাই/অড়হড়। তিল+পাট/মেস্তা। করলা+লংকা। ছোলা+তিসি। টম্যাটো+বাঁধাকপি/রসুন/গাঁদা।
অড়হর+মুগ/বাদাম/বাজরা। তিল+কলা। মিষ্টি অলু+ভুট্টা+তুলো। মাচায় পটল+নিচে লংকা।
ভুট্টা+মুগ/বরবটি/শাঁকালু/শীম। সরিষা+গম+ছোলা। জোয়ার+ভুট্টা। টক ঢ্যাঁড়স+অড়হর।
সুপারি/নারকোল+পেয়ারা/লেবু। পেঁপে/কলা+আনারস। কলা+আনারস। আম(চারা অবস্থায়)+ বিভিন্ন সবজি/ডাল শস্য
আম(বড় অবস্থায়)+হলুদ/আদা। কলা+লংকা/তিল/বরনটি।
বেগুনের/পান বোরোজের জমির চারপাশে ঢ্যাঁড়শ/কলাগাছ লাগালে সাদামাছির আক্রমণ কমে।
তবে মনে রাখবেন, একই গোত্রের ফসল এক সঙ্গে চাষ করা যাবে না। যেমন বেগুন ও টমাটো। কারন দুই ফসলের রোগ ও পোকা একই এবং আক্রমণ বেশী হবে। সম দৈর্ঘ্যের শিকড় যুক্ত ফসল এক সাথে চাষ করা যাবে না, দুটি ফসলই মাটির একই স্তর থেকে খাদ্য টানবে ফলে খাদ্যের প্রতিযোগিতা বাড়বে।
এই চাষে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সবজির উৎপাদন হয় আর বাজারে কোন না কোন সবজির চাহিদা সবসময় থাকে। তাই কৃষকেরা তা বাজারে বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
Image source - Google