ফসল উৎপাদন করে সকল কৃষকবন্ধুরাই লাভবান হতে চান। কিন্তু প্রকৃতির চোখ রাঙ্গানি অনেক সময়ে তাদের কোনো অর্থকরী ফসল চাষ করে বাড়তি দু পয়সা লাভের ইচ্ছায় বাধা তৈরি করে। যেমন গ্রীষ্মকালে প্রখর সূর্যকিরণ, জলের অভাব ও রোগ পোকার উপদ্রব- এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় খোলা মাঠে ফসল চাষ করার ক্ষেত্রে। পলিহাউসে চাষ করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
তবে পলিহাউস গড়ে তোলা অনেক খরচ সাপেক্ষ ও আমাদের রাজ্যের বেশিরভাগ কৃষক বন্ধুদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই।তাই সেক্ষেত্রে শেডনেট বা ছায়াজাল দিয়ে নির্মিত ঘরে অপেক্ষাকৃত অনেক কম খরচে উচ্চমূল্য ও গুনমানযুক্ত ফসল উৎপাদন করে অধিক ফলন নিয়ে অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব।
শেডনেট বা ছায়াজালের পরিকাঠামো (Shade net infrastructure) -
ছায়াজাল বা শেডনেট হল প্লাস্টিক (পলিথিলিন বা পলিপ্রপিলিনের) দ্বারা নির্মিত হাল্কা নমনীয় চাদর, যা দিয়ে প্রয়োজনীয় জল ও বাতাস প্রবেশ করতে পারে এবং সূর্যের আলো আংশিকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে আটকায়। এটি বিভিন্ন রঙের হতে পারে যেমন সবুজ, নীল, লাল, সাদা, কালো বা এইসব রঙের মিশ্রণ। এর ছায়াপ্রদান করার হারও বিভিন্ন হয়ে থাকে যেমন— ২৫%, ৩৫%, ৫০% ৭৫%, ও ৯০%। ৫০ শতাংশ শেডনেট শুধুমাত্র ৫০ শতাংশ সূর্যের আলো প্রবেশ করতে দেবে এবং বাকিটা প্রতিহত করবে। অনুরূপভাবে, ৭৫% শেডনেটের অর্থ হল, ২৫% সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারবে।
শেডনেট ওজনে হালকা, শক্তপোক্ত এবং সহজে সহজে ছেড়ে না ও দীর্ঘস্থায়ী হয় (৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত টেকসই হয়)। অস্থায়ী কাঠামোর মধ্যে যদি কেউ এই চাদর বিছিয়ে অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি, গরম বা ঠান্ডা, তীব্র বায়ুপ্রবাহ, শিশির, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার হাত থেকে ফসলকে সাময়িক রক্ষা করতে চান, তা তিনি অনায়াসে করতে পারেন এবং ঋতু পরিবর্তনের পরে এই শেডনেট গুটিয়ে ও গুছিয়ে রেখে দিতে পারেন। এইভাবে ব্যবহার করলে এই চাদরের জীবনকাল আরো বেড়ে যাবে।
লোহা বা জি.আই. নল/পাইপ দিয়ে শক্তপোক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী (২০-২৫ বছর) কিংবা বাঁশের সাহায্যে কম খরচে ঘরের কাঠামো তৈরি করা যায়। স্থায়ীত্ব বাড়াতে ব্যবহারের আগে বাঁশ আলকাতরা দিয়ে রঙ করতে হবে এবং গোড়ার এক মিটার ২০০ গেজের পলিথিনের ফিতা দিয়ে জড়িয়ে নিতে হবে।
শেডনেট বা ছায়াজালের ঘরের উপযোগীতা (The suitability of a shade net or shaded house) -
১) অতিরিক্ত সূর্যের আলো, তাপমাত্রা, অতিঠান্ডা, তীব্রবাতাস, অতিবৃষ্টি, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, অতিবেগুনী রশ্মির কুপ্রভাব এবং রোগ পোকা থেকে ফসলকে রক্ষা করা যায় ও সুরক্ষিত ভাবে ফসল চাষ করা যায়। পাতার বাষ্পমোচন ও মাটির বাস্পীভবন কম হয় তাই চাষে জলের প্রয়োজন তুলনামূলক কমে যায়। সার সঠিক পরিমানমত ব্যবহার করা হয়। ছায়াজালের ভেতর গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় থাকে। রোগ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
২) অসময়ে (off season) ফসল চাষ করা যায় যেমন, গ্রীষ্মকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ক্যাপসিকাম প্রভৃতি ফসল চাষ করা যাবে। সারাবছর ধরে ধনেপাতা, পালং, মূলো, জাতীয় ফসল চাষ করা যাবে। শীত ও বসন্তকালে শশা, উচ্ছে, পটল, লাউ প্রভৃতি গ্রীষ্মকালীন ফসল চাষ করা যায় এবং শীতকালে উৎকৃষ্ট গুণসম্পন্ন বিভিন্ন দামি সবজি যেমন ব্রোকলি, সবুজ ও রঙিন ক্যাপসিকাম, লাল বাঁধাকপি, চীনা বাঁধাকপি, কেল, চেরী টমাটো, ঘেরকিন, ব্রাসেলস স্প্রাউটস প্রভৃতি চাষ করা যায়।
৩) উচ্চমানের দামী ফুল-যেমন অর্কিড, গোলাপ, জারবেরা, এনথুরিয়াম, কারনেশান, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি ফুল নিশ্চিন্তে চাষ করা যায়।
আরও পড়ুন - Orchid Farming: আধুনিক পদ্ধতিতে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে অর্কিডের চাষ
এছাড়া -
-
বছরের যে কোন সময় ফুল ও সবজির উন্নতমানের চারা চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করা যায়।
-
বাহারী গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য লাল রঙের ছায়াজালের ঘরের দরকার।
-
ছায়াজাল দিয়ে তৈরী পান বরজ খুবই জনপ্রিয় কারণ এটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী হয়, পানের ফলন ও মান ভাল হয়।
আরও পড়ুন - Organic Farming: গবাদি পশুর জৈবিক কার্যাবলী মাটিকে উর্বর করে তোলে