বর্তমানে সবজি বাজারে এমন কোন সবজি নেই যার মধ্যে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। প্রতিটা সবজি, ফল বা খাদ্যশস্যতেই রাসায়নিক, কীটনাশক, ও ইনজেকশনের প্রয়োগ হয়েই চলেছে, এবং এইকারণেই হয়তো আমাদের শরীর ধীরে ধীরে শক্তিহীন হয়ে পড়ছে, আসলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টিদ্রব্যের জায়গায় প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত পরিমাণে প্রবেশ করছে। এখন এটি কৃষকদের দোষ বলবো না কোম্পানীর স্বার্থ বলবো? তবে যা হচ্ছে তা খুবই ভয়াবহ, এবং ভবিষ্যতে এটি ঘোর পরিনামের পথে এগোচ্ছে।
কীটপতঙ্গ পরিচালনা কৃষি শিল্পের একটি বড় অংশ, কারণ - কীটপতঙ্গ সঠিকভাবে পরিচালিত না করা হলে ফসলের গুণমান এবং পরিমাণ দুইই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কীটপতঙ্গ পরিচালনার ক্ষেত্রে রাসায়নিক পদ্ধতির উপর দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকদের নির্ভরতা রয়েছে, তবে বর্তমানে বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিবর্তে কৃষিতে জায়গা দখল করে নিচ্ছে জৈব চাষ। কারণ, কিছু রাসায়নিক কীটনাশকের প্রয়োগে ফসলের রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পরেও এগুলির ক্ষতিকর প্রভাব রয়ে যায়, যার প্রতিক্রিয়া পরবর্তীকালে দেখা যায় সমগ্র আবাদভূমি এবং পরিবেশের উপর ।
বায়োপেস্টিসাইড রাসায়নিক কীটনাশকের একটি প্রাকৃতিক সমাধান, বিভিন্ন ফসলের পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাকৃতিক জীবিত অণুজীব বা প্রাকৃতিক পণ্যগুলির উপর ভিত্তি করে এগুলি তৈরী হয়। ফলত পরিবেশে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই এগুলি ফসলে সুরক্ষা প্রদান করে।
কৃষিক্ষেত্রে বায়োপেস্টিসাইড ব্যবহার বৃদ্ধির ৩ টি কারণ -
১) সহজ ব্যবহার -
রাসায়নিক কীটনাশকগুলি বিষাক্ত হওয়ার কারণে এগুলি ফসলে স্প্রে করার পর জমিতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত যেতে নিষেধ করা হয়। অপরদিকে জৈবিক কীটনাশক প্রয়োগ বা ব্যবহারে এরকম কোন বিধি নিষেধ নেই। জৈবিক পণ্য ফসলে স্প্রে করলে যেহেতু কোন নির্দিষ্ট সময়ের বিধিনিষেধ নেই, সেহেতু কৃষক উত্পাদনশীলতায় অধিক সময় দিতে পারবেন।
২) প্রতিক্রিয়াবিহীন -
রাসায়নিক কীটনাশক ফসলে স্প্রে, বা মাটিতে ব্যবহারের পরে, উত্পাদিত ফসলে তার প্রভাব রয়ে যায়। যা মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর এবং অন্যান্য প্রাণীদের পক্ষেও বিষাক্ত। অপরপক্ষে জৈব কীটনাশক প্রয়োগ করলে কীট নাশের পর ফসলের উপর এর কোন ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে না।
৩) ফসলের সহ্য ক্ষমতা –
সময়ের সাথে সাথে রাসায়নিক কীটনাশকের অধিক প্রয়োগ, কীটের বিরুদ্ধে জিনগত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দীর্ঘদিন একই কীটনাশকের প্রয়োগে রাসায়নিকগুলির কার্য ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। এটি কৃষকদের জন্য একটি বড় সমস্যা, কারণ তারা তাদের ফসলের কীটপতঙ্গ পরিচালনার জন্য বিদ্যমান পদ্ধতি ছাড়া বিকল্প পদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত নয়। অপরদিকে বায়োপেস্টিসাইড এই পরিস্থিতিতে একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান, কারণ কীটপতঙ্গগুলি এতে রাসায়নিক প্রতিরোধের বিকাশ করে না, তাই এই পণ্যগুলির ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে কার্য ক্ষমতা হ্রাস পায় না।
আরও বলুন - সব্জি ফসলের কৃমির আক্রমণের সুসংহত প্রতিকার পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা
সময়ের সাথে সাথে কীটপতঙ্গ পরিচালনার এই পদ্ধতিটি কৃষি খাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়োপেস্টিসাইড মানুষের জন্য একেবারেই বিষাক্ত নয় এবং ফসল বা পরিবেশের উপরেও এর কোন ক্ষতিকারক প্রভাব নেই। বরং জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন ফসল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে মানুষ বা যে কোন প্রাণীর স্বাস্থ্যের কোন ঝুঁকি নেই। তাই আমাদের উচিত কীটপতঙ্গ পরিচালনার ক্ষেত্রে রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করা।
আরও বলুন - সরকার থেকে ভুট্টা চাষিদের জন্য জারি বিশেষ সতর্কতা, এফএডব্লিউ প্রতিরোধ