বর্তমানে ভারতে এরকম অনেকগুলি সংস্থা রয়েছে, যা ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপাদান এবং কীটনাশক তৈরিতে নিযুক্ত। এগুলি প্রত্যেক কৃষকের কাছেই প্রয়োজনীয় কৃষি উপাদান। তবে, বেশিরভাগ কৃষক তাদের খামারের জন্য সেরা এবং নিরাপদ উপাদান চয়ন করার সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। 'ভারত ইনসেক্টিসাইডস লিমিটেড' এগ্রো-কেমিক্যালস শিল্পের জগতে পরিচিত একটি নাম এবং এটি কৃষকদের উচ্চ মানের কীটনাশক ও রাসায়নিক উপাদান সরবরাহ সহ বিভিন্ন উপায়ে কৃষককে স্নাতকৃত করে তোলে। কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য, কৃষি রাসায়নিক ও তার ব্যবহারের সুরক্ষিত পরিমাণ সম্পর্কে বিশদে জানতে কৃষিজাগরনের কর্মীবৃন্দ সংস্থাটির পরিচালক মি. ধর্মেশ গুপ্ত-এর সঙ্গে কথা বলেছেন।
তাঁর কথোপকথনের কয়েকটি মূল অংশ এখানে আমাদের পাঠক এবং কৃষক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হল-
১. কৃষকদের জন্য উত্পাদিত প্রধান পণ্যগুলি সম্পর্কে এবং আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের বলুন?
১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভারত ইনসেক্টিসাইডস লিমিটেড’ এবং এর চেয়ারম্যান মি. গুপ্ত কৃষক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের কাছে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে উচ্চ মানের পণ্য সরবরাহ করা এবং তারা দুই ধরণের পণ্য উৎপাদন করে এই কাজ শুরু করেছিলেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, আজ আমাদের প্রায় ৪৫০০ জন পরিবেশক রয়েছে, ২৫০ জনের সমন্বয়ে গঠিত সেলস টিম এবং আমাদের পোর্টফোলিও তে প্রায় ৮০ টি পণ্য রয়েছে। ৪২ বছর ধরে নিরলসভাবে কোম্পানি কাজ করে চলেছে। ভারতে উৎপাদিত ধান, তুলা, সয়াবিন, এই সমস্ত ফসলের জন্য উচ্চ মানের পণ্য (ফসল বপন করা থেকে সংগ্রহ করা পর্যন্ত) কৃষকদের আমরা সরবরাহ করে থাকি।
২. আপনার কোম্পানির পণ্যগুলিতে জাপানি প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। এটি ফার্মের পাশাপাশি বাজারে কীভাবে কাজ করছে?
ভারত সংস্থা প্রধানত তিনটি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত, ভারত ইনসেকটিসাইডস লিমিটেড, ভারত কেমিক্যালস লিমিটেড এবং ভিআর এগ্রোটেকলিমিটেড। ভারত কেমিক্যালস লিমিটেড স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। তাদের প্রধান কাজ প্রযুক্তিগত পণ্য সংক্রান্ত। আজ সংস্থাটির প্রযুক্তিগত পণ্য রয়েছে ২০ টিরও বেশি। তদুপরি, সংস্থাটি বেশ কয়েকটি বিদেশী সংস্থার সঙ্গে একত্রে কাজ করেছে। আমরা উপলব্ধি করেছি যে, কৃষকদের চাহিদা শুধু উচ্চ মানের পণ্যই নয়, পণ্যের মানের সঙ্গে তাদের চাহিদা খামারের সুস্থ পরিবেশেরও। এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা জাপানিজ সংস্থা নিসান কেমিক্যাল – এর সাথে সংযুক্ত হয়েছি। বিদেশী এই সংস্থার সাথে সংযুক্ত হয়ে আজ কৃষকদের আমরা তিন ধরণের পণ্য সরবরাহ করি। সম্প্রতি, আমরা ‘মাতসুরি’ নামক এমন একটি পণ্যের প্রবর্তন করেছি, যা কীট দ্বারা ধানের ক্ষয় প্রতিরোধে কাজ করে। ইক্ষু ক্ষেতে পতঙ্গ দ্বারা ফসলের ক্ষতি ভারতবর্ষের কৃষকদের কাছে সম্প্রতি একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সংস্থাটি তৈরি করেছে ‘ইলান’, যা কীটপতঙ্গের উপদ্রব প্রতিরোধ করে ফসল কে সংরক্ষণ করে। ‘ইলান’-এর মতো, নতুন প্রযুক্তির অনেক পণ্য আমরা ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে এবং কৃষকদের সুবিধার্তে প্রচলন করেছি।‘ইলান’ সর্বাধিক জনপ্রিয় কৃষকদের মধ্যে, এটি তিনটি পর্যায়ে কাজ করে। এটি কীটপতঙ্গের আক্রমণের আগে কাজ করে; আক্রমণের পরে কাজ করে এবং রোগ মূল থেকে দূর করে। এটির আর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হ'ল এটি দীর্ঘকাল ধরে কাজ করে এবং ফসলকে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। এ কারণেই কৃষকদের গভীর বিশ্বাস রয়েছে , এর উপর । এমনকি 'কোল্ডভিলাইড'- এর নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়, মাসে একবার এটির প্রয়োগ ১৮ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি কীটনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের সুরক্ষা কিটও প্রদান করা হয়।
৩. অনেকগুলি সদৃশ পণ্য সম্প্রতি বাজারে পাওয়া যায়, এই বিষয়ে আপনার এবং আপনার কোম্পানির কী পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া ?
জাল পণ্য সম্পর্কে, আমি কিছু কথা বর্ণনা করতে চাই। প্রথমত, আপনি জেনে অবাক হবেন যে, কোনও নিষেধাজ্ঞার বাইরেই বিদেশী পণ্যগুলি আমদানি করা হয়। কিছু পণ্য ‘জৈব পণ্য’র নামে ভারতীয় কৃষকদের কাছে বিক্রি হয়। সরকারী সংস্থাগুলি এগুলির ওপর অনুসন্ধান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জড়িত। এমনকি, পরীক্ষার জন্য আমাদের পণ্যও পাঠানো হয়েছিল এবং এগুলি সমস্ত দাবি অতিক্রম করে সফল হয়। অবৈধভাবে আমদানিকৃত পণ্য সঠিক এগ্রোকেমিক্যাল শিল্পের উপর আক্রমনাত্মক প্রভাব হানছে। আপনি জানেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘ভারত তৈরি’- তে মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু এই জাতীয় অবৈধ আমদানি সাধারণ উত্পাদন ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। পণ্যগুলির উপর ভারত সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই, এবং পরিবেশগত সংস্কৃতি উপরে এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই পণ্যগুলির পরীক্ষার জন্য কোন মানদণ্ড উপলব্ধ নেই। বর্তমানে কীটনাশক প্রযুক্তিগুলিও তদন্তকারীদের সাথে আলোচনা করে এবং কীভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, সে সম্পর্কে সরকারকে অবহিত রাখে। এটি আমাদের দেশের জন্য, কৃষকদের জন্য এবং ভারতীয় শিল্পের জন্য ক্ষতিকারক। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিভাগ এবং ভারত সরকারের সাথে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
৫. ভারত ইনসেক্টিসাইডস সংস্থার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী কী?
আমাদের চেয়ারম্যান এসএন গুপ্ত কৃষকদের কষ্ট উপলব্ধি করেছেন। আজ, আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি যে, আমাদের কোম্পানির উত্পাদিত প্রতিটি পণ্যই কৃষকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। তদুপরি, আমরা চাই আমাদের ফিল্ড টিম এর সহায়তায় ভবিষ্যতের কৃষিক্ষেত্রের সমস্যাগুলিকে উপলব্ধি করে পরিবেশের প্রতি ইতিবাচক প্রভাবদায়ক পণ্য সরবরাহ করতে এবং আমি সুনিশ্চিত যে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে, আমরা আরও ভাল পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হব, যা কৃষকদের উপার্জন ক্ষমতাকে আরও উন্নত করবে।
তথ্যসূত্র - কৃষি জাগরণ কর্মীবৃন্দ
অনুবাদ - স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)