ভারত বিশ্বের বৃহত্তম ধান উত্পাদক অঞ্চল, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ধানের ২৫% ভারতে উত্পাদিত হয়। ধান হল ভারতের প্রধান ফসল, ভারত দেশের সবচেয়ে বড় ধান চাষের ক্ষেত্র, কারণ এটি অন্যতম প্রধান খাদ্য শস্য। ভারতের ৬০% এরও বেশি মানুষ কৃষিক্ষেত্র্বের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন।
তবে কৃষিকার্য এখন আর পূর্বের মত সহজ নয়। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকতা আসার সাথে সাথে, রোগের প্রকোপও বেড়ে চলেছে। যেমন, ধান ফসলে অনেক কীট এবং রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে, যা ফসলের ফলন এবং গুণমানকে প্রভাবিত করে।
কৃষকরা ধানের আবাদে বিভিন্ন পোকামাকড়, পাতামোড়া পোকা, বিপিএইচ, গন্ধী পোকা এবং ঝলসা রোগ –এর মতো বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। বাদামী দাগ ধানের ফসলের ক্ষতি করে, এই সমস্ত পোকামাকড় এবং রোগ ধান ফসলের সরাসরি ক্ষতি করে। একটি অনুমান অনুযায়ী জানা গেছে, এই পোকামাকড় এবং রোগের কারণে ফলন ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আজ আমরা ব্রাউন হপার - ধানের একটি প্রধান কীট সম্পর্কে কথা বলব, যা কৃষকদের জন্য আর্থিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা। ধান ফসলে হপার-এর প্রধানত দু'টি প্রজাতির আক্রমণ হয়। এর মধ্যে একটি হল ব্রাউন হপার (BPH) এবং অন্যটি ডাব্লুবিপিএইচ (WBPH), তবে এই দুই প্রজাতির মধ্যে, ব্রাউন হপার (BPH) ভারতে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই কীটটির বৈজ্ঞানিক নাম নীলাপর্বত ল্যাগেন্স। এটি হেমিপ্টেরার ডেলফ্যাসিডিস বংশের অন্তর্ভুক্ত।
এই পোকা হালকা অথবা গাঢ় বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। এর দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ মিমি। এটি
ধানের ফসলে জলের পৃষ্ঠ থেকে কান্ডের ২-৩ ইঞ্চি উপরে দেখা যায়, ধানের গাছের কাণ্ড থেকে রস শোষণকারী এই পোকা ফ্লোয়েম এবং জাইলেম বন্ধ করে দেয়। এর আক্রমণে ফসল শুকানোর আগেই উদ্ভিদের পাতাগুলি বাদামী এবং কমলা-হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। এই অবস্থা ‘হপার বার্ন’ নামে পরিচিত, যা ফসলকে বিনষ্ট করে দেয়। এটি প্রাথমিকভাবে এক জায়গায় থাকে, তবে ধীরে ধীরে তা সম্পূর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
ফসলে এই কীটের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সমগ্র ফসল বিনষ্ট হয়ে যায়। এই কীটের প্রাদুর্ভাব আর্দ্র আবহাওয়াতে এবং যেখানে নাইট্রোজেন সার অধিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যায়, সেখানে বেশি দেখা যায়। এই কীট ভাইরাসজাতীয় রোগও বিস্তার করে থাকে।
প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী পোকা প্রায় ২১ দিনের জন্য ডিম দেয়। স্ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরা কেটে ডিম পাড়ে। এরা এক সাথে ২০০ থেকে ৩৫০ পর্যন্ত ডিম দেয়, ডিম নলাকার আকৃতির হয়।
ডিম থেকে জন্ম নেওয়ার পর এরা শুরুতে থাকে শুভ্র বর্ণের, দৈর্ঘ্য ৬ মিমি। পাঁচটি দশায় সম্পন্ন হয় এদের এই কালচক্র। এদের শৈশবকালকাল ১২-১৫ দিন, এই পোকার সম্পূর্ণ জীবনচক্র ২০-২৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়। এক বছরে ৫-৬ প্রজন্ম পাওয়া যায়।
ব্রাউন হপারের সমাধান কেবল তখনই সম্ভব, যখন আমরা এটি সঠিক সময়ে সনাক্ত করতে সক্ষম হই এবং ফসলে ভাল মানের ওষুধ ব্যবহার করি। একবার এর সংখ্যা বাড়লে বারবার স্প্রে করলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না এবং ধানের ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
বিভিন্ন রাজ্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সুপারিশ অনুসারে, প্রতিস্থাপনের প্রায় এক মাস পরে, ক্ষেতের কয়েকটি গাছ সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ২ বা ৩ বার করে পরীক্ষা করা উচিত। সর্বনিম্ন প্রতি পাঁচটি হপার যদি জলে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়, তবে ফসলকে কীটনাশক দিয়ে চিকিত্সা করা উচিত। ব্রাউন হপারকে প্রতিরোধ করার জন্য, প্রায় সমস্ত ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ লিটার জলে ১২০ গ্রাম পাইমোট্রোজেন মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছে। প্রয়োজনে পুনরায় স্প্রে করতে হবে। আরও কার্যকর ফলের জন্য, আপনার গাছের গোড়ার দিকে নাকপ্যাক স্প্রেয়ার ব্যবহার করে স্প্রে করুন।
এই সুপারিশকে মনে রেখে, বছরের সবচেয়ে বড় ফসফ্যাটিক সারের বৃহত্তম সংস্থা করোমন্ডল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, নিজেদের আর অ্যান্ড ডি (R&D)-তে পাইমেট্রোজিন (অ্যাসট্রা) নামক এই ওষুধটি তৈরি করেছে এবং যা আমরা অ্যাসট্রা নামে ভারতের কৃষকদের জন্য সরবরাহ করছি, এই ড্রাগটি তৈরি সম্পূর্ণরূপে দেশীয় প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে, তাই আমরা ভারতে কৃষকদের একর প্রতি ১২০ গ্রাম হারে এই ওষুধটি ব্যবহার করার অনুরোধ করি।
এই বছর, করোমন্ডল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এই ওষুধটির প্রচারের জন্য একটি অ্যাস্ট্রা ফটো প্রতিযোগিতা পরিচালনা করছে, যার মধ্যে যে কোনও কৃষক কীটনাশক বিক্রেতাদের দোকানগুলিতে অস্ট্রার ফটো স্ট্যান্ডের সাথে একটি ছবি তুলে উল্লিখিত হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে প্রেরণ করে তার নিবন্ধকরণটি সম্পন্ন করতে পারবেন। এই সমস্ত ফটোগুলির মধ্যে ১০০ টি নির্বাচিত ছবি করোমন্ডল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড সংস্থা দ্বারা পুরস্কৃত এবং সম্মানিত করা হবে।