বর্তমানে এমন অনেক সংস্থা রয়েছে, যা কৃষি সম্পর্কিত পণ্য তৈরি করছে, কৃষিক্ষেত্রে ফসলের জন্য এই পণ্যগুলি খুবই কার্যকর। একইভাবে, ‘ইন্ডোগলফ ক্রপ সায়েন্স লিমিটেড’ তার পণ্যগুলির মাধ্যমে কৃষকদের পরিষেবা দিয়ে থাকে। এই সংস্থার পণ্যগুলি খুবই কার্যকর এবং পাশাপাশি সাশ্রয় মূল্যেও পাওয়া যায়। এই সংস্থার উদ্দেশ্য হল, কৃষকদের কাছে কৃষি সংক্রান্ত সকল তথ্য পৌঁছে দেওয়া, যাতে তারা এই তথ্যগুলির সহায়তায় অর্থনৈতিক দিক থেকে নিজেদের আরও সক্ষম করে তুলতে পারে। এই সংস্থাটি কৃষকদের মঙ্গলার্থে গ্রামীণ, অনুন্নত অঞ্চলগুলিতে কাজ করে চলেছে। বর্তমানে ‘ইন্ডোগলফ ক্রপ সায়েন্স লিমিটেড’ কি ধরণের পণ্য তৈরি করছে এবং এটি কিভাবে কৃষকদের সহায়তা করছে, তা জানতে কৃষি জাগরণের কর্মীবৃন্দ এই সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ড.পি.সি.রায় –এর সঙ্গে কথা বলেছেন।
সেই কথোপকথনের কিছু অংশ –
১. আপনার কোম্পানির সম্বন্ধে কিছু বলুন ?
এই সংস্থার প্রথম চেয়ারম্যান প্রয়াত ড. শ্রী কৃষ্ণ দাশ আগরওয়ালের দূরদর্শনের প্রশংসা করে পি.সি. রাই বলেন যে, ভারত যখন কৃষিজাত পণ্যের দিকে অপেক্ষাকৃত কম অগ্রসর ছিল, তখন এই সংস্থার শুরু হয়েছিল। সেই সময় আমাদের খাবারের জন্য আমেরিকার (পিএল ৪৮০) গমের উপর নির্ভর করতে হত। ১৯৬০ সালে সেই সময় ড. স্বামীনাথন ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত এবং সবুজ বিপ্লবকে অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।ড. রাই ১৯৬৫ সালে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মি. কৃষ্ণ দাস আগরওয়াল, চেয়ারম্যান মি. ও.পি. আগরওয়াল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. সঞ্জয় আগরওয়াল যে যাত্রা শুরু করেছিলেন এবং তাদের হাত ধরে কোম্পানির অতিক্রান্ত যাত্রাপথের কাহিনী খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেন। তিনি আরও বলেছেন যে, ইন্ডোগলফ ক্রপ সায়েন্স - এর উদ্দেশ্য শুধু কৃষিজমি পুষ্ট করে তোলাই নয়, এর সাথে কৃষকদের শক্তিশালী ও সক্ষম করে তোলাও এর লক্ষ্য। এর সংস্থাটির আরেকটি উদ্দেশ্য কৃষকদের সাথে ব্যবসা না করে তাদের পরিবারের অংশ হিসাবে বিবেচনা করা এবংসমাজের মূলধারার সাথে কীভাবে সংযোগ স্থাপন করতে হয় তা শ্রদ্ধার সাথে তাদের শিখিয়ে দেয় এই সংস্থাটি।
২. আপনার কোম্পানির পণ্য সম্পর্কে বলুন, যা কৃষককে ধনী ও স্ব-সম্মানিত করেছে ?
আমরা এমন সময়ে পণ্য তৈরি শুরু করি, যখন খাদ্যের উত্পাদন ক্ষমতা এবং শস্যের ফসলের পরিমাণ খুব কম ছিল। সেই সময়ে উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল, তাই আমরা মাটির অভ্যন্তরে উত্পাদনশীলতা বাড়াতে পুষ্টির ব্যবহার শুরু করি। আমরা কৃষকদের কাছে সেই ধরনের পুষ্টিজাত পণ্যগুলি সরবরাহ করি, যা উদ্ভিদগুলির দ্বারা দ্রুত শোষিত হয়।
আমরা এটির প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছি, কারণ বাইরে থেকে সার আমদানি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমরা প্রথমে জিঙ্ক তৈরি করেছি, যা জিঙ্ক সুপার হিসাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। কৃষকরাও এটির প্রভূত প্রশংসা করেছিলেন। সেই সময়, মাটিতে দস্তার উপলব্ধতা খুব কম ছিল এবং ফসলে দস্তার ঘাটতি ছিল। যদিও এটি একটি ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদান, তবে এটি ফসলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারপরে আমরা ধীরে ধীরে স্প্রে পদ্ধতিতে আসি। তখন থেকে আমরা বিশেষত বায়োফার্টিলাইজার সম্পর্কিত, বায়ো-প্রোডাক্টগুলিতে কাজ শুরু করি, যেমন জিঙ্ক সুপার গোল্ড, রোটোমেক্স গোল্ড, রোটোম আল্ট্রা প্রভৃতি। আমরা সম্প্রতি ‘এম্পায়ার’ নামে একটি পণ্য চালু করেছি, যা জৈব পণ্য। এটি অবিলম্বে বেশিরভাগ শস্যকে স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করে, যাতে ফসল পোকামাকড় এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
আজ আমরা ‘‘এম্পায়ারের’’ জন্য এর ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি স্ট্যাম্প দিই। ইন্ডোগলফ তাদের পণ্যে গ্যারান্টি স্ট্যাম্প সরবরাহ করে এবং এটি ভারতে এর প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে। গ্যারান্টি স্ট্যাম্প কেবলমাত্র সেই সংস্থা প্রদান করতে পারে, যে সংস্থা তার পণ্য সম্পর্কে সৎ এবং কৃষকদের প্রতারণা করে না। বর্তমানে, আমাদের অনেক পণ্য সফল এবং সেগুলি তাদের নিজস্ব নামের অধীনে বিক্রি হয়। এই পণ্যগুলির কারণেই আজ ইন্ডোগল্ফ একটি পরিচিত ব্র্যান্ড এবং এই কারণেই আমাদের অনেক পণ্য কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয়। অনেক সময় কৃষকদের মনে থাকে না পণ্যগুলির নাম, তবে তারা এটিকে সনাক্ত করতে কোনও চিহ্ন মনে রাখেন। কৃষকদের এই অবস্থার কথা বিবেচনা করে, আমাদের দূরদর্শী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিঃ সঞ্জয় আগরওয়াল ‘ইন্ডোগলফ ক্রপ সায়েন্স লিমিটেড’ কে 'ঘুড়ি' লোগো দিয়েছিলেন।
৩. ইন্ডোগলফ -এর কোন পণ্য মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে?
জিঙ্ক সুপার গোল্ড, রোটোমেক্স আল্ট্রা, রোটোমেক্স গোল্ড প্রভৃতি পণ্যগুলি পুষ্টি প্রদানের কাজ করে মাটিকে উর্বর করে তোলে। এই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হয়ে উদ্ভিদগুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কিছু সার বা পুষ্টি যৌগ কৃষক তার ফসলে প্রয়োগ করে থাকেন, কিন্তু উদ্ভিদের শিকড় পর্যন্ত তারা পৌঁছয় না। তবে এই পণ্যগুলির বৃহত্তম গুণটি হ'ল, উদ্ভিদের শিকড় পর্যন্ত এই পুষ্টি পরিবহন করা। এই জন্য আমরা রোটোমেক্স গোল্ড বা রোটোমেক্স আল্ট্রা প্রচলন করেছি, যা পুষ্টি উপাদানগুলি সংগ্রহ করে এবং তা উদ্ভিদের শিকড় পর্যন্ত নিয়ে যায়, যাতে উদ্ভিদ এর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হতে পারে। এই সমস্ত পণ্যগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্তমানে এই পণ্যগুলি কৃষকদের জন্য খুব কার্যকর হিসাবে প্রমাণিত।
৪. বর্তমানে ইন্ডোগলফ –এর কয়টি পণ্য বাজারে পাওয়া যায়?
সম্প্রতি সংস্থাটির ১০৩ টি পণ্য রয়েছে, যা কৃষকদের কাছে সহজে উপনীত হয়। এই পণ্যগুলি কে সাধারণত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি কৃষিকে কীভাবে রাসায়নিক মুক্ত করা যায়, সে প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। সুতরাং, আমাদের সেই দিক অনুসরণ করে কাজ করা উচিত। আমি বিশ্বাস করি যে, ইন্ডোগলফ দীর্ঘ সময় ধরে এই দিকটি অনুসরণ করেই কাজ করে চলেছে। আমরা জিঙ্ক সুপার গোল্ড, রোটোমেক্স গোল্ড দিয়ে শুরু করেছিলাম এবং এখন আমাদের এরকম ২৫ ধরণের পণ্য আছে। আমরা আরো সতর্কতার সাথে রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করছি। যে কোনও পোকামাকড় বা রোগকে তাত্ক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে এর উপদ্রব বৃদ্ধি না পায়, তাই আমরা রাসায়নিক সঠিক পরিমাণে ব্যবহারের পরামর্শ দিই।
৫. কৃষকদের তাদের ফসল রক্ষা করতে কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা উচিতএবং আপনার সংস্থার এক্ষেত্রে ভূমিকা কি?
এর জন্য, আমাদের একটি দল রয়েছে, যা গ্রামে গ্রামে কৃষকদের কাছে গিয়ে জানায় যে, কী ধরণের সার বা রাসায়নিক কীভাবে ব্যবহার করা উচিৎ। সঠিক সময় এবং সঠিক পরিমাণে যদি একটি কৃষি রাসায়নিক ঔষধ স্প্রে না করা হয় বা মাটিতে সংযুক্ত না করা হয়, তাহলে পরে এটি ফসলের ক্ষতি করে। যদি কৃষি রাসায়নিক ঔষধ সঠিক সময়ে ফসলে প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে এটি ভুল এবং যদি কৃষি রাসায়নিক ঔষধ সঠিক পরিমাণে ফসলে প্রয়োগ না করা হয়, তাহলেও এটি ভুল। এছাড়াও, যদি মাটিতে প্রয়োগ করা হয়, এমন কৃষি রাসায়নিক আমরা স্প্রে করি তবে এটিও ভুল। তাই মাটিতে সঠিক উপায়ে সারের ব্যবহার এবং ওষুধের প্রয়োগ সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করা জরুরি এবং এ জন্য আমাদের দল ক্রমাগত কৃষকদের সাথে নিযুক্ত থাকে। ভারতের একটি সরকারী সংস্থাও এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে এই কাজটি একটু দ্রুত সম্পন্ন হওয়া দরকার। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের কৃষকেরা অত্যন্ত নিরীহ এবং তার ফসলের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, কোনরকম প্রতারণা না করে তাদের সেগুলি দেওয়া উচিত।
৬. ভারতে আপনার উত্পাদন কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত? দেশ জুড়ে আপনার কতগুলি বিপণন শাখা আছে ?
হরিয়ানায় আমাদের দুটি উত্পাদন কেন্দ্র রয়েছে, আরেকটি রয়েছে জম্মুতে, সম্প্রতি রাজস্থানে আমরা একটি জমি কিনেছি এবং শীঘ্রই সেখানে উত্পাদন কেন্দ্র প্রচলন করা হবে। বর্তমানে আমাদের সারা দেশ জুড়ে ৩ টি উত্পাদন কেন্দ্র এবং ২৭ টি বিপণন শাখা রয়েছে। আমরা চাইলে এখান থেকেই কৃষকদের আমাদের পরিষেবা দিতে পারতাম, তবে সঠিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমাদের দরকার তাদের কাছাকাছি থাকার। এটি দেখার জন্য, আমাদের প্রতিটি শাখায় ১৫-১৫ থেকে ২০-২০ এর একটি টিম রয়েছে যারা কোম্পানির একটি স্থায়ী দল। ৪০-৫০ জন ছেলে যৌথ-সম্প্রচার ব্যবস্থা দ্বারা তাদের সাথে কাজ করে। আমরা আমাদের পণ্যগুলি নিজেরা বিক্রি করি না, তবে আমরা ব্যবসায়ী এবং বিতরণকারীর মাধ্যমে আমাদের পণ্যগুলি বিক্রি করি।
৭. আপনার সংস্থার লক্ষ্য কী?
আমাদের প্রধান লক্ষ্য কৃষকের প্রথম মনোনীত হয়ে ওঠা। দ্বিতীয়ত, যাদের সাথে আমরা সংযুক্ত এবং যাদের জন্য আমরা কাজ করছি, সেই কৃষকদের সেরা মানের পণ্য কীভাবে আমরা সরবরাহ করতে পারি, তা দেখা আমাদের লক্ষ্য। তাদের শস্যের গুণমান রক্ষার পাশাপাশি যাতে ফলনেরও বৃদ্ধি হয় এবং তাদের অবস্থার উন্নতি হয় সে বিষয়ে তাদের আমরা সাহায্য করে থাকি । যদি তাদের আয় বৃদ্ধি হয়, তবে তাদের জীবনেও অনেক পরিবর্তন আসবে। অন্য দেশের কৃষকেরাও আমাদের কাছ থেকে পণ্য নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সংস্থাটির মূল লক্ষ্য, কৃষকদের অবস্থার উন্নতি করার পাশাপাশি উত্পাদন কেন্দ্রেরও বৃদ্ধি করতে হবে। এসবের পাশাপাশি, আমাদের সংস্থা গ্রামীণ পরিবেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও মনোনিবেশ করছে। এ জন্য, সংস্থাটি পণ্যের সাথে তরল হ্যান্ডওয়াশ এবং একটি 'সুরক্ষা কিট' প্রদান করছে।
তথ্যসূত্র - কৃষি জাগরণ কর্মীবৃন্দ
অনুবাদ - স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)