ভারতের জনসংখ্যার পরিমান প্রচুর হওয়ায় জমির উপর জনসংখ্যার চাপ অত্যন্ত বেশি। তাই ভারতে একই জমিতে প্রচুর শ্রম বিনিময়ের মাধ্যমে সারা বছর ধরে ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে । অতি সহজেই কৃষির প্রয়োজনীয় শ্রম পাওয়া যায় বলে কৃষি কাজে তেমন কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয় না ।ফলে নাগরিক কেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনার অভাবে দেশের যে ক্ষেত্রটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,সেটা নিঃসন্দেহে কৃষি। ভারতে প্রায় সব কটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের জন্য়ই সরকার একাধিক বার বিস্তারিত নীতি প্রণয়ন করেছে –ব্যতিক্রম শুধু কৃষি ।
পশ্চিমবঙ্গের একটি কৃষিজীবী পরিবারের গড়পড়তা আয় মাসে ৬০৮৪ টাকা, যেখানে সর্বভারতীয় গড় ১০,২১৮ টাকা— পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেকটা বেশি। এই আয়ের পুরোটা যে কৃষি থেকেই আসছে, তা নয়। বস্তুত কৃষি থেকে আসছে অর্ধেকেরও কম, বাকিটা আসছে কৃষির বাইরে থেকে— মজুরি বা বেতন থেকে হতে পারে, বা নিজস্ব ব্যবসা থেকে। তা হলে, এই যে শুনি এ রাজ্য ধান উৎপাদনে প্রথম স্থানে, আনাজ উৎপাদনেও প্রথম, সেগুলি কি ভুল? না, ভুল নয়। ২০১৯-২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে মোট ধান উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টন, যা রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গে কৃষি উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ভারতীয় গড় হারের থেকে অনেকটাই বেশি। গোটা দেশে যে হার ১.৬ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গে তা ৩.৩ শতাংশ।
আরও পড়ুনঃ সোলার পাম্প থেকে এগ্রি ফিডারে পরিবর্তন পিএম কুসুম যোজনা (PM-Kusum Update)
আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে অভ্য়ন্তরীণ উৎপাদনে কৃষির অনুপাত গত কয়েক দশকে অতি দ্রুত হারে হ্রস পাচ্ছে । আমেরিকার জিডিপি-র মাত্র এক শতাংশ আসে কৃষি থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে চার শতাংশ । কিন্তু,আমেরিকায় বা ইউরোপের দেশগুলিতে নিয়মিত কৃষি নীতি প্রণীত হয়। আমেরিকায় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কৃষি নীতি তৈরি হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য় দেশগুলি প্রতি দশকে এক বার অভিন্ন কৃষি নীতি গ্রহন করে । কিন্তু ভারতে, যেখানে এখনও জনসংখ্য়ার অর্ধেকেরও বেশি প্রত্য়ক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল, সেখানে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য়গুলির সঙ্গে আলোচনার মাধ্য়মে কৃষি নীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে উঠতে পারেনি।
প্রাচীন ভারতে কৃষিই ভারতের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা ছিল । আর্যসভ্যতা ছিল গ্রামকেন্দ্রিক এবং আর্য অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি । ঋকবৈদিক যুগে পশুচারণই ছিল আর্যদের প্রধান উপজীবিকা এবং গো-সম্পদ ছিল ধনসম্পত্তির মাপকাঠি । ধনী ব্যাক্তিকে বলা হত ‘গোমৎ’ ।১৯৮০ দশকের শেষ থেকে ভরতের আর্থিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ভারতীয় কৃষির উৎপাদনশীলতা কেন এত কম ? তার অন্য়তম কারণ অপ্রতুল সেচ পরিকাঠামো । এখনও ভারতের মোট চাষের জমির অর্ধেক সেচের আওতার বাইরে রয়েছে । কেন এত জমি সেচের আওতার বাইরে থেকে গিয়েছে ? তার প্রধান কারণ,কৃষি সহায়ক পরিকাঠামো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সেই অপ্রতুলতার কারণ হল,কৃষিতে বিনিয়োগের অভাব। কৃষিক্ষেত্র যে দীর্ঘমেয়াদি অবহেলার শিকার হয়েছে,তাতে ক্ষেত্রটি ক্রমেই অকুশলী হয়ে পড়ছে, যার বোঝা বহন করতে হচ্ছে কৃষকদের । একথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই, যতদিন না যথাযথ নীতির মাধ্য়মে এই অকুশলতা দূর করা যাচ্ছে,তত দিন অবধি জীবন ও জীবিকার যুদ্ধে কৃষকের জয় নিশ্চিত করা যাবে না।