সমগ্র বিশ্ব কোভিড -১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই সময় অনেকেই তাদের বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত। তবে সরকার-সমর্থিত ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের জন্য এখন বিনিয়োগ করা সর্বোত্তম। ২০২০ সালের এপ্রিল-জুনে সরকার ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার পরেও, এমন কয়েকটি স্কিম রয়েছে, যা বেশ লাভজনক।
ভারত সরকার সমর্থিত ছোট ছোট সঞ্চয় প্রকল্প রয়েছে পোস্ট অফিসে। পোস্ট অফিসে টার্ম ডিপোজি্ট, রেকারিং ডিপোজি্ট, ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যেমন সুরক্ষিত, তেমনই লাভদায়কও। উক্ত প্রকল্পগুলি মধ্য-মেয়াদী বিনিয়োগের বিকল্প হিসাবে কাজ করে; যার মধ্যে, বিনিয়োগকারীদের তাদের আমানত কমপক্ষে ৫ বছরের জন্য সক্রিয় রাখতে হবে। এতে আপনি প্রতি মাসে ন্যূনতম (প্রকল্পের ভিত্তিতে ১০০/৫০০/১০০০ টাকা) টাকা জমা দিয়ে ভাল পরিমাণ অর্থ সুদ সমেত ফেরত পাবেন এবং আপনার অর্থও এতে নিরাপদ থাকবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, স্কিমগুলি সম্পর্কে বিশদে -
১) ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (National Savings Certificates)-
যদি আপনি পাঁচ বছরের মেয়াদে আমানত করতে চান সে ক্ষেত্রে সেরা পছন্দ হতে পারে পোস্ট অফিসের ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট। এই স্কিমে বর্তমানে ৬.৮ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যচ্ছে। যেখানে ব্যাংকে ৫ বছর মেয়াদের আমানতে সুদের হার অনেক কম। পাঁচ বছর মেয়াদের স্থায়ী আমানতে মাত্র ৫.৪ শতাংশ সুদ দেয় স্টেট ব্যাংক। এ কথা ঠিক, পরিষেবা এবং প্রযুক্তির দিক থেকে পোস্ট অফিসের তুলনায় ব্য়াংকগুলি অনেক এগিয়ে। কিন্তু NSC-র ক্ষেত্রে নিয়মিত পরিষেবার প্রয়োজন নেই বললেই চলে। সাধারণত এটি একবারই কিনতে হয় এবং একবার ভাঙাতে হয়।
২) কিষাণ বিকাশ পত্র (Kisan Vikas Patra) -
কিষাণ বিকাশ পত্র মানুষকে দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করতে সহায়তা করে। KVP ভারত সরকার ২০১৪ সালে পুনরায় এটি প্রচলন করেছে। বর্তমান সুদের হার বার্ষিক ৭.৩ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হয়। এই প্রকল্পে বিনিয়োগের সর্বাধিক সীমা নেই।
৩) সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্প (Sukanya Samriddhi Yojana) -
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্পটি কন্যা সন্তানদের ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য প্রচলন করা হয়েছিল। এই প্রকল্পটি ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রচারের অধীনে চালু করেছিলেন। দশ বছর বয়স হওয়ার আগেই তার জন্ম থেকে যে কোনও সময় কন্যা সন্তানের নামে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। এই প্রকল্পের জন্য সর্বনিম্ন বিনিয়োগের পরিমাণ প্রতি বছর ১০০০ টাকা।
৪) সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS) -
আপনি যদি প্রবীণ নাগরিক হন, সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের পরিবর্তে আপনার অগ্রাধিকার হতে পারে পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (Senior Citizen Savings Scheme)। এই প্রকল্পে গচ্ছিত আমানতে ৭.৪ শতাংশ সুদ পাওয়া যাচ্ছে। কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কথা ছেড়েই দিন, বড় কোনও বেসরকারি ব্যাংক এই হারে সুদ দিচ্ছে না। প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে ৫ বছর মেয়াদের স্থায়ী আমানতে মাত্র ৫.৯ শতাংশ সুদ দিচ্ছে SBI। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা স্বল্প সঞ্চয়ে ভালো রিটার্ন চাইলে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম বেছে নিতে পারেন।
৫) RD Scheme -
পাঁচ বছরের পোস্ট অফিস পুনরাবৃত্তি আমানত অ্যাকাউন্ট (আরডি) এই অ্যাকাউন্টে ৬.৯ শতাংশ সুদের হার দেওয়া হয় পি.এ. (ত্রৈমাসিক যৌগিক) এই অ্যাকাউন্টে সর্বাধিক জমার সীমা নেই। পোস্ট অফিস আরডি অ্যাকাউন্টটি একজন নাবালিকের নামে খোলা যেতে পারে এবং ১০ বছর বা তার বেশি বয়সের নাবালক অ্যাকাউন্টটি খুলতে এবং পরিচালনা করতে পারে। এক বছরের পরে ভারসাম্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রত্যাহারের অনুমতি রয়েছে।
৬) পোস্টঅফিস মাসিক আয় প্রকল্প (MIS) -
যে কোনও ভারতীয় নাগরিক পোস্ট অফিসের মাসিক আয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই স্কিমে কোনও একক বা যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন বিনিয়োগকারী। ১০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে হলেই বাচ্চার নামেও এই স্কিমে বিনিয়োগ করা যেতে পারে তবে তার সাথে পিতামাতার নাম রাখতে হবে।
পোস্ট অফিসের মাসিক আয় স্কিমটিতে, আপনি একক অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ সাড়ে চার লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে একটি যৌথ অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ নয় লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এই প্রকল্পের আওতায় দু'জনের বেশি লোক যৌথ অ্যাকাউন্টও খুলতে পারবেন। পোস্ট অফিসের এই প্রকল্পে সুদের হার ৬.৬ শতাংশ।