পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রকল্প, যেগুলির মূল উদ্দেশ্যই হল কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহিত করা ও তাদের ভালো অর্থ উপার্জনে সহায়তা করা। কৃষকবন্ধুরা জেনে নিন, কি কি প্রকল্প রয়েছে তাদের জন্য সরকারের তরফ থেকে বর্তমানে -
ক) বাংলা কৃষি সেচ যোজনা -
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে, রাজ্য সরকার একটি মাইক্রো-সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, যা জল সম্পদ সংরক্ষণ করবে, আবার কৃষকদের বেশী ফসল উৎপাদনেও সহায়তা করবে। এই প্রকল্পের নাম ‘বাংলা কৃষি সেচ যোজনা’।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য (The goal of this scheme-Bangla Krishi Sech Yojana)–
১) কৃষি উন্নয়ন - এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল দরিদ্র কৃষকদের বিনামূল্যে ফসল সেচ সুবিধা সহ তাদের ফসল চাষ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করা।
২) মাইক্রো সেচ সুবিধা স্থাপন - এই প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের সরকার কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্র-সেচ সুবিধা স্থাপন করেছে। এটি কৃষিক্ষেত্রে জলের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে, সর্বোপরি জলের অপচয় রোধে কার্যকর হবে।
৩) সেচ পদ্ধতি - কর্তৃপক্ষ দুটি নির্দিষ্ট সেচ কৌশল চিহ্নিত করেছে। একটি স্প্রিঙ্কলার সেচ এবং অন্যটি ড্রিপ সেচ। এই দুটি পদ্ধতিই জলে সংরক্ষণে সহায়তা করবে। ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা ইনস্টল করতে ব্যয় হয় প্রায় ৭০,০০০ টাকা এবং স্প্রিঙ্কলার সেচ মেশিন ইনস্টল করতে ব্যয় প্রায় ২০,০০০ টাকা।
৪) ফ্রি মেশিন ইনস্টলেশন - রাজ্য সরকার এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত যে, দরিদ্র কৃষকদের মেশিনগুলি ইনস্টল করার জন্য এত টাকার ব্যবস্থা করা অসম্ভব। সুতরাং, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সমস্ত মেশিন বিনামূল্যে প্রদান এবং ইনস্টল করা হবে।
৫) শস্যের ধরণ – খাদ্যশস্যের চাষ ছাড়াও, এই সেচ প্রকল্পটি শাকসবজি এবং ফল আবাদের জন্যও ক্ষেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সরবরাহ করবে।
৬) বাস্তবায়ন অঞ্চল – এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও জঙ্গলমহল জেলা তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই স্কিমটি মূলত সেই অঞ্চলে প্রয়োগ করা হবে, যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম।
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্যই এই প্রকল্পের প্রচলন করা হয়েছে। তবে, এই প্রকল্পটি রাজ্য সরকার নতুনভাবে প্রচলন করেছে, অনলাইন আবেদনের পদ্ধতি এখনও ঘোষিত হয়নি। এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে কৃষককে ব্লক টেকনিক্যাল ম্যানেজার-এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
খ) কৃষকবন্ধু প্রকল্প –
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কৃষকদের সুবিধার জন্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকবন্ধু প্রকল্প প্রচলন করেন। এই প্রকল্পের সহায়তায় সকল কৃষকের জন্য কৃষিক্ষেত্রে ফসল বীমার সহায়তা ছাড়াও পারিবারিক বীমা প্যাকেজ, ডেথ প্যাকেজ ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করা হয়। কৃষক বন্ধু প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সাথে আবেদনকারীরা বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন, যা তাদের আরও ভাল জীবনযাপন করতে সহায়তা করেছে। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে সংযুক্ত হয়েছেন ৪৭,১৯,৪৩৯ জন কৃষক।
প্রকল্পের সুবিধা (Benefit of the scheme)-
প্রকল্প অনুযায়ী প্রতিটি সুবিধাভোগীকে ২,০০,০০০ টাকার জীবন বীমা (Life Cover Insurance) প্রদান করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়কালে দুর্ঘটনাক্রমে কোন কৃষকের মৃত্যু হলে তার পরিবারকে পূর্ণ বীমার টাকা সরবরাহ করা হবে।
ক্রপ কভার ইন্সিওরেন্স অর্থাৎ ফসলের বীমার টাকা দুটি কিস্তিতে সুবিধাভোগীদের দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
কৃষকের মৃত্যুর ১৫ দিনের মধ্যে বীমার টাকা সরবরাহ করা হবে।
ফসল বীমার জন্য প্রিমিয়ামও রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের আওতায় থাকা সকল সুবিধাভোগীকে প্রদান করবে।
খারিফ এবং রবি মরসুমে দু'টি কিস্তিতে একর প্রতি ৫,০০০ টাকা সুবিধাভোগীদের প্রদান করা হয়।
গ) সুফল বাংলা –
এই দুটি বিশেষ প্রকল্প ছাড়াও কৃষকদের জন্য রয়েছে রাজ্য সরকারের সুফল বাংলা প্রকল্প।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য (The goal of this scheme- Sufal Bangla)–
মানুষের বাড়ির দরজায় তাজা শাকসবজি পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই প্রকল্প। এই প্রকল্পের একটি মূল উদ্দেশ্য হল কৃষকদের থেকে পণ্য এনে সরাসরি ক্রেতাকে দেওয়া। এর মাধ্যমে কৃষকরা নিজেদের পণ্য বিক্রয় করে ভালো দাম পেয়ে থাকেন।
Image source - Google
Related link - (Kisan Credit Card) কিষাণ ক্রেডিট কার্ড-এর জন্য আবেদন করেছেন, অথচ তা এখনও পাননি? এখানে অভিযোগ করুন