আর্থিক অনটনের কারণে অনেক সময় কৃষকরা মহাজনের দ্বারস্থ হন। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকেরা চাষ করে মহাজনি ফাঁদে পড়েন। ফসল ওঠার পরে সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে কৃষকদের নাজেহাল অবস্থা হয়। অনেক চাষি সর্বস্ব হারান | তাই, বাংলার কৃষকদের দুর্দশা ঘোচাতে রাজ্যের কৃষি দফতর কিষান ক্রেডিট কার্ডের (KCC Scheme) মাধ্যমে কৃষকদের ঋণ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নিলেই কৃষকরা সরাসরি ফসল বিমা যোজনার আওতায় চলে আসেন।
কিষান ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প কি(What is KCC)?
ঋণ-সহ সরকারি সুযোগ সুবিধা দিতে কৃষকদের কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে এক ধরনের কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ড থাকলে কৃষকরা যেমন ব্যাঙ্ক থেকে কৃষি ঋণ পান, তেমনি কৃষি ঋণ নিলে কৃষকরা নিখরচায় সরাসরি ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসেন।স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া যে কৃষক কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নেবেন তিনি সরাসরি বিনা পয়সায় ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসবেন।
ঋণের সুদের পরিমান:
প্রথম বছরে বাজার চলতি সুদের থেকে দুই শতাংশ কম অর্থাৎ ৭ শতাংশ হারে সুদ নেওয়া হয়। প্রথম বছর ঠিক ভাবে এবং সময় মত ঋণ শোধ করতে পারলে সুদের হার আরও ৩ শতাংশে কমে চার শতাংশে দাঁড়ায়। ঋণ না নেওয়া, ঋণ নিয়ে সময় মতো পরিশোধ না করে দীর্ঘ দিন ধরে ফেলা রাখার কারণে কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। নিষ্ক্রিয় কার্ডকে সক্রিয় করতে ব্যাঙ্ক কিংবা কৃষি দফতরে আবেদন করতে হবে। কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়। কার্ড সক্রিয় রাখতেও কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হয়। কারও আর্থিক সমস্যা, কেউ বা ব্যক্তিগত-সহ নানা কারণে ঋণ পরিশোধ করতে চান না।
আরও পড়ুন - Krishak Bondhu Prakalpa: দ্বিগুন হয়েছে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের অনুদান, জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য
কারা কিসান ক্রেডিট পেতে পারেন?
যাঁদের চাষযোগ্য জমি আছে তাঁরাই কিসান ক্রেডিট কার্ডের যোগ্য। এ ছাড়াও বর্গাদাররাও কিসান ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন।
কৃষকরা কার্ড কী ভাবে পাবেন?
ব্যাঙ্কে বা ব্লক কৃষি দফতরে গিয়ে কিসান ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়। সাদা কাগজে দরখাস্ত লিখতে হয়।
কী কী কাগজপত্র লাগে (Required documents):
জমির দলিল, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশবই প্রয়োজন |
ফসল ওঠার তিন মাসের পর থেকে পরবর্তী চাষ শুরু এই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রথম বছর ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে কৃষকরা দ্বিতীয় বছরের সুবিধা পাবেন না। সময় মতো ঋণ পরিশোধ করা উচিত। তা হলে পরবর্তী সময়ে ব্যাঙ্কে তিনি ভাল গ্রাহকের মর্যদা পান। এ ছাড়া পরবর্তী বছরের সুদের হার কমে যায়।
কোন ব্যাঙ্ক কত পরিমান সুদ দিচ্ছে?
স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া:
এসবিআই (SBI) হলো কিষান ক্রেডিট কার্ডের অন্যতম বৃহত্তম প্রদানকারী। ব্যাংকগুলি ২,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রকল্পে স্বল্প সুদের হার হিসাবে ২% পিএএইচ হিসাবে নেয়। ফসলের আবাদ ও ফসলের ধরণের ভিত্তিতে তিন লাখ টাকা দেয়। সর্বাধিক ঋণের সময়সীমা প্রায় 5 বছর এবং আপনি পেতে পারেন ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা স্কিম, সম্পদ বীমা এবং শস্য বীমা এর কভারেজ।
এইচডিএফসি ব্যাংক:
এইচডিএফসি (HDFC) ব্যাংক কিষাণ ক্রেডিট কার্ড স্কিমটি ৯% পিএ সুদের হারে অফার করে এবং প্রদত্ত সর্বাধিক ঋণের সীমা তিন লাখ টাকা। ব্যাংকটি ঋণের সীমা সহ ২,০০০ টাকার চেক বইও সরবরাহ করে।
ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া:
ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (BOI) কৃষকদের আনুমানিক আয়ের ২৫% অবধি কেসিসি অফার করে | তবে ঋণের সর্বাধিক মেয়াদ ৫ বছর এবং আপনি কোনও বীমা কভারেজ নিতে পারবেন না।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ