আমরা অনেকেই জানি যে বিভিন্ন ফুল ও ফলের বীজ খাদ্য রূপে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কেন খাবেন কোন ফুল বা ফলের বীজ? তার কী উপকারিতা? কোন বীজগুলি গ্রহণ করলে আপনি হবেন সু-স্বাস্থ্যের অধিকার? জেনে নিন এমন ৬ টি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফুল ও ফলের বীজ সম্পর্কে কিছু তথ্য।
পাম্পকিন সিড: কুমড়োর (পাম্পকিন) বীজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, আয়রন, জ়িঙ্ক, কপার ইত্যাদি। নিয়মিত পাম্পকিন সিড খেলে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড ভাল থাকে। বিশেষ কিছু ধরনের ক্যানসারেরও আশঙ্কা কমায় এই বীজ। আবার অনিদ্রার হাত থেকেও মুক্তি দেয় কুমড়ো বীজ। শুকনো খোলায় ভেজে স্যালাডের টপিংয়ে, শরবতের উপরে ছড়িয়ে খেতে পারেন পাম্পকিন সিড। আবার এক বাটি ফল কেটে তার মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারেন রোস্টেড পাম্পকিন সিড।
সানফ্লাওয়ার সিড: সানফ্লাওয়ার সিড পরিচিত সূর্যমুখীর বীজ নামে। অল্প পরিমাণে এই বীজ খেলে সহজেই পেট ভরা থাকে। কিছু ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে এই বীজ। এ ছাড়াও হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে, রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে সমতা আনতে সাহায্য করে এটি। উন্নতমানের প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি ওয়ান এবং ই, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, কপার থাকে সূর্যমুখীর বীজে। শুকনো খোলায় ভেজে এই জাতীয় বীজ স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যায়। আবার চাইলে স্যালাড কিংবা আনাজের সঙ্গেও এই বীজ খেতে পারেন।
বেসিল সিড: ছোট ছোট কালো রঙের দেখতে এই পুদিনা (বেসিল) সিড জলে ভিজিয়ে রাখলে ফুলে ওঠে, তার গায়ে সাদা পরত পড়ে। বেসিল সিডও নানা গুণে ভরপুর। ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে বেসিল সিডের জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্ট কমানো, অ্যাসিডিটি থেকেও মুক্তি দেয় বেসিল সিড।
সেস্মি বা তিল: সাদা তিলে থাকে ক্যালশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট জাতীয় উপাদান। লিভারকে যে কোনও রকম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম তিল। হজম বাড়াতে, দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করতেও তিলের জুড়ি মেলা ভার। তিলের বীজ রোস্ট করে স্যালাডের সঙ্গে খেতে পারেন। এ ছাড়াও তিলের তেল একই রকম ভাবে স্বাস্থ্যরক্ষায় সহায়ক। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তিল তেল কয়েক ফোঁটাই যথেষ্ট।
ফেনেল বা মৌরি: মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে মৌরির সুনাম রয়েছেই। ক্যাম্পফেরল ও কোয়ারসেটিন জাতীয় উন্নত মানের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় মৌরির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ্ বা স্নায়ুরোগ সারাতে, সংক্রমণ কমাতেও সহায়ক মৌরি। এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ়, পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। পেটও ঠান্ডা রাখে মৌরি। রান্নায় মৌরি ফোড়ন দিতে পারেন। সারা রাত জলে মৌরি ভিজিয়ে রেখে পরদিন তা ছেঁকে খেতে পারেন। মৌরি ভেজানো জল শরীর সুস্থ রাখে। তবে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে রোজ মৌরি ভেজানো জল খাওয়া ঠিক নয়।
গ্রেপ সিড: প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় গ্রেপ সিডকে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টি-অ্যালার্জিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে ধরা হয়। যে কোনও জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে গ্রেপ সিড। রাতে দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখা, দাঁতের ক্ষয় রোধ করা, আর্থারাইটিস ও আলসার জাতীয় রোগকে সারানোর মতো কাজে সাহায্য করে থাকে এই বীজ। শরবতের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন গ্রেপ সিড।
সকল ধরনের বীজ নিজের প্রয়োজন মতো আপনি খেতে পারেন। তবে ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করাই শ্রেয়। প্রত্যেকটি বীজ আলাদা করে না খেয়ে একসঙ্গে গ্রানোলা তৈরি করে রাখতে পারেন। ওট্সের সঙ্গে সব রকমের বীজ মিশিয়ে, অর্গ্যানিক ব্রাউন সুগার কিংবা মধু দিয়ে টস করে নিতে পারেন। আবার জারে ভরে রেখে রোজ দু’চামচ করেও খেতে পারেন। এতে বীজ খাওয়াও হবে, পেট ভরবে, আবার শরীরও পাবে সমস্ত পুষ্টিগুণ।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)