ব্রাহ্মী আমাদের দেশে প্রায় সর্বত্রই চাষ হয়। তবে এ রাজ্যে বিশেষ করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার জলাভূমিবিশিষ্ট জমিগুলিতে উদ্ভিদটি ব্যাপকভাবে চাষ হয়। স্থানীয় গ্রামবাসীরা ব্রাহ্মী সংগ্রহ করে ধান ক্ষেত এবং আর্দ্র জমি থেকে। এরপর তারা তা বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে শুষ্ক করে বাইরের রাজ্যে বিক্রয় করে।
এই বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদটির উপকারিতা সম্পর্কে প্রায় কম বেশী সকলেই অবগত। আয়ুর্বেদিক ওষুধগুলিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রূপে ব্যবহৃত হয় ব্রাহ্মী (Bacopa monnieri)। এটি স্নায়বিক এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
চলুন জেনে নিই ব্রাহ্মীর উপকারিতা –
গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো রোগ কে দূরে রাখে –
ব্রাহ্মী শাকে উপস্থিত শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ দেহে প্রবেশ করে আলসার সৃষ্টি করি এইচ.পাইলোরি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে, ফলে আলসারের মতো রোগের আশঙ্কা কমে যায়।
বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় –
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রাহ্মী শাকে উপস্থিত অনেক ধরণের কার্যকরী উপাদান। এই উপাদানগুলি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র হিপোকম্পাস অংশটির ক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যায়, ফলে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি চোখে পড়ার মতো বাড়তে শুরু করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মনোযোগ বাড়াতেও ব্রাহ্মী বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে, কারণ ব্রেনের হিপোকম্পাস অংশটির ক্ষমতার উপর মনোযোগ কমা বাড়ার তারতম্য নির্ভর করে। তাই ব্রাহ্মী শাক নিয়মিত খেলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
এপিলেপসি থেকে মুক্তি –
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রাহ্মী শাকে উপস্থিত একাধিক উপকারী উপাদান, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র কিছু নিউরো ট্রান্সমিটারের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে এপিলেপসির মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির মাত্রা কমায় –
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ব্রাহ্মী শাক খেলে মস্তিষ্কের অন্দরে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির জন্ম দেওয়া কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণ কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপ যেমন কমে, তেমনই মনের হারিয়ে যাওয়া আনন্দও ফিরে আসে। প্রসঙ্গত বলা যায়, বর্তমান দিনে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে চাকুরীজীবী সকল মানুষই নানা কারণে ভীষণ মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, ফলে ডিপ্রেশনের মতো মানসিক রোগের কবলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এরকম পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মী শাক খেলে সমস্তরকম মানসিক রোগ থেকে মেলে মুক্তি।
ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে মুক্তি দেয় ব্রাহ্মী শাক-
এই শাকটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই উপাদানটি শরীর থেকে নানাবিধ ক্ষতিকর উপাদানদের বের করে দিয়ে একদিকে ক্যান্সার কোষের জন্ম রোধ করে এবং অন্যদিকে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
অ্যালজা্ইমার রোগকে দূরে রাখে –
বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, ব্রাহ্মী শাকে উপস্থিত ব্যাকোসাইড নামক এক ধরনের রাসায়নিক জৈব-বস্তু (বায়ো-কেমিক্যাল)। এটি ব্রেন টিস্যুর ক্ষত সারিয়ে তাদের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই, বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রেন-এর কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। অপরদিকে, কগনিটিভ ফাংশান কমে যাওয়ার সম্ভবনাও কম থাকে, ফলে অ্যালঝাইমার রোগের আশঙ্কা কমে যায়।
রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে –
অতিরিক্ত টেনশনের কারণে ব্লাড প্রেশার ওঠা নামা করে। ব্রাহ্মী শাক রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া, রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণে যাতে কোনও ধরণের ক্ষতি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে।
রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্রাহ্মী –
নিয়মিত এই শাকটি খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলতে সাহায্য করে। এর ফলে অনায়াসেই রোগের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়।
আরও পড়ুন - জেনে নিন প্রতিদিন একটি কলা খাওয়ার কি কি অসম্ভব উপকারিতা রয়েছে (Banana Health Benefits)