সজিনা তিন ধরনের নীল, শ্বেত ও রক্ত সজিনা। ড্রামস্টিক, মরিঙ্গাসহ দেশ-বিদেশে সজিনার বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয় যা মূলত সজনে ডাঁটা নামে পরিচিত। দেশের সর্বত্রই এ সবজিকে আমরা দেখতে পাই। বিশেষ করে গ্রামের রাস্তার ধারে এবং বসত বাড়ির আঙ্গিনায় যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে এ বৃক্ষটি।
সজিনার বহুমুখী ব্যবহার, পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা (Uses, nutritional value and benefits) -
সজনে গাছকে বলা হয় পুষ্টির ডিনামাইট। সজনের পুষ্টিগুণ ব্যতিক্রমধর্মী। আমিষের অনুপাত বিবেচনায় সজনের গাছকেই পৃথিবীর সেরা গাছ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই গাছের প্রায় সব অংশই ব্যবহার করা যায়। বহুবিধ খাদ্যগুণসম্পন্ন হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সজিনা গাছকে ‘জাদুর গাছ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই গাছের প্রায় সব অংশই উপকারী।
পাতা (leaves) -
সজনে গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা সজনের পাতাকে বলে থাকেন নিউট্রিশিয়াস সুপার ফুড। নিরামিষভোগীরা সজিনার পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজিনা পাতায় কমলা লেবুর ৭ গুণ ভিটামিন-সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ, কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, সজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনোসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন-সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে। এক টেবিল চামচ শুকনা সজিনা পাতার গুঁড়া থেকে ১-২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যবশ্যকীয় ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ ও ভিটামিন-এ সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ৬ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া একটি গর্ভবর্তী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম।
ফুল (Plant) -
সজিনার ফুল বসন্তকালে খাওয়া ভাল কারণ এটি বসন্ত প্রতিষেধক। এটি সর্দি কাশিতে, যকৃতের কার্যকারীতায়, কৃমি প্রতিরোধে, শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ডাঁটা (Drumstick) -
এর ডাঁটা বা ফলে প্রচুর অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে। এটি বাতের রুগীদের জন্য ভালো।
বীজ (Seed) -
এর বীজ থেকে তেলও পাওয়া যায়, যা বাতের ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং ঘড়ি ঠিক করার জন্য যে বেন ওয়েল (Ben oil) ব্যবহার হয় তা এর বীজ হতে পাওয়া যায়।
ছাল (Bark) -
সজিনার ছাল থেকে তৈরি হয় দড়ি।
আরও পড়ুন - শরীর সুস্থ রাখতে এই গরমে আপনাকে খেতেই হবে ব্রোকোলি
ঔষধিগুণ (Medicinal Properties) -
সজনে সবজিতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ আয়রণসহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় উপাদান রয়েছে। এ ছাড়া ভিটামিন এ বি সি সমৃদ্ধ সজনে ডাঁটা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি। সজনের বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ওষুধি গুণ আছে। সজনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। সজনের ডাঁটা পক্স বা বসন্ত রোগের প্রতিরোধক হিসেবে খুবই উপযোগী।শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা এবং মাইগ্রেন চিকিৎসায় সজনে ভাল কাজ করে। সজনের কচি পাতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা শাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এতে শারীরিক শক্তি ও আহারের রুচির উন্নতি হয়। পোকার কামড়ে অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে সজনে পাতার রস ব্যবহার হয়। শরীরের পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে বলে সজনে ডাঁটা ঔষধি সবজি হিসাবেও এর চাহিদা অপরিসীম। এছাড়া গাছের বাকল ও পাতা রক্তামাশায় পেটের পীড়া, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে মাথা ব্যথায় সজনের কচি পাতা কপালের দুই পাশে ঘষলে ব্যথা উপশম হয়। সজনে গ্যাস্টিক রোগের বায়ুনাশক হিসেবে কাজ করে। পাতার রস হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়। শ্বেতীরোগ, টাইফয়েড জ্বর, প্যারালাইসিস এবং লিভারের রোগে সজনের রস উপকার। ক্ষতস্থান সারার জন্য সজনে পাতার পেষ্ট কার্যকরি। ভারত, চীনসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে সজনে পাতার পাউডার দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করছে।
সজিনার গাছটির প্রতি আমাদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও এর ডাঁটার প্রতি আগ্রহ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমরা জানি সবজি মাত্রই পুষ্টিকর খাদ্য। তবে সজিনা শুধু পুষ্টিকর সবজি নয়, এটি ঔষধি বৃক্ষও বটে। এছাড়া সজিনার ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন - জানুন নাগেশ্বর গাছের বৈশিষ্ট্য ও তার বিশেষ উপকারিতা