আমাদের পশ্চিমবঙ্গে নবসংযোজিত উদ্যানজাত ফসলগুলির একটি হল এই ড্রাগন ফল। নামটার মধ্যেই কেমন একটা বিদেশি গন্ধ রয়েছে যেন। এত দিন চিন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামে রমরমা ছিল ড্রাগন ফলের। দেশ-কালের বেড়াজাল ভেঙে সেই ফল এখন চাষ হচ্ছে আমাদের এই বঙ্গদেশে।
অসীম পুষ্টিগুনের আধার এই ফল টিকে "সর্বরোগহরা" বলা যেতেই পারে। কি কি উপকারিতা আছে চলুন এক কথায় দেখে নেওয়া যাক।
১. পুষ্টিতে ভরপুর ড্রাগনঃ
ড্রাগন ফল কম ক্যালোরিযুক্ত তবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে ভরপুর। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে। প্রয়োজনীয় পুষ্টির বাইরে, ড্রাগন ফল পলিফেনলস, ক্যারোটিনয়েডস এবং বিটাসায়ানিন্স এর মতো উপকারী উপাদানগুলি ও সরবরাহ করে।
২. দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে পারে ড্রাগনঃ
ড্রাগন ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় অস্থির ফ্রি র্যাডিকাল অণু যা কোষের ক্ষতি করে প্রদাহ বা রোগ সৃষ্টি করতে পারে সেগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ফ্রি র্যাডিকেলগুলিকে নিউট্রাল করে দেয় এবং এভাবে কোষের ক্ষতি এবং প্রদাহ রোধ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিত্যকার ডায়েটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার থাকলে সেটা হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং বাত এর মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। (ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস এর ঝুকি কমাতে এর জুরি মেলা ভার)
৩. ফাইবারে সমৃদ্ধ ড্রাগনঃ
ডায়েটারি ফাইবার হলো ননডাইজেস্টেবল কার্বোহাইড্রেট যার যথেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এর মতোই, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ফাইবার পরিপূরকসমূহের থেকে বেশী উপকারী। যদিও ফাইবার হজমে ভূমিকা রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
৭ গ্রাম বা এক কাপ পরিমাণ ড্রাগন ফল সকল ধরনের খাদ্যগুণের একটি দুর্দান্ত উৎস। এর মধ্যকার উচ্চ ফাইবার আপনার দেহের দৈনিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। পেটের অস্বস্তি এড়াতে এবং হজম প্রক্রিয়া কে সহজ করতে প্রতিদিন উচ্চ ডায়েটরি ফাইবার খাওয়ার অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়।
৪. অন্ত্র সুরক্ষিত রাখেঃ
ড্রাগন ফলে প্রাক-জৈবিক উপাদান রয়েছে, যেগুলি আপনার অন্ত্রের ভাল ব্যাকটিরিয়ার ভারসাম্যকে উন্নত করতে পারে। প্রিবায়োটিক হলো একটি নির্দিষ্ট ধরণের ফাইবার যা আপনার অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। কিছু কিছু ফাইবার আপনার অন্ত্র সরাসরি হজম করতে পারেনা। তবে আপনার পেটের ব্যাকটেরিয়া সেগুলি হজম করতে পারে। তারা বৃদ্ধির জন্য জ্বালানী হিসাবে ফাইবারটি ব্যবহার করে থাকে।
ড্রাগন ফল মূলত দুটি স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়া, ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটিরিয়া এবং বিফিডো ব্যাকটিরিয়া বিস্তারে সহয়তা করে। । নিয়মিত প্রিবায়োটিক গ্রহণ করলে পাচনতন্ত্র ভালো থাকে এবং ডায়রিয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস পায়। কারণ, এটি ভাল ব্যাক্টেরিয়াগুলির বিকাশ ঘটায় এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমায়।
৫. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে -
ডায়েটের বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নির্ভর করে। ড্রাগন ফলের ভিটামিন সি এবং ক্যারোটিনয়েডগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং শ্বেত রক্তকণিকার ক্ষতিরোধের মাধ্যমে সংক্রমণ রোধ করতে পারে।
৬. ড্রাগন রক্তে আয়রন লেভেল বাড়িয়ে দেয়ঃ
ড্রাগন ফল হলো কয়েকটি তাজা ফলগুলির মধ্যে একটি যা আইরন সমৃদ্ধ। আয়রন আপনার সারা শরীর জুড়ে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, অনেকের শরীরেই আয়রনের ঘাটতি রয়েছে। ড্রাগন ফল আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য বিকল্প হতে পারে কারণ এতে দৈনিক চাহিদার ৮% আইরন থাকে এবং এটিতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি রয়েছে যা আপনার শরীরে আয়রন শোষণে সহায়তা করে।
ফুলটা রাত্রে ফোটে। Natural pollinator এর অভাবের কারনে কখনো কখনো আমাদের তাই কৃত্রিম পরাগযোগ করতে হয়। সে সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে নিচের দেওয়া লিঙ্ক এ ক্লিক করে ভিডিও টি দেখে নিন Horticulture World ইউটিউব চ্যানেলে।
শুভ্রজ্যোতি চ্যাটার্জ্জী
Image source - Google
Related Link -(Mint- medicinal properties) রোগ থেকে মুক্তি অসীম ঔষধি গুনের আধার পুদিনা
ঔষধি গুনে সমৃদ্ধ অশ্বত্থ পাতা (Benefits of Peepal Leaves) কীভাবে আমাদের উপকার করে জেনে নিন