কোভিড মরসুমে অনেকেই বেশি করে লেবুজাতীয় ফল খেতে শুরু করেছেন।কারণ ভিটামিন সি। রোজ সকালে এক গ্লাস জলে অর্ধেক লেবু পান করা খুবই উপকৃত | লেবু জল পান করা শুরু করলে ছোট-বড় কোনও রোগই প্রায় ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার।
চলুন, তবে দেখা যাক লেবু জল পানের কিছু উপকারিতা,
লিভারের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে :
লেবু জল পান করলে লিভারের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। ফলে লিভারের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
পুষ্টির ঘাটতি দূর হয় (Reduce Nutritional deficiencies):
লেবু জলে যে শুধু ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত থাকে, তা নয়, সেই সঙ্গে থাকে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও কত কী, যা দেহে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে শরীরকে শক্তপোক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
দেহের পি এইচ লেভেল ঠিক থাকে (Maintain Ph balance):
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু জল পান করলে দেহের পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে ভেতর এবং বাইরে থেকে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে |
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় (Improve immunity system):
প্রতিদিন লেবু জল পান করা শুরু করলে দেহে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এত মাত্রায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে :
হাজারো বিউটি প্রডাক্ট যা করে উঠতে পারেনি, তা লেবুর জল নিমেষে করে ফলতে পারে। এই পানীয়তে বেশ কিছু উপাদান ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে। সেই সঙ্গে ত্বকের বয়স কমানোর পাশাপাশি ব্ল্যাক হেডস এবং বলিরেখা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গরমকালে ত্বককে ঠাণ্ডা এবং ঘামমুক্ত রাখতে লেবুর জল দিয়ে বারে বারে মুখটা ধুতে পারেন, দেখবেন উপকার পাবেন।
ওজন হ্রাস পায় (Reduce fat):
নিয়মিত লেবু জল পান করলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্তি মেদ ঝরে যেতে একেবারেই সময় লাগে না। কারণ লেবুতে পেকটিন নামক একটি উপাদান, শরীরে প্রবেশ করার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। কম মাত্রায় খাবার খেলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে কম মাত্রায় ক্য়ালরির প্রবেশ ঘটে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগই পায় না।
এনার্জির ঘাটতি দূর হয় :
ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি না খেয়ে প্রতিদিন এক গ্লাস করে লেবুর জল পান করার চেষ্টা করুন। দেখবেন শরীর চনমনে হয়ে উঠবে। লেবুতে থাকা একাধিক উপকারী উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর বুঝতে পারবেন শরীর এবং মস্তিষ্ক চাঙ্গা হয়ে উঠেছে |
শ্বাস কষ্টের মতো সমস্যা কমে :
যারা অ্যাস্থেমা বা কোনও ধরনের রেসপিরেটরি প্রবলেমে ভুগছেন তারা যত শীঘ্র সম্ভব রোজের ডায়েটে লেবু জলকে ডায়েট চার্টে যোগ করুন। দেখবেন, খুবই উপকৃত হবেন | এই পানীয়টি শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত একাধির জটিলতাকে কমিয়ে ফেলতে খুবই সাহায্য করে |
স্ট্রেস এবং অবসাদের থেকে মুক্তি মেলে (Reduce stress):
নিয়মিত লেবুর জল পান করলে স্ট্রেস একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে অবসাদের প্রকোপও কমে। লেবু জলে বেশ কিছু উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে এমন সব সমস্যা নিমেষে কমে যেতে শুরু করে।
পেটের রোগ দূর হয়:
যারা বদ হজম, কনস্টিপেশন, বারংবার পেট খারাপ সহ নানাবিধ পেটের রোগে ভুগে থাকেন, তারা প্রতিদিন সকালে গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। স্টমাক অ্যাসিডের ক্ষরণ ঠিক মতো হতে শুরু করবে। ফলে রোগের প্রকোপ তো কমবেই, সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনও বেরিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন - বাজার থেকে কিনা আনা সতেজ ফল, মাছ শাক সবজিতে ফরম্যালিন নেই তো? কীভাবে বিষমুক্ত করবেন আপনার খাদ্য ?
মুখ গহ্বরের নানা রোগ নিমেষে সেরে যায় :
মুখ থেকে খুব দুর্গন্ধ বের হয়? আজ থেকেই লেবু জল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন বদ গন্ধ একেবারে কমে যাবে। শুধু তাই নয়, মাড়ি থেকে রক্ত পাত এবং দাঁতে যন্ত্রণা হওয়ার মতো সমস্যা হলেও এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিকে কাজে লাগাতে পারেন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।
সংক্রমণের প্রকোপ কমে :
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ। তাই তো লেবু জল যে কোনও ধরনের সংক্রমণ, বিশেষত গলার সংক্রমণ কমাতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রে লেবু জল দিয়ে গার্গেল করলেই উপকার পাওয়া যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - করোনা সংক্রমণ রুখতে আদৌ কি উপযোগী মোসাম্বির রস ? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা