মানবদেহে পুষ্টির এক অপরিহার্য গুরুত্ব রয়েছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহের ভূমিকা পালন করে ফল। ফলের ব্যবহার শরীরে শক্তি জোগায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ত্বকও করে তোলে উজ্জ্বল। আসুন, জেনে নেওয়া যাক, স্বাস্থ্যরক্ষায় কোন ফল আপনাকে কী ধরণের সহায়তা করবে।
আম - এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি মানবদেহে অভ্যন্তরে তৈরী হওয়া র্যাডিকাল প্রতিরোধ করে, কোলন, স্তন, প্রস্টেট ইত্যাদির ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। আম টারটারিক, ম্যালিক এবং সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। ফলে শরীরের ক্ষারীয় উপাদান বজায় রাখতে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত গ্লুটামিন অ্যাসিড স্মৃতি শক্তি বাড়ায়।
কমলালেবু - এতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম উপস্থিত, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কমলালেবুতে রয়েছে ফাইবার, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
পেঁপে - এতে পেপেইন এনজাইম এবং বিটা ক্যারোটিন নামক উপাদান রয়েছে, যা হজমশক্তি বর্ধনে সহায়তা করে। বিটা ক্যারোটিন উপাদান থাকায় এটিও ক্যান্সার রোধে সহায়ক। জন্ডিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিদিন একটি করে পাকা পেঁপে খাওয়া উচিত।
আপেল – এতে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্যালোরি, ম্যাগনেসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, দস্তা, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি১। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত আপেল খাওয়া আমাদের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত আপেল খেলে শরীর থেকে সিসা, পারদ ইত্যাদির মতো অনেক বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশিত হয়ে যায়। লাল আপেলে কোয়ার্সেটিন নামক একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
কলা - এটিতে ক্যারোটিনয়েড যৌগ রয়েছে, যা অন্ধত্বের ঝুঁকি দূর করে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ফাইবার, যা হজমে উন্নতি করে। এটিতে উপস্থিত পটাশিয়াম রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখে এবং মস্তিষ্ককে সতেজ ও সজাগ রাখে। কলা ভিটামিন বি ৬ এর একটি দুর্দান্ত উত্স, যা স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
নাশপতি - এতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ফাইবার । ফাইবার পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। প্যাকটিন নামক উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া নাশপাতিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এর মধ্যে উপস্থিত কয়েকটি যৌগ, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আনারস- এর রস বা শরবত পান করলে শরীর ঠাণ্ডা হয় এবং ঘামের সমস্যা নিরাময় হয়। আনারস ফল খেলে পিত্তরোগ নিরাময় হয়। প্রতিদিন আনারসের রস সেবন স্থূলত্ব হ্রাস করে, কারণ এটি ফ্যাট অপসারণ করে। আনারসের রস গলা ও মুখের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে উপকারী। এটি হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং দেহে শক্তি সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
আঙ্গুর - আঙুরের রস নিয়মিত সেবন করলে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। উচ্চ রক্তচাপে এর গ্রহণ অত্যন্ত উপকারী। আঙ্গুর গ্লুকোজ, ম্যাগনেসিয়াম এবং সাইট্রিক অ্যাসিড ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। এটি টিবি, ক্যান্সার এবং রক্ত-সংক্রমণের মতো রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)