ভারতীয়রা চায়ে এলাচ মিশিয়ে পান করতে বেশি পছন্দ করে। এলাচ প্রধানত রান্নায় স্বাদ, গন্ধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তবে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয় মশলা হিসেবে। এর মূল্য প্রতি কেজি প্রায় হাজার টাকার উপর। গরম মশলার প্রধান উপাদান হল এই এলাচ। আজ এই পণ্যটির ব্যবহার এতটাই বেড়ে গেছে যে, অদূর ভবিষ্যতে এর চাহিদা বর্তমানের তুলনায় প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।
Cardamom or Cardamum একটি Elettaria এবং Amomum প্রজাতির Zingiberaceae শ্রেণীর উদ্ভিদ যার বীজ থেকে এলাচ বা এলাইচি তৈরি হয়। এই দুই প্রজাতিই প্রধানত ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা। এদের সাধারণত বীজের আকার অনুযায়ী চিহ্নিত করা হয়। আড়াআড়ি ব্যবচ্ছেদে এটি ত্রিভুজাকার ও লম্বালম্বি বেম আকার বিশিষ্ট, পাতলা কাগজের ন্যায় বহিরাবরণ বিশিষ্ট, এবং ছোট গোলাকার কালো বীজ সমন্বিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে ছোট এলাচগুলি হয় হালকা সবুজ বর্ণের ও বড় এলাচগুলি হয় কালো বাদামী রঙের।
এলাচের প্রথম বাণিজ্য শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়, যেখানে এই দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য এলাকায় জঙ্গলে সামান্য পরিমাণে এলাচ উৎপাদিত হয়ে আসছে প্রায় দ্বাদশ শতাব্দী থেকে। বর্তমানে অবশ্য গুয়াতেমালা, মালায়শিয়া, এবং তাঞ্জানিয়ার মতো আরও কয়েকটি দেশে এলাচের উৎপাদন হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মান কফি উৎপাদক মিঃ অস্কার মাজুস কোয়েলফার গুয়াতেমালাতে ভারতীয় এলাচের পরিচিতি ঘটান এবং বেশ কিছুকাল চাষও করেন। ২০০০ সালের মধ্যে এই গুয়াতেমালাই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ এলাচ উৎপাদক দেশে পরিণত হয় ( ভারতের পর)।
এই এলাচের চাহিদা ও ব্যবহার উত্তরোত্তর এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে এই পণ্যটির বর্তমান প্রচলিত বাজার মূল্য ১০৩৪ টাকা প্রতি কেজি এবং আশা করা যাচ্ছে যে খুব শীঘ্রই এর মূল্য ও চাহিদা উভয়ই বর্তমানের তুলনায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এর কারণ এলাচের বাণিজ্যে কালোবাজারি ও মজুতকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিবিধ পণ্য বিনিময় কেন্দ্রে এমাসে এলাচের বিনিময় মূল্য আগের মাসের তুলনায় ৩৯.৭০ টাকা বেশি অর্থাৎ পূর্বের থেকে ৪% বেশি ( ২৭ লটের ক্ষেত্রে দাম প্রতি কেজি ১,০৩৪.৪০ টাকা)
আগস্ট মাসে এই দামের সামান্য কিছুটা কমলেও সেই ৪% শতাংশের আশেপাশেই থাকবে ( ৫৭ লটের জন্য বাণিজ্য মূল্য দাঁড়াবে ১০১৭.৮০ টাকা প্রতি কেজি)। একটি মূল্যবিশ্লেষণ থেকে বলা হচ্ছে এলাচের চাহিদার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে রীতিমত দাম বাড়িয়ে অবস্থার সামাল দিতে হচ্ছে।
প্রধান দুই ধরণের এলাচঃ
-
সবুজ এলাচ, ( শুকনো অবস্থায় সাদা এলাচ, যেটি Elettaria Cardamom নামে বেশি পরিচিত) রপ্তানি করা হয় ভারত থেকে মালয়েশিয়াতে
-
কালো এলাচ, যা প্রধানত বড়, লম্বা ও বাদামি বর্ণযুক্ত হয়, এটি নেপালি এলাচ নামেই বেশি পরিচিত।
এই ধরণের এলাচ চাষ করা হয় নিম্ন বা শিবালিক হিমালয়-এর নেপাল, ভুটান, সিকিম, ও দার্জিলিং অঞ্চলে। এই দুই জাতের এলাচের পরিচিতি করিয়েছিলেন খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রীক উদ্যানবিদ্যার জনক থিওফ্রেটাস, উনি প্রথম এলাচকে ভারতীয় প্রজাতির ফসল হিসেবে পরিচয় দেন।
- প্রদীপ পাল