জাতীয় মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা (এনএমসিজি)-এর নেতৃত্বে জাতীয় র্যানচিং মিশন III-এর অংশ হিসেবে গঙ্গা নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিফ্রি)-এর পরিচালক ড. বি.কে. দাসের তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ গঙ্গা নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ফারাক্কা ব্যারাজের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবিলা করছে।
ফারাক্কা ব্যারাজ সেচ ও নৌপরিবহনের জন্য অপরিহার্য হলেও এটি স্ক্যাম্পি (ম্যাক্রোব্রাচিয়াম রোজেনবার্গি) এর মতো স্থানীয় জলজ প্রজাতির প্রাকৃতিক অভিপ্রায়ণে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এই বাধার কারণে স্ক্যাম্পির জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যা তাদের প্রজনন চক্রকে প্রভাবিত করেছে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতিকে ত্বরান্বিত করেছে।
এই সমস্যা সমাধানে সিফ্রি-এর দল ৩৫ জন স্থানীয় মৎস্যজীবীর সহযোগিতায় গঙ্গা নদীর উজানে ২.২৫ লাখ পোস্ট-লার্ভাল (PL15) স্ক্যাম্পি পোনা অবমুক্ত করেছে। এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য স্ক্যাম্পির জনসংখ্যা পুনরুদ্ধার করা, ঐতিহ্যবাহী মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করা এবং নদীর জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি করা। এই মিশন বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি টেকসই বাস্তুতান্ত্রিক হস্তক্ষেপের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ড. দাস বলেন, "স্ক্যাম্পি গঙ্গার স্থানীয় প্রজাতি এবং এর বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যারাজ তাদের অভিপ্রায়ণে বিঘ্ন ঘটায়, যা তাদের জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ হয়েছে। এই র্যানচিং উদ্যোগ সেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা।" তিনি জিরো মেশ সাইজের জাল ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবের কথাও উল্লেখ করেন, যা অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অলক্ষ্য প্রজাতিদের indiscriminately ধরে ফেলে এবং জলজ জীববৈচিত্র্যকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
গত আট বছর ধরে সিফ্রি ইন্ডিয়ান মেজর কার্প (আইএমসি) এবং অন্যান্য প্রজাতি যেমন বাটা, সরানা এবং এখন স্ক্যাম্পি নিয়ে এই নদী র্যানচিং কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। এটি একটি বহু-প্রজাতিভিত্তিক পদ্ধতিতে নদী পুনরুদ্ধারের প্রতিফলন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী মৎস্যচাষ পুনরুজ্জীবিত করে গঙ্গার উপর নির্ভরশীল স্থানীয় মৎস্যজীবী ও সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে নতুন করে জাগ্রত করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
এই উদ্যোগ গঙ্গার টেকসই উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দিকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।