মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে চায়ের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। চা বাগানে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ শেড টি গার্ডেন থেকে বটলিফ চা বাগান, ক্ষুদ্র চা বাগান এমনকি কিছু বড় বাগানেও চায়ে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে। রাতারাতি পোকা মারা এবং অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে বাগান মালিকদের একাংশ, ক্ষুদ্র চাষিরা এই কাজ করছেন। দার্জিলিং চা থেকে সাধারণ সিটিসি চা সবক্ষেত্রেই কীটনাশক প্রয়োগে চায়ের গুণগত মান কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এর ফলে বিদেশের বাজার থেকে চা ফেরত এসেছে বলে চা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে চা পর্ষদের পক্ষ থেকে যাতে তালিকাভুক্তের বাইরে অন্য কোনও কীটনাশক ব্যবহার করা না হয়।
পর্ষদ ঘোষণা করেছে, প্ল্যান্ট প্রোটেকশন কোড (পিপিসি) অনুযায়ী তালিকার বাইরে চায়ে কীটনাশক প্রয়োগ ধরা পড়লে ভর্তুকি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্ষদ থেকে প্রতিটি বাগানে সেই নির্দেশিকা জারি করে সতর্ক করা হয়েছে। চায়ে কীটনাশক মিশছে কিনা তা দেখার জন্য নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। বিষক্রিয়ার মাত্রা বেশি থাকায় গত বছর এক লক্ষ কেজি বটলিফ চা নষ্ট করেছে টি বোর্ড। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে চা রপ্তানিতে ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
টি বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর চন্দ্রশেখর মিত্র বলেছেন, চায়ে কীটনাশক প্রয়োগ করায় গুণগত মান কমে যাচ্ছে শুধু নয়, বিষক্রিয়ায় চায়েরও ক্ষতি হচ্ছে। বাজারে আসার আগে চায়ে বিষ আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিলামের আগে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। বিষক্রিয়া মিললেই সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষক্রিয়ার মাত্রা বেশি থাকলে চা নষ্ট করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নজরদারি শুধু নয়, সচেতন করতে ওয়ার্কশপ করা হচ্ছে। বাগানগুলিতে চায়ের সঙ্গে যুক্ত চাষি, ছোট বাগানের মালিক সবাইকে আমরা সতর্ক করছি।
চা চাষে ব্যবহারের জন্য ৪২টি কীটনাশকের অনুমোদন দিয়েছে পর্ষদ। কিন্তু লুপার, ক্যাটার পিলারের মতো পোকার দাপট রুখতে বাগানে নিষিদ্ধ বহু কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও শেড টি গার্ডেনে এই কীটনাশকের প্রয়োগ বেশি হচ্ছে। তবে কিছু বড় বাগানেও এই কীটনাশকের ব্যবহার চলে। বাগানগুলিতে এই কীটনাশকের ব্যবহারে লাগাম টানতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চাষিরা সারাবছর ধরে বাগানে কখন কী ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করছেন তা লিপিবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন ডিলার বা পাইকারের কাছ থেকে কীটনাশক কেনা হচ্ছে তার ক্যাশ মেমো সহ প্রমাণপত্র দিতে হবে। কাঁচা পাতা বিক্রির সময় চাষিকে মুচলেকা দেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শেড টি গার্ডেন ও বটলিফ টি গার্ডেনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম করা হয়েছে। নিলামের আগে চাষে বিষক্রিয়া আছে কিনা তা দেখার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করার জন্য প্রচার চালানো প্রয়োজন।
- রুনা নাথ