ড্রাগন ফ্রুট চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা কৃষ্ণা নন্দী ঘোষ। এই মহিলা কৃষক আমাদের জানিয়েছেন, তিনি ড্রাগন ফলের (Dragon Fruit) সাথে সাথে মাল্টা ফলেরও চাষ করেন আর তাতেই এসেছে এই সাফল্য। তিনি আরও বলেন যে, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে পরামর্শ নিয়েই তিনি মিশ্র চাষ (Mixed Farming) শুরু করেন আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে। পূর্ব মেদিনীপুরের এই মহিলা কৃষক আজ রাজ্যের সকলের অনুপ্রেরণা।
এই ফলের চাষ দেশের হাতে গোনা কয়েকটি এলাকায় অল্পবিস্তর হলেও, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে কিছু জেলায় এই ফল চাষে চাষিরা বিশেষ মনোযোগ দিতে শুরু করেছে। অত্যধিক চাহিদা ও ভাল বাজারদর (৩০০-৩৫০ টাকা কেজি) থাকায় এই ফলের চাষ খুবই লাভজনক। চাষিদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারন প্রাথমিক খরচ একটু বেশি হলেও এই গাছটি থেকে ২০-২৫ বছর ফল পাওয়া যায়।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ (Land preparation and planting of saplings) -
উপযুক্ত ভাবে চাষ দিয়ে মাটি সমান করতে হবে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন আগে ২-২.৫ মিটার অন্তর গর্ত তৈরি করতে হবে। প্রতিটি গর্তের পরিমাপ-৭৫ সেমি দীর্ঘ, ৭৫ সেমি প্রস্থ ও ৭৫ সেমি উচ্চতাযুক্ত। প্রতি গর্তে ২৫ কেজি জৈব সার, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম সিংগল সুপার ফসফেট, ৩০০ গ্রাম মিউরিয়েট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করতে হবে।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে চারা লাগিয়ে ফেলতে হবে। সিমেন্টের খুঁটির চারপাশে ৩-৪ টি চারা রোপণ করতে হবে।পিলারের উচ্চতা ৪.৫-৫ ফুট।
পিলারের মাথায় জিআই পাইপের লোহার রিং, সাইকেলের চাকার রিং বা টায়ার লাগানো হয়। গাছগুলি মাটি থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় খুঁটি দিয়ে উপরে উঠে রিংয়ের চারপাশে ফোয়ারার মত ঝুলতে থাকে।
রোগ-পোকা (Disease Management) -
এই গাছে রোগ-পোকার উপদ্রব কম। পিঁপড়ের আক্রমন দেখা যায়। পাখিরা ফুল ও পাকা ফলের ক্ষতি করে।
কাণ্ড ও গোড়া পচা রোগ -
ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হতে পারে। এই রোগ হলে গাছের কাণ্ডে প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কাল রঙ ধারন করে। পরবর্তীতে ঐ অংশে পচন শুরু হয় এবং পচার পরিমান বাড়তে থাকে।
এই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার জলে যেকোনো ছত্রাকনাশক(কারবেনডাজিম, ব্যাভিস্তিন, থিওভিট) ২ গ্রাম ভাল ভাবে স্প্রে করতে হবে।
পোকা-মাকড় -
পোকা-মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে জাব পোকা ও দয়ে পোকার আক্রমন করে থাকে। বাচ্চা ও পুরন বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা ও পাতার রস চুষে খায়। ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ও ডগার রং ফ্যাকাসে হয়ে যায় ও গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কমে যায়। এই পোকা ডগার উপর আঠালো রসের মত মল ত্যাগ করে। ফলে শুটি মোলড নামক কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়। এতে গাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যহত হয়। ফলে ফুল ও ফল ধারন কমে যায়।
এই পোকা দমনের জন্য যে কোনও কীটনাশক যেমন সুমিথিওন বা ম্যালাথিওন ২ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে ভালভাবে গুলে প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন -Mulching Machine: কৃষক তৈরী করেছেন মালচিং মেশিন, যা খরচ ও শ্রমকে সাশ্রয় করে
পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলায় এই ফল চাষে চাষিরা বিশেষ মনোযোগী হয়েছে। গুজরাট রাজ্যে প্রথম এই ড্রাগন ফল চাষ সফল হয়। অনেক নার্সারি তেই এখন ড্রাগন ফলের চারা তৈরি হচ্ছে। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। কিন্তু সফলতার হার খুব কম হওয়ায় কাটিং থেকে চারা করা ভাল। এছাড়া বীজ থেকে তৈরি চারায় মাতৃ গাছের সমস্ত গুন থাকে না।পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় কাটিং এর চারা থেকে প্রায় ১৪-১৫ মাসের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। কিন্তু বীজ থেকে তৈরি চারায় ফল ধরতে তিন বছর সময় লাগে। ৫০-৭০ সেমি দীর্ঘ কাটিং নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমান জল দিতে হবে ভাল শিকড় পেতে। সুষম পরিবেশ পেলে কাটিং এর চারা তৈরির সফলতার হার ৯০% । সুস্থ-সবল, ভাল ফলন যুক্ত এবং রোগমুক্ত গাছ থেকে ডাল সংগ্রহ করতে হবে। ডাল কাটার পর ছত্রাকনাশক যেমন কারবেনডাজিম বা ম্যানকোজেব প্রতি লিটার জলে ২-৩ গ্রাম মিশিয়ে ডালের কাটা অংশে ২-৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ১০-১৫ মিনিট শুকিয়ে নিতে হবে।
আরও পড়ুন -Water logging Agriculture: জলাবদ্ধ জমিতে সবজি চাষে কৃষকের ব্যাপক সাফল্য