সাধারণত, আমরা সকলেই গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে কথা শুনেছি | কিন্তু, অসময়ে বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ খুব একটা নজরে পড়েনা | আর এই কাজটি সাফল্যের সাথে করে দেখিয়েছেন কৃষক বোরহান মাহমুদ | ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের রাঙামুলারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তিনি | কাজের সূত্রে বাইরে থাকলেও, বর্তমান মহামারীতে দেশে ফিরে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন | তিনি ইউটিউব থেকে কৃষি ফসলের ভিডিও দেখতে গিয়ে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ (Black diamond watermelon) বিষয়ে জানতে পারেন। পরে ভিডিও দেখে ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ চাষ করার উদ্যোগ নেন। এবং অসময়ে এই তরমুজ চাষে ব্যাপকভাবে লাভবান হন |
কিভাবে তিনি শুরু করেন(How he started)?
নিজেদের ২ বিঘা পতিত জমিতে তিনি রোপণ করেন বীজ। সেই বীজ থেকে চারা হলে তৈরি করেন মাচা। সেই মাচায় এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে কৃষকের স্বপ্নের ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ। সেই তরমুজগুলো যাতে কোনো পোকা কেটে দিতে না পারে সেজন্য ক্ষেতজুড়ে আলোক ফাঁদ বসিয়েছেন। তরমুজগুলো ঢেকে দিয়েছেন নেটের ব্যাগ দিয়ে। ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ খেতে প্রচুর মিষ্টি। উপরিভাগ কালো হলেও ভেতরে টকটকে লাল। অসময়ে তরমুজ আবাদ করে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন বোরহান।
আরও পড়ুন -শেড নেট পদ্ধতিতে পান চাষে বিঘা প্রতি ব্যাপক আয়ের সুযোগ
কি বললেন সফল চাষী(Success story):
তার জমিতে ছোট ছোট মাচায় ঝুলছে কালো রঙের নানান আকৃতির তরমুজ। তরমুজ খেতে ও দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে তার বাগানে ছুটে আসছেন লোকজন। শুধু দেখতে নয়, অনেকেই তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তার থেকে। পাইকারিভাবেও তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
নবীন তরমুজ চাষি বোরহান মাহমুদ জানান, তার দেশে ফিরে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ ছিলোনা | গতানুগতিক কোনো কৃষি আবাদে না গিয়ে ভিন্ন ধরনের কিছু করার চিন্তা করলেন বোরহান। তাই ইউটিউবে ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ চাষ দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন |
তার খরচ ও লাভের পরিমান(Expense and profit):
বোরহান জানান, তার জমিতে এখন প্রায় ৪০০০ বিভিন্ন সাইজের তরমুজ রয়েছে। প্রতিদিনই ক্ষেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। প্রতিটি তরমুজ ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।
জমি তৈরিসহ ২ বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৮০,০০০ টাকা। আর জমিতে থাকা তরমুজগুলো বিক্রি হবে প্রায় ৪ লাখ টাকার উপরে। সব খরচ বাদ দিয়ে সে ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বোরহান।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং বহু শিক্ষিত বেকার যুবক জানান, স্বল্প সময়ে ফলন পাওয়া এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় বোরহানের দেখাদেখি তারাও এ তরমুজ আবাদে ঝুঁকেছেন। করোনাকালে চাকরির কথা না ভেবে তারা তরমুজ আবাদ করার জন্য বোরহানের কাছে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছেন। স্থানীয় কৃষি দপ্তর আধিকারিকেরা তার এই উদ্যোগে খুবই খুশি এবং ভবিষ্যতে তার পাশে থাকার পরামর্শ জানিয়েছেন তারা | গ্রামীণ বেকারত্ব দূর করতে এই তরমুজ চাষ বেশ লাভজনক | কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত বেকার যুবকদের তরমুজ চাষে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন | ইতিমধ্যেই গ্রামের বহু শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা এগিয়ে এসেছেন তার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে | তারাও তরমুজ চাষে ব্যাপক আশাবাদী |
আরও পড়ুন -India’s Mango Man: ৩০০টিরও বেশি আমের জাত একই গাছে, কৃষকের ব্যাপক সাফল্য