২০২০ সালের মে মাসে, মহারাষ্ট্রের নাসিকের কৃষক নিতিন ঝুলে বর্ষার ফসল চাষের জন্য তার কৃষিজমি প্রস্তুত করছিলেন। তিনি টমেটো, মরিচ এবং গাঁদা চাষ করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু বুঝতে পেরেছিলেন যে তার ৭ একর জমিতে কৃষিকাজ খুবই কষ্টসাধ্য ও অতিরিত শ্রম লাগবে | তাই তিনি মাটিতে মালচিং পেপার (Mulching paper) বিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন | এটি পলিথিন থেকে তৈরি একটি পাতলা শীট যা মাটি ঢেকে রাখতে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে পাশাপাশি উন্নত জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য মূল স্তরে তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
তবে প্রক্রিয়াটির জন্য প্রায় ১ ডজন মলচিং কাগজের রোল এবং অনেক শ্রমিক দরকার ছিল। ১ একর জমি আবরণ করতে ১.৫ দিনও সময় লাগবে। কোভিড -১৯ লকডাউনের জন্য বেশি শ্রমিক একসাথে নিযুক্ত করার অনুমতি যেমন ছিলোনা তেমনি একসাথে এতো শ্রমিক খুঁজে পাওয়া সোজা ছিলোনা |
এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ২৮ বছর বয়সী কৃষক নিতিন স্ক্র্যাপ উপাদান থেকে একটি মালচিং পেপার স্প্রেডার তৈরি করেছিলেন, যা এক তৃতীয়াংশ শ্রমে কাজ করে এবং অর্ধেক সময় প্রয়োজন।
কিভাবে তিনি এই মালচিং মেশিনে বানালেন(How he innovates mulching machine)?
নিতিন বলেন, তিনি মালচিং পেপার ছড়িয়ে দিতে ট্র্যাক্টর এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয় বরং এই প্রক্রিয়াটিতে কাগজটি ছিঁড়ে যায় | নিতিন বলেন, তিনি একটি হার্ডওয়ার শপ থেকে কয়েকটি চাকা এবং জয়েন্ট কিনেছিলেন এবং তার মতো করে সবকটি একসাথে ঝালাই করেছিলেন। ১৫ দিনের মধ্যে, প্রথম নকশা প্রস্তুত হয়ে ওঠে। তবে এটিতে আরও উন্নতির প্রয়োজন |
আরও পড়ুন -Water logging Agriculture: জলাবদ্ধ জমিতে সবজি চাষে কৃষকের ব্যাপক সাফল্য
নিতিন বলেন যে, তিনি এমন একটি ডিভাইস তৈরি করেছিলেন যাতে চালনার জন্য ২ জন ব্যক্তির প্রয়োজন হয়। “আমি সামনে এবং পিছনে ব্লেড ফিট করি যা ডিভাইসটি সরানোর সাথে সাথে মাটি ছড়িয়ে পড়ে। সামনের ব্লেডগুলি মাটি ছড়িয়ে দিত। মালচিং পেপার মাটির উপর দিয়ে তার এগিয়ে চলার সাথে সাথে একই সাথে ছড়িয়ে পড়ত। পিছনের ব্লেডগুলি মাটিটি ঢেকে রাখত এবং কাগজটি নীচে রাখত, "তিনি জানান।
ডিভাইসটির সুবিধা(Benefits of mulching machine):
অনেক রকম ভাবে চেষ্টা করার পর তিনি বুঝেছিলেন, তার সম্পূর্ণ এক নতুন ডিজাইনের প্রয়োজন, যা তার চাষের কাজে সহায়তা করবে | ডিভাইসটি তৈরি করতে তার ৭০০০ টাকা খরচ হয়েছে এবং শ্রমিকের খরচ বাঁচাতে সম্পূর্ণ কাজটি তিনি নিজে করেছেন |
তার এই নয়া আবিষ্কার কৃষকদের জন্য দারুন সহায়ক | সাধারণত ১ একর জমিতে মালচিং পেপার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১২ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, যাদের এক একজনের মজুরি ৬০০ টাকা। তাদের খাবার খরচ মিলিয়ে চূড়ান্ত মজুরি ৮০০০ টাকা পর্যন্ত দাঁড়ায় | সেখানে তিনি ১০,০০০ টাকায় এই ডিভাইস বিক্রি করছেন যা এককালীন বিনিয়োগ এবং এতে মাত্র ২ জন শ্রমিক দরকার | এই যন্ত্রটি ভাঁজ করেও রাখা যায় | ১.৫ দিনের বদলে এই যন্ত্র দিয়ে মাত্র ৮ ঘন্টায় ১ একর জমিতে মালচিং পেপার বিছিয়ে দেওয়া যায় |
প্রয়োজনে, কৃষকরা যদি চান শ্রমিকের খরচ কমাতে তবে তারা অনায়াসে বাড়ির কারোর সাহায্য নিতে পারেন | কারণ, এই যন্ত্রটি চালাতে মাত্র ২ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় | নিতিন জানান যে, তিনি এখনো পর্যন্ত ১০০ টি অর্ডার পেয়েছেন |
কৃষকদের পক্ষে কাজ করা আরও সহজ করার জন্য আরও নতুন উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে আসার উদ্দেশ্য তার | তিনি আনন্দিত যে তার এই আবিষ্কার অন্যান্য কৃষকদের সাহায্য করছে |ভবিষ্যতেও কৃষকদের বিশেষ অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তিনি কাজ করবেন |
আরও পড়ুন -Rock Melon Farming: রক-মেলন চাষে ব্যাপক সাফল্য কৃষকের