দিন দিন কমছে জলস্তর। তাই চাষের কাজে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য বারবার প্রশাসনিকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এই সংকটের সময় অল্প সেচে তৈল বীজচাষের (Oil seed cultivation) পদ্ধতি দেখিয়ে দৃষ্টান্ত গড়লেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের কৃষক আমিরুল হক শেখ। এই কৃতিত্বের জন্য কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র আয়োজিত রাজ্য তৈলবীজ কিষাণ মেলায় ওই কৃষককে জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক সম্মানে ভূষিত করা হয়। আমিরুলের এই নিপুন কাজে উৎসাহিত হচ্ছেন এলাকার বাকি কৃষকরা |শুধু তাই নয়, আমিরুল হক শেখ এর আগে ২০১৮-১৯ মন্তেশ্বর ব্লকে কৃষক রত্ন পুরষ্কার পেয়েছিলেন |
কিভাবে তিনি চাষ শুরু করলেন (How he started)?
মন্তেশ্বরের ভাগড়া-মূলগ্রাম পঞ্চায়েতের তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল হক শেখ বরাবরই চাষের কাজে বেশ আগ্রহী। কিন্তু এই কাজে তার সব থেকে বড় বাধা ছিল চাষের কাজে ব্যবহার করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জল। আর তার জমির কাছাকাছি কোনও সাব-মার্সিবল ও মিনি পাম্প ছিলোনা। জমির কাছে থাকা নালা, খালের জল ও কয়েকশো ফুট দূরে পাইপ লাগিয়ে জল আনতেন । তাই অল্প জলের উপর ভরসা রেখে আধুনিক চাষের পদ্ধতিকে অর্থাৎ স্প্রিংলার পদ্ধতি, পয়রা ক্রপিং, বায়ো মালচিংয়ের মাধ্যমে চাষ করেছেন।
শুধু তৈলবীজ নয় কিছু ফলেরও (Fruit farming) চাষ করেছেন তিনি | সরষে, মুসুর, তিল, সূর্যমুখী চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি তরমুজ, শশার মতো বিভিন্ন ফলচাষেও তিনি সফল হয়েছেন। আর তাই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় নিমপিঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র আয়োজিত রাজ্য তৈলবীজ কিষাণ মেলায় তার হাতে জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক সম্মানের দরুণ শংসাপত্র ও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মন্তেশ্বরের কৃষি অধিকর্তা কণক দাস জানান, মন্তেশ্বর ব্লকে ধান চাষ বেশি হয়। আর এটি সেমি ক্রিটিক্যাল ব্লক। তাই চাষের কাজে অযথা জল অপচয় রোধ করতে ও কৃষকদের তৈলবীজ, ডালশস্য ও রবিশস্যে চাষের জন্য আমরা উৎসাহিত করা হয় | এই যুবক আধুনিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে তা সম্ভব করে দেখিয়েছে | তাকে দেখে এগিয়ে আসছে বহু বেকার যুবক |
আরও পড়ুন - মালটা ফলের চাষ করে আজ সাফল্যের পথে কৃষক সুনীল বরন তালুকদার
আমিরুল বলেন, তার চাষের কাজে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ জল। কারণ জমির কাছাকাছি প্রায় ২ -কিলোমিটারের মধ্যে কোনও সাব-মার্সিবল পাম্পও ছিলোনা। তাই খালের জলেই তিনি চাষ করতেন। কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে আধুনিক সরঞ্জাম পাওয়ার পর অল্প জল লাগে এইরকম তৈলবীজ, ডালশস্য ও ফল চাষ করেন। আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন তিনি | সর্বোপরি, জমিতে ডালজাতীয় শস্য, তৈলবীজ চাষ করলে জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায় | বিশেষত, তৈলবীজ ও দল জাতীয় শস্য পুষ্টিকর হওয়ায় সারাবছর বাজারে এর চাহিদা থাকে | অন্যদিকে কম জলে চাষ করে সেচে খরচও যেমন বাঁচে তেমন আবার জমি উর্বর হয় | আবার, এই জমিতে ফলের চাষ ও সম্ভব | সবমিলিয়ে, এভাবে চাষ করলে কৃষকবন্ধুদের লাভের পরিমান বেশি হয় |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - মাছ চাষ করে সারা রাজ্যে আজ আরতী বর্মন মহিলাদের কাছে এক আইকন