গ্রীষ্মে আমরা অধীর আগ্রহে ফলের রাজা - আমের জন্য অপেক্ষা করি। তবে, এখন আম খাওয়ার জন্য আপনাকে আর গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই; আপনি বছরের যে কোনও সময় পেতে পারেন আমের স্বাদ। এর জন্য আমাদের ধন্যবাদ জানাতেই হবে কোটা (রাজস্থান)-এর কৃষক শ্রী কিশান সুমনের কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টাকে। তিনি সদাবাহার আমের নতুন এক খর্বকায় জাতের বিকাশ করেছেন। এই জাতটির বিকাশে তার দীর্ঘ ২০ বছর সময় লেগেছে, যা এখন দেশ ও বিদেশে, নেপাল, ইটালি, আমেরিকার মতো দেশগুলিতে নগরবাসীর মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এই নতুন আমের জাতটির বিশেষত্ব হ'ল আপনি এটি একটি টবের মধ্যেও করতে পারেন!
কৃষি জাগরণের শিপ্রা সিংহের সাথে কথোপকথনে শ্রী কিশান সুমন জানিয়েছেন যে কীভাবে আমরা একটি টব বা কিচেন গার্ডেনে আমের চাষ করতে পারি এবং সারা বছর ধরে তার ফল উপভোগ করতে পারি।
কথোপকথন -
১. শ্রী কিশানজি, আপনি কবে এই জাতটি বিকাশ করেছেন?
উ: আমি ২০০০ সালে এই নতুন বৈচিত্র্যটি তৈরি করেছি, তবে এটি ২০১৫ সালে নিবন্ধিত হয়েছে। আমি আমের বৈচিত্র্য তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করি কারণ, আমি দেখেছি যে, আমের সাধারণত বছরে একবার ফল হয় এবং পরের বছর ফল হয় না। সুতরাং, আম চাষে কৃষকদের উচ্চ ব্যয় এবং কম আয় হয়। এরপরই আমি বছর জুড়ে বিভিন্ন রকম ফল তৈরির ধারণা পেয়েছি।
২. এই জাতটি বিকাশের সময় আপনি কোন চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েছিলেন?
উ: লোকেরা আমাকে বলত আমি পাগল। আমার বামন আমের বিকাশের প্রচেষ্টা ত্যাগ করা উচিত। তারা আমাকে নিরুৎসাহিত করেছিল, কিন্তু আমি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলাম। আমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলাম এবং ঈশ্বর আমাকে আমার প্রচেষ্টার ফল দিয়েছেন।
৩. আপনার আমের চাষের বিশেষত্ব কী?
উ: আমি রাসায়নিক সার মোটেই ব্যবহার করি না। আমি কেবলমাত্র "গোবর", "গোমূত্র" এবং ভার্মিকম্পোস্টের মতো জৈব সার ব্যবহার করি।
৪. আপনার আমের জাতের ফলন সম্পর্কে কিছু বলুন ?
উ: এই বামন আমের বাণিজ্যিক চাষে বছরে ২০০-২৫০ কুইন্ট্যাল ফলন হয়। আপনি যখন টব বা কিচেন গার্ডেনে এর চাষ করবেন, তখন তা আপনাকে সহজেই ৫০ কেজি/গাছের ফলন দিতে পারে।
৫. এই জাতের আম চাষের সময় আমাদের কী কী যত্ন নেওয়া উচিত?
উ: এই আমের পরিচর্যা কম দরকার হয়। এটি আমের বড় ধরনের রোগ প্রতিরোধী - জাত। এটি বেশিরভাগ রোগ এবং পোকামাকড়ের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধী। এটি সারা দেশে যে কোনও ধরণের মাটি এবং জলবায়ুতে বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে একমাত্র জিনিস হ'ল মাটিতে জলনিকাশি ব্যবস্থা ভাল হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন - দ্বিগুন অর্থলাভে গ্রীষ্মকালে চাষ করুন পেঁপে
৬. আমরা কিভাবে টবের মধ্যে আম চাষ করতে পারি?
উ: আপনি ২০০ লিটারের একটি ড্রামে সহজেই এই আমের চাষ করতে পারেন। এটি অর্ধেক করে নিন, এরপর পাত্রটি মাটি দিয়ে পূরণ করুন এবং চারা প্রতিস্থাপন করুন। আপনি গাছটি পাত্রে ৭-৮ বছর পর্যন্ত রাখতে পারবেন।
৭. আপনি গোলাপের জাতও তৈরি করেছেন। এই সম্পর্কে আমাদের বলুন।
উ: আমরা গম এবং ধানের চাষ করতাম, যা রোগ ও পোকার আক্রমণে প্রভূত পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং আমাদের আয়ও কম যায়। তখন আমি ভেবেছিলাম, আমাদের অবশ্যই এমন ধরণের ফসল ফলানো উচিত যা আমাদের ভাল উপারজনে সহায়তা করবে। এরপর আমি সবজি চাষ শুরু করি। তবে আমি খুব বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি, কারণ এগুলি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। আমার বিবেক আমাকে অনুমতি দেয়নি। সবজি চাষের পর আমি গাঁদা, গোলাপ এবং মরসুমী ফুল চাষ শুরু করি। এগুলি ভালো আয় করতে সহায়ক। তারপরে, আমি আমের চাষ শুরু করি।
৮. আপনার পরবর্তী প্রকল্পটি কী?
উ: আমি কাঁঠাল নিয়ে পরীক্ষা করার কথা ভাবছি। এই ফলের সুবিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, তবে কৃষকরা এই ফল চাষে অনাগ্রহী, কারণ এতে ফল ধরতে ১০ বছর সময় লাগে। আমি বিভিন্ন ধরণের ফল দ্রুত বিকাশ করতে চাই।
কৃষির জাগরণ পত্রিকা শ্রী কিশান সুমনকে তার পরবর্তী প্রচেষ্টার জন্য শুভেচ্ছা জানায়।
আরও পড়ুন - মালচিং পদ্ধতিতে ধান চাষে ব্যাপক অর্থলাভ বালুরঘাটের তিন যুবকের