পরিবেশবান্ধব এগ্রি টেক্সটাইলের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করে উন্নত মানের কলাচাষে রাজ্যে নজির গড়ল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙ্গা-১ নম্বর ও বারাসাত-১ নম্বর ব্লকের কলা চাষিরা। ওই অঞ্চলের কৃষকদের দেখে উৎসাহিত হয়েছে অনেকেই | আগ্রহের সাথে এই পন্থা অবলম্বন করে চাষে এগিয়ে আসছে অনেকে |
এই ব্যাগ উন্নত ধরণের পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ যা সম্পূর্ণ জীবাণু মুক্ত কৃষিজাত তন্তুর সাহায্যে তৈরি করা হয়। এটি বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে কলা চাষ করা হয়। পুষ্ট কাঁদিতে একবার এই ব্যাগ পরিয়ে দিলে কলা নিরোগ ও দাগহীন হয়। ফলে বাজারে ভাল দাম মেলায় আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছেন ওই অঞ্চলের কৃষকরা |
এগ্রি টেক্সটাইল ব্যাগে কলা চাষ (Agri textile bag) :
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় উদ্যান পালন দপ্তরের সমন্বিত উদ্যান উন্নয়ন মিশন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নতমানের কলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় দেশি সুস্বাদু বাগদা, কাঁঠালি কলার চাষ সুবিদিত। কিন্তু কলা পুষ্ট হওয়ার সময় হলে বিটেল পোকার আক্রমণে কলার গায়ে কালো দাগ পড়ে। তাছাড়া, কাঁদি খোলা আকাশের নিচে থাকায় বাঁদুর কলায় গায়ে বসে রস শুষে নেয়। ফলে, গায়ে নানা দাগ পড়ে। এমন দেখতে খারাপ ও রোগাক্রান্ত কলার বাজারে দাম পাওয়া যায় না। দেখা গিয়েছে নিরোগ ও দাগহীন আকর্ষণীয় হলুদ রঙের কলার বাজারে চাহিদা রয়েছে। নিরোগ ও দাগহীন উন্নত গুণমানের জন্য কৃষকরাও কলার দামও তুলনামূলক বেশি পাচ্ছেন। আর এই উন্নত কলা পাওয়ার জন্য দরকার পরিবেশবান্ধব এগ্রি টেক্সটাইল ব্যাগের।
সাধারণত, আমাদের দেশে কলা চাষের উন্নত রাজ্যগুলির মধ্যে অগ্রণী মহারাষ্ট্র। এই ধরনের ব্যাগ ব্যাবহার করে কলার চাষে ব্যাপক ব্যাবসায়িক সাফল্য মিলেছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই পশ্চিমবঙ্গেও উদ্যান পালন দপ্তর কলা চাষে আমূল পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় কলা চাষিদের প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রশিক্ষণ মাঠে নেমে হাতে কলমে শেখাতে শুরু করেছেন সহকারী উদ্যান পালন অধিকর্তা শুভদীপ নাথ। এই পদ্ধতি প্রয়োগে কৃষকদের রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার অনেকটাই কমে যাবে। কলার মানও ভাল হয় এবং বাজারে বেশ ভাল দাম পাওয়া যায়। উৎপাদন খরচও অনেকটাই কম হয়।
এই ব্যাগ কৃষিজাত তন্তুর সাহায্যে তৈরী করা হয় | মোচা কেটে নেওয়ার পর এই ব্যাগ কলার কাঁদির নিচের দিক থেকে পরিয়ে উপরের কাণ্ডের কাছে তুলে পাটের দড়ি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। প্রয়োজনে স্ক্যারিং বিটেলের জন্য ব্যাগ পরানোর আগে একটি কীটনাশক পরানো যেতে পারে। তবে পরে আর কোনও কীটনাশকের দরকার নেই | এই পদ্ধতিতে কলা চাষে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে |
আমডাঙ্গা ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা ও আত্মা প্রকল্পের ব্লক টেকনোলজি ম্যানেজার জানান, এই ব্যাগ বিভিন্ন ফার্মা প্রডিউসার কোম্পানি সরাসরি চাষের মাঠে নিয়ে হাজির হচ্ছে। ফলে কৃষকরা মাঠে বসেই ব্যাগের প্রয়োগ ও উপকারিতা বুঝতে পারছেন। কীটনাশক ব্যবহার কম হওয়ায় কলার উপর বিষক্রিয়ার ক্ষতিকারক দিকটিও ক্রমশই কমে যাচ্ছে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - আমের এক নতুন জাতের উদ্ভাবন করল এই সাধারণ কৃষক, জানুন তার সাফল্যের কাহিনী