এক সময় বছরজুড়ে কোনো না কোনো ফল পাওয়া যেত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন আর সেই সব ফল পাওয়া যায় না । 'মধুমাস' খ্যাত জ্যৈষ্ঠ মাসে নির্দিষ্ট কিছু ফল আম,জাম,কাঁঠাল আর লিচুর দেখা মিললেও দেশের মানুষকে বছরের বাকিটা সময় নির্ভর করতে হয় বিদেশি ফলের ওপর । বিদেশি ফলকে আমারা এমন ভাবে আপন করে নিয়েছি যে, আমরা মাঝে মাঝে ভুলেই যাই স্ট্রবেরিও একটি বিদেশি ফল। আসুন যেনে নেওয়া যাক কয়েকটি বিদেশি ফল সম্পর্কে যাদেরকে আমরা বাড়িতেই চাষ করতে পারি।
স্ট্রবেরি
আমাদের দেশে যে বিদেশি ফলগুলির বেশ চাহিদা রয়েছে তাদের মধ্যে স্ট্রবেরির স্থান সবার উপরে । স্ট্রবেরি মূলত যেখানে শীতকাল মৃদুভাবাপন্ন ও গ্রীষ্মকাল শুষ্ক সেখানে ভালো জন্মায়। স্ট্রবেরির ফল দেখতে কিছুটা লিচুর মতোই কিন্তু আকারে ছোট। সারা দেশেই স্ট্রবেরি উৎপাদন সম্ভব। রঙিন এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত স্ট্রবেরি চাষ করা যায় । এছাড়া মাঝে এপ্রিলেও স্ট্রবেরি পাওয়া যায় ।
আরও পড়ুনঃ Avocado Farming: জেনে নিন সহজ উপায়ে অ্যাভোকাডো চাষ পদ্ধতি
রাম্বুটান
বিদেশী ফলের মধ্যে আমাদের দেশে রাম্বুটানের বেশ চাহিদা আছে। লিচুর মত দেখতে এই ফলটি খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। লিচুর বিকল্প হিসেবে মনে করা হয় রাম্বুটানকে। এটি মালয়েশিয়ান একটি ফল। তবে রাম্বুটানের আদি জন্মস্থান সম্ভবত মালয়দ্বীপ অথবা থাইল্যান্ডে। রাম্বুটানে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে। এটি শীতে তেমন একটা টিকে থাকতে পারে না। গরমের সময় এর ফলন বেশ ভাল হয়। একে অনেকে Hairy Litchi আবার অনেকে queen of fruits বলে থাকেন।
ড্রাগন ফল
বর্তমানে আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। এ ফলটি মেক্সিকো, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায় বেশি পরিমানে পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল একটি সম্ভাবনাময় ফল যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, রঙিন ও আকারে বেশ বড় হয়। এই ড্রাগন ফলে রঙিন অংশটুকু শরীরের পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ফলের শাঁস গোলাপি রঙের হয় । এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি রয়েছে। মে থেকে নভেম্বর সাত মাসজুড়ে ফলটি উৎপাদন সম্ভব। দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে ড্রাগন ফল সাদা, লাল, গোলাপি ও হলুদ রঙের হয়ে থাকে । ড্রাগন ফলের ভেতর সবচেয়ে বেশী ফলন হয় পিংক ও গোলাপি কালারের ড্রাগন ।
মাল্টা
দেশের প্রায় সব জায়গায় মাল্টা চাষ সম্ভব । উৎপাদনও হয়ে থাকে ভাল পরিমাণেমাল্টা ফলের গায়ের রঙ সবুজ হয় ।এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে।এতে থাকা খনিজ লবণ, ম্যাগশিয়াম, আয়রণ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, হজমে সাহায্য করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ায়। মাল্টা লেবু অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল। ভিয়েতনাম, উত্তর পশ্চিম ভারত ও দক্ষিণ চীন মাল্টার আদি উৎপত্তি স্থল। বৃষ্টিপাতের পরিমান যখন কম থাকে তখন মাল্টা লেবু চাষ ভালো হয়। বেশি বৃষ্টির ফলে মাল্টা লেবুর ফলের গুনগত মান কমে যায়। মাল্টা লেবু গাছ সাধারনত বীজ ও কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে। তবে কলম থেকে তৈরি করা চারার গুনগত মান ভালো হয়। কমলার তুলনায় এর অভিযোজন ক্ষমতা বেশী হওয়ায়, পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকায় সহজেই চাষ করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ আয় বাড়াতে করুন ফুল চাষ, পরামর্শ দিলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো হচ্ছে এক ধরনের সবুজ রং বিশিষ্ট পুষ্টিকর ফল। এটি দেখতে অনেকটা লম্বাটে পেয়ারার মত হয়। এই বিশেষ ধরণের ফলটি সারাবিশ্বেই অত্যন্ত চাহিদা সম্পূর্ণ একটি ফল। মনে করা হয় মেক্সিকোর পুয়েবলা রাজ্যের তেহুয়াকান অঞ্চলে এর জন্ম। বর্তমানে অ্যাভোকাডো আমাদের দেশেও চাষাবাদ হচ্ছে। এই ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল মজুত আছে। এ ফলটির বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এতে শর্করার পরিমাণ কম অথচ তেলের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই অনেকে একে মাখন ফল বলে থাকেন।