দুর্লভ এবং পুষ্টিগুণে ভরা একটি সবজি হল ব্রকোলি। ব্রকোলিকে অনেকে সবুজ ফুলকপিও বলে। ভিটামিন-সি, ক্যারোটিন, প্রোটিন সমৃদ্ধ এই সবজি পুষ্টিগুণের দিক থেকে মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। বাণিজ্যিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গে ব্রকোলি চাষ বেশ কিছু জায়গায় শুরু হয়েছে। তাছাড়াও সৌখিন মানুষরাও বাড়ির উঠোনে বা ছাদের টবেও এই চাষ চাষ করে থাকেন। মূলত ইতালিতে এই সবজির উদ্ভব। ক্যান্সার প্রতিরোধক ব্রকোলি ভিটামিন-এ এর অভাব দূর করে শিশুদের রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। ব্রোকলি অত্যন্ত সুস্বাদু উপাদেয় ও পুষ্টিকর সবজি বটে। বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলি চাষ করলে প্রচুর আয় সম্ভব। বহু চাষি বর্তমানে ব্রকোলি চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। দিনকে দিন ব্রকোলির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায়, এই সবজি চাষে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা।
জলবায়ু (Climate)
নাতিশীতোষ্ণ এই সবজির সঠিক বৃদ্ধির জন্য ঠান্ডা ও আর্দ্র জলবায়ু দরকার। এটি উচ্চ তাপমাত্রা ও খরাসহিষ্ণু। ১৫ ডিগ্রি- ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা ব্রোকলি চাষের সবচেয়ে আদর্শ আবহাওয়া। ব্রকোলি চাষের জন্য পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অবশ্যই দরকার।
মাটি (Soil)
জৈবসার সমৃদ্ধ মাটিতে ব্রকোলির চাষ করা উচিত। মূলত বেলে দোআঁশ, দোআঁশ ও এঁটেল মাটি ব্রকোলি চাষের আদর্শ মাটি। সেচ ও জল নিষ্কাশন ভালো মতন হয় এমন মাটি ব্রকোলি চাষের পক্ষেও সঠিক বলে বিবেচিত হয়।
বীজতলা তৈরি:
ব্রকোলি চাষের জন্য চারা উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জল নিষ্কাশনের সুবিধাসহ উন্মুক্ত জায়গা বীজতলা তৈরির উপযুক্ত স্থান। তাছাড়া বীজতলায় সেচ দেওয়ার জন্য ধারে কাছে জলের উৎস থাকা চাই। চাষ বা কোদাল দিয়ে মাটি গভীর করে আলগা করে নিতে হয় এবং বীজতলার মাটি অত্যন্ত মিহি করে তৈরি করতে হয়। এঁটেল মাটি হলে কিছু ভিটি বালি মিশিয়ে নিলে ভালো হয়। বীজ বপনের জন্য ৩ মিটারী ১মিটার বীজতলা হওয়া দরকার। প্রথম বীজতলায় ঘন করে বীজ ফেলতে হবে, বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় ৫-০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারিতে ২.৫ সেন্টিমিটার দূরে চারা রোপণ করতে হবে।
চারা রোপণের পরপরই সেচ ও ছায়া দিতে হয়। চারা প্রতিষ্ঠিত হতে ৫-৬ দিন সময় লাগবে। এ সময় একদিন পরপর সেচ দিতে হবে। পরবর্তীতে ৫-৭ দিন পরপর সেচ দেওয়া দরকার। এতে চারা শক্তিশালী হয়। অতিরিক্ত সেচ দিলে চারা লিকলিকে, লম্বা ও দুর্বল হয় এবং পরবর্তী এমন গাছ থেকে ফলন আশানুরূপ হয় না। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা স্থানান্তরের ৭-৮ দিন আগে প্রতিটি বীজতলায় ১৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০০ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হয়। চারা বৃদ্ধির হার কম হলে প্রতিটি বীজতলায় ৮০-১০০ গ্রাম ইউরিয়া মাটিতে রসযুক্ত অবস্থায় প্রয়োগ করতে হয়।
জমি তৈরি (Land Preparation)
সারা দিন পর্যন্ত সূর্যালোক পায় এমন জমির মাটি প্রথমে ভালোভাবে চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে নেয়া উচিত। জমিতে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও সমান তৈরি করে নিতে হবে। দুই সারিতে চারা রোপণের জন্য জমির চওড়া ও ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু মিড়ি বা বেড তৈরি করতে হবে। দুটি পাশাপাশি মিড়ির মাঝখানে যাতায়াত ও জল নিষ্কাশনের জন্য ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত এবং ১০-১৫ সেন্টিমিটার গভীর নালা রাখতে হবে। নালার মাটি তুলে মিড়ি বা বেড উঁচু করতে হবে।
আরও পড়ুন: Olives Farming Procedure: জলপাই চাষ করে হয়ে উঠুন প্রতিশ্রুতিবান কৃষক
সার প্রয়োগ (Fertilizer)
জমিতে সারের কমতি হলে গাছের বৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না এবং পরবর্তীতে ফলন কমে যাবে। তাই ব্রকোলির জমিতে সার প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।
ফসল সংগ্রহ (Harvest)
ব্রোকলি রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে পুষ্পমঞ্জরী সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। ধারালো ছুরি বা ব্লেড দ্বারা তিন ইঞ্চি কা-সহ পুষ্পমঞ্জরী কেটে সংগ্রহ করতে হয়। এভাবে একই জমি থেকে ১ মাসব্যাপী কয়েকবার ব্রকোলি সংগ্রহ করা যায়। পুষ্পমঞ্জরী মোটামুটি জমাট বাঁধা অবস্থায় সংগ্রহ করা উচিত।
আরও পড়ুন: Fertilizer Protection Process: সার সুরক্ষার পদ্ধতি জেনে নিয়ে হয়ে উঠুন দূরদর্শী কৃষক