অল্প পুঁজিতে আর চাহিদায় সেরা সারা বছরের ফুলবাজার ধরতে গাঁদা অতুলনীয়। গৃহসজ্জা ও টবের ফুলেও সহজ চাষে এই ফুল একেবারে এক নম্বরে। ফুলের মালা, অনুষ্ঠান বাড়ি সাজানোতে, তোড়া, খুচরো ফুল হিসাবে পূজায়, বাড়ির বাগানে টবের অপরূপ শোভার পাশাপাশি বর্তমানে ভেষজ আবির তৈরিতে এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে। আর গাঁদার ঔষধগুণের মধ্যে এর ফুল- পাতার রস কাটা স্থানে জলদি রক্ত বন্ধের কার্যকারিতা আমরা অনেকেই জানি।
সুদূর আমেরিকার এই ফুল আমদের রাজ্যে দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, উত্তর ২৪ পরগণা সমেত বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের কিছু অঞ্চলে আর সবথেকে ব্যাপক আকারে নদীয়ার রাণাঘাট, কালিনারায়ণপুর, চাপড়া, বঙ্কিমনগরে বেদীপুর ইত্যাদি জায়গায় বাণিজ্যিক চাষ চালু হয়।
সময়ভেদে গাঁদার দুভাবে বংশবিস্তার / চারা তৈরি করা হয় – (১) বীজের মাধ্যমে, (২) কাটিং থেকে।
বীজের থেকে চারা তৈরি (Seedlings made from seeds) :
শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে চারা বসানোর ক্ষেত্রে মার্চ মাস (ফাল্গুন – চৈত্রে) ফুল ভালোভাবে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করে বা কেনা বীজে সবজির মতোই বীজতলায় চারা তৈরি করতে হয়। গরমের সময় গাছগুলি বাড়লেও ফুল না নিয়ে কাটিং এর জন্য ব্যবহার হয়। আবার চৈত্র থেকে আষাঢ়ে ফুল পাবার জন্য পৌষমাসে বীজ থেকে চারা তৈরি হয়। হাইব্রিড টবের বা সজ্জার গাঁদার জন্য কার্ত্তিকের শেষ থেকে অঘ্রাণ মাসে বীজতলায় বীজ বুনে ছোট চারা করে ছোট্ট বাটির খুপরি / শিকড়ে মাটি লাগিয়ে বিক্রি করে ব্যবসায়িক নার্সারিরা ভাল লাভ করেন।
কাটিং থেকে চারা তৈরি (Made seedlings from cuttings) :
আষাঢ় মাস থেকে কার্ত্তিক মাস অবধি ফুলচাষে কাটিং-এর চারাই জনপ্রিয় ও সুবিধাজনক। কাটিং-এর জন্য তৈরি ঝাঁকালো গাছের প্রতি ডগা ৩/৪ ইঞ্চি ধারালো ব্লেডে কেটে শিকড় বাড়ানোর হরমোন পাউডারের (অ্যারোডিক্স / রুটেক্স / সেরাডিক্স ইত্যাদি) ১ নম্বর / ‘A’ গ্রেড (নরম কাণ্ডের জন্য) কাটা অংশে লাগিয়ে মোটা ধোয়া বালির চালিটা বা স্থানে বসিয়ে দিলে দু সপ্তাহেই শিকড় বেরিয়ে ঐ চারা আর দিন ৭ / ১০ হাপায় রেখে বসানোর উপযুক্ত হয়।
রোগের কারণ: ছত্রাক – অল্টারনেরিয়া; সারকোস্পোরা ও সেপ্টোরিয়া স্পিসিস
১) গাঁদার পাতায় ও ফুলে দাগ ও ধ্বসা –
এই মরশুমে আর্দ্রতায় গাঁদা গাছের পাতায় বাদামী দাগ পরে পচা কালো রূপ নেয়। অল্টারনেরিয়া ছত্রাকের দাগে গোল রিঙের মত কালো দাগ পরে। বেশী আক্রমণে ফুলেও বাদামী দাগ ও ধ্বসা ফলন পুরো নষ্ট করে। মাঠে যত গাঁদাচাষ হয় তার প্রধান শত্রু এই রোগ।
প্রতিকার ব্যবস্থা –
কার্বেন্ডাজিম + ম্যান্কোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক ১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে আঠা সহযোগে স্প্রে।
২) পাউডারি মিলডিউ –
পাতার উপরে সাদা পাউডারের মত ছত্রাকে গাছ দুর্বল হয়ে মারা পরে।
প্রতিকার -
কার্বেন্ডাজিম + ম্যান্কোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক ১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে আঠা সহযোগে স্প্রে।
আরও পড়ুন - এই মরসুমে চিনেবাদাম চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
পোকা সমস্যার সমাধান :
১) মাকড় –
গাঁদার প্রধান শত্রু মাকড়। মাকড়ের আক্রমণ হয় বর্ষাকালে চারা, কচি ডগা, কুঁড়ি, ফুল সবেতেই। মাকড় গাঁদা গাছের রস চুষে নেয়, ফলে গাছের ফলন নষ্ট হয় এবং গাছটিও নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিকার : প্রোপারজাইট ২ মিলি. বা স্পাইরোমেসিফেন ১/২ মিলি. / লি. জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২) জাবপোকা –
গাঁদা গাছের কচি ডগা ও পাতার রস শোষণকারী পোকা। এটি গাছকে দুর্বল ও বিবর্ণ করে এবং গাছ নষ্ট করে দেয়।
প্রতিকার : ইমিডাক্লোপ্রিড ১ মিলি. / ৩ লি. জলে মিশিয়ে নিয়মিত স্প্রে করতে হবে।
৩) থ্রিপস বা চোষী পোকা –
এরাও রস শোষণকারী পোকা আর প্রতিকার একইভাবে করতে হবে।
৪ ) ল্যাদা পোকা –
এই ধরণের পোকা গাঁদা গাছের কুঁড়ি ও কচি ডগা খেয়ে নষ্ট করে।
প্রতিকার : প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর দমন করতে হবে। বেশী পরিমাণে আক্রমণ হলে ডেল্টামেথ্রিন + ট্রায়াজোফস ২ মিলি / লি. স্প্রে করতে হবে।
তথ্যসূত্র - ড: শুভদীপ নাথ, সহ উদ্যানপালন আধিকারিক, উত্তর ২৪ পরগণা
আরও পড়ুন - মালচিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ ও তার রোগ প্রতিকার