আমাদের কৃষিজাগরণ সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি । এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা,চাষবাস, এসব বিষয় জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন ।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে ফুল কপি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোতনা করব । এতে করে আপনারা সহজেই ফুল কপি চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন ।
আরও পড়ুনঃ আলুর কিছু মারাত্মক রোগ ও তার প্রতিকার (Potato Deadly Diseases & It’s Management)
আমরা জানি ফুলকপি মূলত শীতকালীন ফসল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন চাষী লাভের আশায় জলদি হাইব্রিড ফুলকপির চাষ করে থাকেন। ১৮২২ সালে ইংল্যান্ডের এই সবজির সঙ্গে ভারতীয়দের পরিচয় ঘটে। সেই সময় ইংল্যান্ড থেকে বীজ এনে ভারতে এই ফসলের চাষ শুরু হয়। পরবর্তীতে নিজের দেশেই ভারতীয়রা এই ফসলের বীজ থেকে চারা তৈরি করে প্রায় ১২ মাসই বাজারের চাহিদা মেটাচ্ছেন।
জমি তৈরি
মূল জমি চাষ দিয়ে বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। গোবর সার, কম্পোস্ট, খৈল, ছাই ইত্যাদি সারের অর্ধেক পরিমাণ ভূমি কর্ষণকালে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। ফুলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উর্বর দোয়াশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভালো। ফুলকপির জন্য ঠাণ্ডা ও আর্দ্র জলবায়ু ভালো ।
ফুল কপির জাত
এ দেশে এখন ফুলকপির পঞ্চাশটিরও বেশি জাত পাওয়া যায়। ফুল কপি গাছের সারির মাঝে সার দেওয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দেওয়া যায়। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয় ।ফুল কপির ফুল সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থায় চারদিক থেকে পাতা টেনে বেধে ফুল ঢেকে দিতে হবে,সূর্যের আলো সরাসরি ফুলে পড়লে রং তথা ফুল কপির রং হলুদাভ হয়ে যাবে ।
সারের মাত্রা ও সার প্রয়োগ
ফুলকপি চাষের জন্য মাঝারি উর্বর মাটিতে হেক্টর প্রতি ৩০০-৩৫০ কেজি ইউরিয়া, ১৩০-১৫০ কেজি টিএসপি, ১৫০-২০০ কেজি এমপি এবং ৫-৭ টন গোবর সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এছাড়া পচা গোবর জমি তৈরির সময় ৫০ কেজি দিতে হবে। ২৫ থেকে ৩০ দিন বয়সের চারা সারি থেকে সারি ৫০ সে.মি. (২০ ইঞ্চি) এবং চারা থেকে চারা ৪০ সে.মি. (১৬ ইঞ্চি) দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয়বার সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সারির দু’পাশের মাটি আলগা করে গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
সার দেয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। জমিতে জল বেশি সময় ধরে যেন জমে না থাকে সেটাও খেয়াল করতে হবে। সার দেয়ার আগে মাটির আস্তর ভেঙে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
রোগ দমন
পোকা গাছের কচি পাতা, ডগা ও পাতা খেয়ে নষ্ট করে ফেলে । ফুলকপির সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হলো মাথাখেকো লেদা পোকা । ফুলকপির রোগের মধ্যে ঢলে পড়া এবং মূলের গিট রোগ উল্লেখযোগ্য। এর আক্রমণে রোদের সময় গাছ পাতা ঢলে পড়ে। শিকড় ফুলে স্থানে স্থানে মোটা হয়। প্রতি ৫০ গ্যালন পানির সঙ্গে ২৩০ গ্রাম পরিমাণে ক্যালোমেল মিশিয়ে গাছে ছিঁটানো ফলপ্রদ।
ফসল
গাছ লাগানোর ৭০ থেকে ৮০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ঠিকমতো সার প্রয়োগ করে চাষ করতে পারলে বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন টন ফুলকপি পাওয়া যেতে পারে । শংকর প্রজাতির ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি সাত থেকে আট টন ফুল পাওয়া সম্ভব।