কৃষিজাগরন ডেস্কঃ বর্তমানে যুগে যেকোন চাষে চাষিদের এক প্রধান সমস্যা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেও আশানুরূপ ফলন না পাওয়া ও খরচ করেও গাছের বাড়বৃদ্ধি আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঠিক বিকাশ না পাওয়া। চাষি বেশী পাইকারী দামের সময় বা রোগপোকা আক্রমনে আরো বেশী রাসায়নিক সার ও আরো দামী কীট/ রোগনাশক প্রয়োগ করলেও তার খরচের মূল্য ফসলে ফেরত পাচ্ছেন না।
কারন - (১) আগের তুলনায় মাটির উর্বরতা কমেছে অনেকগুন, (২)আগে ঘরে ঘরে গবাদি পশুর উপস্থিতির ফলে মাটিতে জৈব সার পড়ত চাষের আগে। আজ তা আর নেই। (৩) আমাদের ছোটবেলায় পড়া “চাষির বন্ধু কেঁচো” মাটিতে সংখ্যায় নগন্য। মাটির ভৌত ও রাসায়নিক ক্রিয়া ঠিক রাখতে নানা উপকারী ব্যাকটেরিয়াও কেঁচোর সাথে বিলুপ্তপ্রায়। কারন, (৪) অতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীট/ রোগনাশকের যথেচ্ছাচার আর, (৫) জৈব সারের প্রয়োগ না হওয়া। আসলে জৈবসার এখন চাষিদের সুপারি করলেও তারা ভালো গোবরসার বা নানা কম্পোস্ট সঠিক গুনমানে পান না। বাজার চলতি নানা ব্র্যান্ডের বেশী দামের জন্য, জৈবসার কিনে আর চাষিদের দেওয়া হয় না। এমত অবস্থায় জমিকে আবার তার যৌবন ফিরিয়ে দিতে একমাত্র উপায় সার্বাকষ্ট জৈব সার কেচো সার বা “ভার্মিকম্পোস্ট”। অন্যান্য যেকোন জৈব সারের তুলনায় কেঁচোসার অনেকগুনে ভালো কারন –
আরও পড়ুনঃ দুধ মাশরুম চাষের সহজ পদ্ধতি
১. বাড়ির ও ফসলের আবর্জনা থেকে সহজেই তৈরী করা যায় ও বাজার চলতি কম্পোস্ট থেকে দামে অনেকটা সস্তা।
২. উদ্ভিদ খাদ্যপাদান গুনমানে অন্যান্য জৈবসারের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে।
৩. এর মধ্যে উপকারী জীবানুগুলির উৎসেচক উপস্থিত থাকায় খাদ্য উপাদান ও মাটির জৈব পদার্থ গুলিকে গাছের জন্য সহজলভ্য করে তোলে।
৪. দীর্ঘদিনের রাসায়নিক সার ও কৃষিবিষ জর্জরিত য় অনুর্বর মাটির ভৌত ও রাসায়নিক বিকাশ করে জলদি ও রে দীর্ঘস্থায়ী।
আরও পড়ুনঃ মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে ফলনের জন্য সারের সুপারিশ
৫. নাইট্রোজেন, ফসফেট আবদ্ধকারী ব্যাকটেরিয়া র কেঁচোসারে থাকায় জীবানুসারের মতো লাভ দেয়।
৬. কেঁচোর দেহ নিঃসৃত রসে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক ক্ষমতা ফসলকে রোগ পোকা থেকে সুরক্ষা দেয়।
৭. এতে, নানা অনুখাদ্যের উপস্থিতি আর
৮. নানা বৃদ্ধি সহায়ক হরমোনের উপস্থিতি, মাটি ও হয়।
কিন্তু এই কেঁচো সার বানাতে ৩-৪ ফুট চওড়া ও সুবিধাজনক লম্বা ও ২-৪ ফুটের গভীর চৌবাচ্চা বা বেড়ের প্রয়োজন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিমেন্টের চৌবাচ্চা / বেড চাষিদের ক্ষেত্রে ও স্বয়ম্ভর গোষ্ঠির ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক হয়ে থাকে। কারন এতে ভার্মিবেড বানাবার খরচ বেশী। আর একবার ভার্মিবেড/কেঁচোসার বানাবার চৌবাচ্চা বানানো হলে তা স্থানান্তর করা বা প্রয়োজনে আরো নতুন জায়গায় আরো কেঁচোসারের সুবিধাজনক উৎপাদন পরিস্থিতি তৈরী করা যায়না।চাষি ও চাষ সমাজের কাছে তাই কেঁচোসার জনপ্রিয় করা অসুবিধা হয়ে যায়। আর এই সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন কোম্পানীর পোর্টেবল পলি-ভার্মিবেড চাষে দেখিয়েছে নতুন দিশা। কারন -
(১) যেখানে সুবিধা সেখানে অস্থায়ী ভাবে উৎপাদনে লাগানো চলে।
(২) সহজে কেঁচোসার তৈরী করা যায় ও চাষি পরিবারের মহিলা বা মহিলা গোষ্ঠির জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী।
(৩) প্রযোজনে এই পর্টেবল-পলিবেড অন্য জায়গায় নতুন করে স্থানান্তর করা যায়।
(৪) প্রথাগত ইট সিমেন্টের বেডের খরচের তুলনায় অনেক সাশ্রয়কারী ও ভাঁজ করে সহজে একটি ব্যাগেই অনেক পলিবেড পরিবহন করা চলে।
(৫) কেঁচোসার তৈরীতে কোন অসুবিধার সৃষ্টি হয় না বরং প্রথাগত সিমেন্ট বেডের তুলনায় মাটি থেকে কিছু উঠে থাকার জন্য কেঁচোর সুরক্ষার জন্যও উপযোগী।
(৬) এই পোর্টেবল পলিভামিবেড-এ ভর্মিওয়াশ আলাদাভাবে সংগ্রহেরও ব্যবস্থা সমন্বিত আছে ।