সঠিক সময়ে আগাছা (Weed Management) অপসারণ না করলে তা মূল ফসলের ক্ষতিসাধন করে। কৃষক যদি আগাছা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির দিকে যথাযথ মনোযোগ না দেন, তবে মূল ফসলের ফলনে ৩০% থেকে ৮০% লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধান ফসলের আগাছা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য এই নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই নিবন্ধ পড়ে কৃষকরা আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং শস্য থেকে সঠিক গুণমানের উচ্চ ফলন পেতে সক্ষম হবেন।
১. পরিচর্যা পদ্ধতির মাধমে:
যেমন আগাছা মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে, খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে এমন ফসলের চাষ করতে হবে।একই ধরনের ফসল বার বার না করে শস্য পর্যায় অনুযায়ী ফসল নিবার্চন করতে হবে। জমি ফেলে না রেখে অনবরত জমি চাষ করা, গ্রীষ্ম কালীন লাঙ্গল দেওয়া, জমি প্রয়োজনে জলে ডুবিয়ে রাখা, অথবা জমি পতিত রেখে বার বার কর্ষণ করা ইত্যাদির মাধমে আগাছা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
২. যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে:
প্রাচীন ও উপযোগী পদ্ধতি হলো হাত দিয়ে টেনে অথবা খুরপি দিয়ে আগাছা তোলা। সাধারন ভাবে সমস্ত ফসলের ক্ষেত্রে ২/৪টি হাত নিড়ানি দেবার প্রয়োজন। এছাড়া লাঙল, হুইল, উইডার, কালটিভেটর প্রভৃতির মাধ্যমে আগাছা মাটিতে মিশিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।পতিত জমিতে আগাছা কেটে পুড়ে দেওয়া যেতে পারে।এছাড়া খড়, জঞ্জাল সার, কুচুরিপানা ইত্যাদি মাটির উপরে বিছিয়ে দিয়েও আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
৩. জৈবিক পদ্ধতি:
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি যা মাটির স্বাস্থ্যের পক্ষে উপযোগী হিসেবে দেখা হয়।এই পদ্ধতিতে আগাছা গুলিকে প্রাকৃতিক শত্রু যেমন রোগ পোকা(বায়োএজেন্ট) অথবা অন্য প্রাণীকেও ব্যবহার করে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
কুচুরিপানা র জন্য নিয়চিটিনা প্রজাতি র,পার্থেনিয়ামর জন্য ক্রিটোব্যাগাস ও জাইসাম প্রজাতির, ল্যানটানার জন্য টিলিও লিমা প্রজাতির পোকা ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়া যায়।দুধিকানি, বিছুটি, ঘেটু হলদে মোজাইক ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিয়ন্ত্রণে আসে, এক জাতীয় স্পাইডার মাইট আগাছা দমনে সাহায্য করে। এছাড়া প্রতিদিন এখন অনেক কার্য্যকরী জৈবিক আগাছা নাশক বের হচ্ছে।
৪. রাসায়নিক পদ্ধতি:
এটি অতি দ্রুত কার্য্যকরী একটি পদ্ধতি। সঠিক সময়ে এবং সঠিক মাত্রায় যে ফসলের জন্য সুপারিশ করা হয় কেবল মাত্র সেটি প্রয়োগ করা যায় তবে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে ভুল প্রয়োগ করলে অন্যান্য ফসল, জীব জন্তু সহ মাটির প্রভূত ক্ষতির স্বম্ভাবনা।
এই আগাছা নাশক সাধারণত দুই ধরণের :
নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত। নির্বাচিত আগাছা নাশক কেবলমাত্র বিশেষ বিশেষ আগাছা গুলিকে মেরে ফেলে।অনির্বাচিত আগাছা নাশক জমির সমস্ত গাছকে মেরে ফেলে।
এই আগাছা নাশক সাধারণত গুঁড়ো আর তরল আকারে পাওয়া যায়।এগুলি বলি অথবা জলের সাথে গুলে জমিতে প্রয়োগ করা হয়।
এগুলি ফসলের তিনটি ভিন্ন সময়ে প্রয়োগ করা যায়:
-
ফসলের বীজ বোনার আগে,
-
ফসলের বীজ বোনার বা চারা রোযার পর ও আগাছা জন্মানোর ঠিক আগে।
-
ফসল ক্ষেতে আগাছা জন্মানোর পর।
রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে কিছু কিছু নিষিদ্ধ আগাছা নাশক চোৱা বাজারে আজও চলেছে সেগুলি থেকে চাষী ভাইদের সতর্ক থাকতে হবে।
আরও পড়ুন - রাইজোবিয়াম সার প্রয়োগে মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ও ফসলের ফলন বৃদ্ধি (Rhizobium Fertilizer)